কূটনীতিকদের নির্বাচনী পরিবেশ জানালো ঐক্যফ্রন্ট

51

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহব্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, কূটনীতিকদের আমরা আমাদের যেসব অবজারভেশনের কথা জানিয়েছি, তার সঙ্গে তাদের দূতাবাসগুলোর অবজারভেশন মোটামুটি একই রকম। এ কারণে তাদের খুব একটা প্রশ্ন করতে হয়নি আমাদের। আনুষ্ঠানিক বিফ্রিং ছাড়াও পরে যখন তাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে তখন আমরা দেখেছি, তারা তাদের দূতাবাসগুলো থেকেও একই রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা কূটনীতিকদের বলেছি, দেশের মানুষ খুব আকাক্সক্ষার সঙ্গে নির্বাচন চেয়েছিল, কারণ তারা পরিবর্তন চায়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি, গত ২ সপ্তাহ ধরে পুলিশ খুব অসাধারণভাবে তৎপর সব জায়গায়। এর আগে এত পুলিশকে রাস্তায় টহল দিতে দেখিনি। কাউকে দেখলেই ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা বলে না। কেউ কিছু বললে, পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা বলেছেন, ২ জানুয়ারির পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। এই থেকে তো আর কিছু বোঝার বাকি থাকে না।
তিনি আরও বলেন, ২ জানুয়ারি ছেড়ে দেওয়া হবে এই কথার অর্থ হলো ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন। এরপরে আর ২ দিন বাকি থাকে, অর্থাৎ তোমরা যেন নির্বাচনের সময় কোনও ভূমিকা রাখতে না পারো। আর অন্যরা যেন ভয় পেয়ে যায়, এই ভেবে যে তোমাদেরও ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। এভাবে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে তারা চাচ্ছে বিরোধী দলের লোকগুলো নির্বাচনে না আসুক। এতে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করা সরকারি দলের পক্ষে সহজ হবে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
ড. কামাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি আমি আগে দেখিনি। পুলিশ ঘুরে ঘুরে মানুষকে ধরছে, কোনও কারণ না দেখিয়ে। এটা শুধু এক জায়গাতে নয়, সারা বাংলাদেশে এভাবে পুলিশ ধরছে। কোনও এক শহরে হলে বোঝা যেতো অন্য কিছু। অবশ্যই এটা কেন্দ্রীয়ভাবে, কোনও এটা কৌশলের অংশ হিসেবে, সারাদেশে পুলিশকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে; বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ধরো।
কামাল হোসেন বলেন, আমাকে বিএনপির লোক বলে মন্তব্য করেন অনেকে। তবে আমি তো আওয়ামী লীগের মূল লোক ছিলাম। ৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর এজেন্ট ছিলাম। সেই সময় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। রাজনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখনও সেই পরিবর্তন চায়।
আমি বিএনপির লোক নই। তবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের জন্য ভোটের মাঠে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি- বলেন ড. কামাল।
কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ড. কামাল বলেন, আমরা আমাদের ইশতেহার কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরেছি। আমরা আমাদের কথাগুলো তুলে ধরেছি। এ ব্যাপারে তাদেরও অবজারভেশন আছে।
তিনি বলেন, জনগণ দেশের মালিক। জনগণ মালিকানা হারালে দেশের স্বাধীনতা আর থাকে না। জনগণের মালিকানার স্বার্থে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া দরকার। আমার নতুন কিছু বলার নেই। তবে জনগণের আকাক্সক্ষা আছে পরিবর্তনের।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের চাপেই হোক বা নির্দেশেই হোক, নির্বাচন কমিশন সবকিছু দেখে-শুনেও চুপ করে আছে। আমরা তাদের কূটনীতিক বলি না, আমরা দেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে কথা বলেছি।
তবে কূটনীতিকেরা কী বলেছেন এবং তাদের কাছে কী ধরনের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যাতে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিই, সে জন্য তারা বহু অনুরোধ করেছেন। আমরা তো নির্বাচনে গেলাম। প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছিলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। মামলা ও গ্রেপ্তার হবে না। কিন্তু তা বন্ধ হয়নি। আজকেও আমাদের প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নতুন মামলা হয়েছে। সরকার তার কোনও কথাই রাখছে না।
বিদেশিদের কাছে বিএনপি মায়াকান্না করে আওয়ামী লীগের এমন অভিযোগের ব্যাপারে নজরুল ইসলাম খান বলেন, আওয়ামী লীগও বিদেশিদের নিয়ে বৈঠক করে। কান্নার কিছু নেই। যা সত্য ও বাস্তব, তা সবাইকে জানতে দেওয়া উচিত। কারণ, সরকার বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারই নির্বাচন বানচাল করতে চাচ্ছে।