কেউ শোনে না হালদার কান্না

1445

হালদা নদী শুধুই একটি নদী নয়, এটি রূপালি সম্পদের খনি। কিন্তু কিছু লোভী, দুর্বৃত্ত, ভূমিদস্যু, মৎস্য শিকারীরা হামলে পড়ছে হালদার ওপর। তাই আজ এর বেহাল দশা। ফলে বিপর্যস্ত হচ্ছে এর অস্তিত্ব, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র- এমনই মনে করছেন হালদা গবেষক এবং এ নদী পাড়ের মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের অন্যতম মিঠা পানির কার্প জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা হুমকির মুখে। আজ যেন হালদার কান্না শোনার কেউ নেই। প্রতিদিন হালদা নদীর কোথাও না কোথাও মরে ভেসে উঠছে মা-মাছ। ফলে চারপাশে ছড়াচ্ছে গন্ধ। মা-মাছের ডিম ছাড়ার আগাম সময়ে প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে চলছে এ অবস্থা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সম্প্রতি নদীতে নিষিদ্ধ যান্ত্রিক যানের (ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও ড্রেজার) অত্যাচার বেড়েছে। এসব যানের ডুবন্ত ঘুর্ণায়মান পাখার আঘাতে মা-মাছসহ নদীর মৎস্যকুলের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে।
গতকাল সেমাবার হালদা নদীর অংকুরি ঘোনা এলাকায় ১৪/১৫ কেজি ওজনের একটি কাতলা (মা-মাছ) মরে ভেসে উঠে। মাছটি ভাসতে দেখলে স্থানীয় লোকজন ওই এলাকার ডিম সংগ্রহকারী উদয়ন বড়ুয়াকে বিষয়টি অবহিত করেন। তিনি (ডিম সংগ্রহকারী) ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাছটি উদ্ধার করে হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য অফিসে নিয়ে যান।
এ ব্যাপারে জনতে চাইলে হাটহাজারী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম জানান, দুপুর ২টার দিকে হালদা নদীর অংকুরিঘোনা থেকে একটি মা-মাছ উদ্ধার করে আমার অফিসে নিয়ে আসে। মাছটির ময়নাতদন্তের জন্য আইডিএফ হালদা প্রকল্পের কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন ও ডিম সংগ্রহকারী উদয়ন বড়ুয়াকে দিয়ে আমি হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে দিয়েছি।
তিনি আরও জানান, মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত হালদা নদীতে সকল প্রকার যান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধ রাখতে গত ৮ জানুয়ারি জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক পত্র মারফত বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও তীর সংরক্ষণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান। এরপরও যার চলাচল থামানো যাচ্ছে না।
নদী পাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ,মা-মাছের ডিম ছাড়ার আগাম সময়ে নদীতে হঠাৎ করে যান্ত্রিক যানের অত্যাচার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব যান্ত্রিক যান দিয়ে রাতের অন্ধকারে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এরপর বালুগুলো পরিবহন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে যান্ত্রিক যানের ঘুর্ণায়মান পাখার আঘাতে নদীর মা-মাছসহ জলজ প্রাণি প্রতিনিয়ত মারা পড়ছে।
অভিযোগকারীদের মতে, এসব যান্ত্রিকযান দিয়ে যারা নদী থেকে বালু উঠাচ্ছেন, তারা প্রভাবশালী এবং আইনের তোয়াক্কা করেন না।
এদিকে হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া জানান, সোমবার হালদা নদী থেকে মৃত দুইটি মাছ উদ্ধার করছে স্থানীয়রা। এর মধ্যে কার্প জাতীয় (কাতলা) মা-মাছটির ওজন হবে ১৪-১৫ কেজি। মাছটির মাথায় ও লেজে গুরুত্বর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাছটি প্রায় ৩ ফুট লম্বা। এছাড়া উদ্ধারকৃত অন্য আইড় মাছটির ওজন হবে ৩/৪ কেজি। ওই মাছটিরও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দৃশ্যমান। ধারণা করছি, হালদার ভাঙনরোধে তীর সংরক্ষণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত যান্ত্রিক যানের ঘুর্ণায়মান পাখার আঘাতে মাছগুলো মারা গেছে। তবে ময়নাতদন্ত শেষে প্রকৃত কারণ জানা যাবে।