কেটে ফেলা হয়েছে দুইশত লেবু গাছ

76

রাঙ্গুনিয়ায় কৃষকের দুইশত লেবু গাছ কেটে দিয়েছে রাবার বাগান কর্তৃপক্ষ। গত ২ ডিসেম্বর রাবার বাগানের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার উপর এ লেবু বাগান করা হয়েছে দাবি করে গাছগুলো কেটে দিয়েছেন তাঁরা। রাবার বাগানের জায়গা থেকে ৫শত গজ দূরে লেবু বাগান করার পরও গাছগুলো কেটে দেয়ায় মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে একই দিন এক দিনমজুর পরিবারের একটি বসতঘরও উচ্ছেদ করা হয়েছে। রাবার বাগানের জন্য ভূমি অধিগ্রহণকালে বসতঘর রেখে বাকী জায়গা সৃজনের কথা থাকলেও বসতঘর উচ্ছেদ করায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। উচ্ছেদ করা বসতঘরের আশেপাশে কয়েকশত বসতঘরও রয়েছে। এসব উচ্ছেদ না করে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে লেবু বাগান ও বসতঘরটি উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ব্যাপারে লেবু বাগানের মালিক পোমরা হিলাগাজী পাড়া এলাকার নুরুল হক জানান, গত ৫ বছর আগে পোমরা পাহাড়ি এলাকার বুড়াগোদা নামক স্থানে তিনি এই লেবু বাগান গড়ে তুলেছেন। বর্তমানে প্রতিটি লেবু গাছে ফলন এসেছে। সম্প্রতি রাবার বাগানের এক কর্মকর্তা তার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। এ চাঁদা দিতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করায় উদ্দেশ্যে মূলকভাবে তার লেবু গাছ গুলো কাটা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, রাবার বাগানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে রাবার গাছ কেটে প্রভাবশালী এক ব্যক্তিকে মাল্টা ও পেঁপে বাগান করার সুযোগ করে দিয়েছে। আমার লেবু বাগান রাবার বাগান থেকে দূরে হলেও উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আমার এতদিনের কষ্টের বাগান নষ্ট করে দেয়। একই এলাকার উচ্ছেদ করা বসতঘর মালিক মো. ইসমাঈল বলেন, আমরা যুগ যুগ ধরে এ স্থানে বসতঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছি। ২০১২ সালে যখন রাবার বাগান করা হচ্ছিল, তখন কথা ছিল বসতঘর রেখে বাকী জায়গা রাবার বাগানের জন্য সৃজন করা হবে। এরপর থেকে রাবার বাগানের পাশাপাশি আমরা এই স্থানে বসবাস করে আসছি। সম্প্রতি একটি এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে আমার বসতঘরটি সংস্কার করতে গেলে রাবার বাগানের কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমরা টাকাটা না দেওয়াতে তারা আমার বসতঘরটি ভেঙে দিয়েছে। বর্তমানে বউ-বাচ্চা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আমরা বসবাস করছি। তিনি অভিযোগ করেন, শুধুমাত্র আমার আশেপাশেই কয়েক শতাধিক বসতঘর রয়েছে। তাদেরগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি। কিন্তু আমার বসতঘরটি টাকা না দিলে তারা উচ্ছেদ করে আমাকে পথে বসিয়েছে। এভাবেই তারা দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় স্থানীয়রদের হয়রানি করে আসছে। টাকা দিলে সব ঠিক, না দিলে উচ্ছেদ। সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের অধিনে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া রাবার বাগান করা হয়। ২০১২ সালের দিকে এ দুই উপজেলায় বনবিভাগের মালিকানাধীন ১০৫৫ একর বনভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা মৌজা, নোয়াগাঁও মৌজা এবং সুরুৎসিং ঢালা মৌজার আনুমানিক ৫০০ একর বনভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণকালে এ এলাকার বিভিন্ন বসতঘর রেখে বাকী বনভূমিগুলো অধিগ্রহণ করা হয় এবং রাবার গাছ লাগানো হয়। বর্তমানে বনায়নকৃত এসব রাবার বাগান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি রাবার উৎপাদন হচ্ছে। রাবার বাগানের জায়গা সৃজনকালে এসব এলাকার বাসিন্দাদের সাথে রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ ড. হাছান মাহমুদের মধ্যস্থতায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ব্যক্তিগত সহকারী এমরুল করিম রাশেদ বলেন, মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাবার বাগানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তখন কথা হয়, বসতঘর রেখে বাকী জায়গা অধিগ্রহণ করা হবে। বরং রাবার বাগানের মাঝখানে পতিত জায়গায় বসতঘরের অধিবাসীদের মৌসুমী শাক-সবজি ও লেবু জাতীয় ফসলের চাষাবাদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি অভিযোগ আসছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে রাবার বাগানের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা চাঁদা দাবি করছেন, না দিলে উচ্ছেদ করছেন। বিষয়টি দুঃখজনক। সম্প্রতি পোমরা বার আউলিয়ার ঢালা এলাকার জনৈক আবদুর রহমান বাংলাদেশ বনশিল্প কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এতে তিনি টাকার বিনিময়ে রাবারগাছ কেটে ওই স্থানে মাল্টা চাষ করার জন্য জনৈক বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেলেও রাবার বাগানের জায়গায় মাল্টা চাষকারী ব্যক্তি বহাল-তবিয়তেই রয়েছেন। বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের রাঙ্গুনিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রাবার বাগানের নির্ধারিত স্থানে নতুনভাবে ঘর তৈরি করায় ইউএনও মহোদয়ের সম্মতিতে এসব ঘর উচ্ছেদ করা হয়। অবৈধভাবে জায়গা দখল করায় নুরুল হককে আগে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। অবৈধভাবে দখল উচ্ছেদ নিয়মিত করা হচ্ছে।