কেন্দ্রের পানে তৃণমূল

56

চট্টগ্রামের ১৩ উপজেলার মধ্যে সাত উপজেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা নিশ্চিন্তে থাকলেও দুশ্চিন্তায় ছয় প্রার্থী। পছন্দ-অপছন্দের কারণে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরা। উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হতে যাওয়া ছয়টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। যে কারণে দ্রæত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত না আসলে আওয়ামী লীগের দলীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে এসব উপজেলায়। দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ ও তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ এসব উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যকে পুঁজি করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থী কর্মী-সমর্থকরা এটি প্রচার করায় তৃণমূলে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় চাপের মুখে আছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে সিনিয়র নেতাদের কৌশলী অবস্থান থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখনো নিশ্চুপ আছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘সেতুমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তৃণমূলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। দলীয় সভায় স্পষ্ট বলা হয়েছে নৌকার প্রার্থীর বিরোধিতা কেউ করতে পারবে না। যদি একাধিক প্রার্থী থাকে তাহলে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়বে। এতে প্রার্থীর চেয়ে দলের ক্ষতিটাই বেশি হবে। আমরাও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিব। কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে দলীয় সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া আছে।’
দলীয় সূত্র জানায়, লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী। তাঁর পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন এলডিপি নেতা জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। নিজে আওয়ামী লীগ করছেন দাবি করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। দলীয় প্রার্থীকে অপছন্দ করেন এমন নেতারা তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অথচ তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতেই কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগে ভিড়েছেন।
চন্দনাইশেও একই কৌশলে ছিলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী। একসময় এলডিপির প্রভাবশালী এই নেতা গত পৌর নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এরপর আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আশা করেছিলেন এবার তিনিই মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নৌকা ভাগিয়ে নেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি একেএম নাজিম উদ্দিন। তৃণমূলের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা এই নেতাকে মনোনয়ন দেয়ায় চন্দনাইশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আবদুল জব্বার চৌধুরী। আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা তার পক্ষ নেয়ায় দলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
বাঁশখালীতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য এড. সুলতান উল কবির চৌধুরী বড় ছেলে চৌধুরী মুহাম্মদ গালিব সাদলী। দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক গালিব মনোনয়ন পেলেও তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক খোরশেদ আলম ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী নুর হোসেন। তিনজনই প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকায় ত্রি-ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
বোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুল আলম। নৌকার এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন করতে চান দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আবদুল কাদের সুজন। দুই নেতাই নির্বাচনী যুদ্ধে রয়ে যাওয়ায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নাজিম উদ্দিন মুহুরীকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এসএম আবু তৈয়ব। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিনকে ঠেকাতে আনারস প্রতীকে লড়ছেন তৈয়ব। দুইজনই নেতাকর্মীদের নিয়ে তৃণমূলে অবস্থান নিয়েছেন। তৈয়ব আওয়ামী লীগে কোনঠাসা হলেও সংসদ সদস্যের অনুসারীরা তার পক্ষেই মাঠে আছেন বলে জানা গেছে। যে কারণে এই উপজেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন ভোটাররা।
পটিয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে চাপে রেখেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আফরোজা বেগম জলি। যাচাই-বাছাইয়ের দিন জলির প্রার্থিতা নিয়ে নানা নাটকীয়য়তা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে টিকে যান তিনি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা দলীয় হাইকমান্ডের সাথে আলোচনা করেছি। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে যাতে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকে সেব্যাপারে দ্রæত সিদ্ধান্ত আসবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় যেহেতু আছে আমরা আরো আলোচনা চালিয়ে যাব। দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।’