কেনো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

193

জলবায়ু পরিবর্তন কি? জলা বায়ু পরিবর্তন কিভাবে এবং কেন হয় ? বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেসব জানতে হলে সর্বপ্রথম জানতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন।
জলবায়ু পরিবর্তন গবেষণার আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ওহঃবৎহধঃরড়হধষ চধহবষ ড়হ ঈষরসধঃব ঈযধহমব (ওচঈঈ)’ এর মতে, “বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি”। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে আমাদের জলবায়ুর কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে। উষ্ণতা আমাদের ঋতু পরিক্রমাতে প্রভাব ফেলেছে এবং ঋতু বৈচিত্র্যের রূপকে করেছে ক্ষুন্ন। অতিবৃষ্টি, বন্যা, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস ইত্যাদির প্রকোপ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ার কারণে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী ভাঙ্গন, জলাবদ্ধতা ইত্যাদি নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কেননা, সা¤প্রতিক সময়ে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং শহরায়নের ফলে দিনকে দিন এই সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে।


স¤প্রতি অনুষ্ঠিতব্য জি-৭(গ্রæপ-৭) সম্মেলনে ‘ঈষরসধঃব ঈযধহমব’ এর বিষয়টি রাখা হয়নি। অথচ জি-৭ এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে টঝঅ এবং ঈযরহধ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃস্বরণকারী দেশ। এই দেশগুলোই যদি এই বিষয়ে আলোচনা না করে তাহলে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের’ ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কিভাবে তাদের ক্ষতিসমূহ কাটিয়ে ঊঠবে। টঝঅ এর মত দেশের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত ধারণাটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি ভ্রান্ত ধারণা।
অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে বন- জঙ্গল উজাড় হচ্ছে। যে পরিমাণ গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে সেই পরিমাণ গাছপালা লাগানো হচ্ছে না, ফলে প্রকৃতিতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে আবাসন সমস্যা সমাধানকল্পে পতিত জমিগুলোও কাজে লাগানো হচ্ছে, পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলত, পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বলা হচ্ছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। গত শতাব্দীতে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমাণ ছিলো ১-২ সেন্টিমিটার। ভূ-মÐলীয় উত্তাপের ফলে ২০৫০ সাল নাগাদ। সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়বে ৩০-৫০ সেন্টিমিটার এর ফলে সমুদ্রের কাছাকাছি অঞ্চলগুলো নিমজ্জিত হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিশর, আমেরিকা ও কানাডার প্রেইরি অঞ্চলের অনেক অংশ পানিতে নিমজ্জিত হবে। বৃদ্ধি পাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত উদবাস্তু।
১৯৮৯ ও ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের মরুপ্রক্রিয়া সংক্রান্ত কনভেনশনে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর প্রায় ২/৩য়াংশ এলাকা মরুভূমি হয়ে যাবার ভয়াবহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর অনেক জীববৈচিত্র্য চিরতরে হারিয়ে গেছে এবং অনেক প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকির মুখে।
আসলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধকল্পে দূষণমুক্ত বিশ্ব প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশসমূহকেই এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর মোট কার্বন নিঃসরণ এর ২৫% ঈঙ২ নিঃসরণ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাছাড়া আরো অনেক দেশ এই কার্বন নিঃসরণ সাথে জড়িত , যেমনঃ জাপান, চীন, কানাডা ইত্যাদি দেশ। যদি দেশগুলো কিয়েটো প্রটোকলে অনিচ্ছুক হয় তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি হবে।
ওহঃবৎ-মড়াবৎহসবহঃধষ চধহবষ ড়হ ঈষরসধঃব ঈযধহমব(ওচঈঈ) এর মতে, ‘বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি। বাংলাদেশ বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী না হওয়া সত্তে¡ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের এক নির্দোষ শিকার’। তবে বাংলাদেশ কি নিজেদের এই জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য কোনোভাবেই দায়ী নয়? ষড়ঋতুর এই দেশে আমরা চারটি ঋতুকে অনুভব করি। তাছাড়া দেশের বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার উপর ১১লাখের উপর উদ্বাস্তু সমস্যা গোদের উপর বিষফোড়ার মত দাঁড়িয়েছে। এত বিপুল উদবাস্তু জনসংখ্যাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ কি পরিবেশগত হুমকির সম্মুখিন হচ্ছে না? এখন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতন হওয়া সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নিজেরা সচেতন হলে হয়ত এই সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে পারব।
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,
ওমরগণি এম ই এস কলেজ,নাসিরাবাদ, চট্টগ্রাম