কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষ ‘জন্ম থেকেই জ্বলছি’

8

লিটন কুতুবী, কুতুবদিয়া

দেশের বিভিন্ন নদী পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ফেরি সার্ভিস, সি ট্রাক সার্ভিস, ব্রিজ নির্মাণ, টানেল তৈরি করে আসছে সরকার। নদী, হাওর, দুর্গম পাহাড়ি এলাকাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন কর্ম দৃশ্যমান। কিন্তু এমন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত কুতুবদিয়া দ্বীপের দুই লক্ষাধিক মানুষ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে এলাকার মানুষ। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও পরিবহণে সংকট সৃষ্টি হয়। তাই সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পায়, যা ক্রয়ে সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন বলেন, পাঁচশ বছর আগে বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠা চর কুতুবদিয়া দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। সেই সময় থেকে জনবসতি গড়ে উঠে এ দ্বীপে। তখন থেকেই এ পর্যন্ত ধারাবাহিক চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে দ্বীপের মানুষ কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে মূল ভূ-খন্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। বর্তমান সময় পর্যন্ত কুতুবদিয়া দ্বীপ থেকে পারাপারের জন্য ৫টি জেটি ঘাট নির্মাণ করেছে সরকার। এসব ঘাট ব্যবহার করছে দৈনিক ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
কুতুবদিয়া চ্যানেল দিয়ে পেকুয়ার মগনামা, উজানটিয়া, বাঁশখালীর ছনুয়া, মহেশখালীর মাতারবাড়ি যাতাযাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ডেনিস বোট, স্পিডবোটে। আবার মালামাল আনা নেওয়ার জন্য কুতুবদিয়া চ্যানেল হয়ে বড় বড় মালবাহী ট্রলার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার চলাচল করছে।
কুতুবদিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিদ্যুতের। তাও পূরণ হয়েছে। সাব-মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিয়ে দ্বীপকে আলোকিত করেছে বর্তমান সরকার। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দ্বীপের মানুষের আরেকটা দাবি এখনও অপূর্ণ, তা হচ্ছে ফেরি সার্ভিস।
সিনিয়র আইনজীবী আইয়ুব হোছাইন বলেন, জন্ম থেকেই জ্বলছি আমরা কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষ। সরকার জেটিঘাট ইজারা দিয়ে থাকে। এক শ্রেণির লোক দরপত্রে প্রতিযোগিতা দিয়ে ইজারা নেন। এরপর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চড়া মূল্যে টোল আদায় করেন।
কোস্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। তারা অধিকার বঞ্চিত। জেটি বা ঘাট পারাপারে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে দ্বীপের মানুষ। জেটিতে পায়ে হেঁটে গেলেই ৫ টাকা আবার মগনামা জেটিতে পায়ে হেঁটে গেলেই ৫ টাকা টোল গুনতে হয়। পায়ে হাঁটা পথ দিয়ে টোল দিতে হয় শুধু কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষের। দেশের বিভিন্ন নদীর উপর সেতু ও নদীর নিচ দিয়ে টানেলে টোল আদায় করে শুধু যানবাহনের। মানুষের হাঁটার উপর টোল আদায় করতে দেখিনি পৃথিবীর কোন দেশে। কিন্তুু কুতুবদিয়ার মানুষের ক্ষেত্রে পায়ে হেঁটে গেলেই গুনতে হয় টোল।
দুবাই প্রবাসী এনামুল হক জানান, কুতুবদিয়ার জনগণ পারাপারে জন্য ৫টি জেটি নির্মাণ করা হয়। এসব জেটি দিয়ে পারাপারের জন্য ব্যবহৃত যানবাহন মানসম্মত নয়। বর্তমান সময়ের জন্য আধুনিক যান্ত্রিক বোটের ব্যবস্থা, সি ট্রাক, ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি করছি।