কুতুবদিয়া থানায় নিরীহ ১৬ জেলের বিরুদ্ধে মামলা

50

কোস্টগার্ডের ভুলে গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে উপকূলে ফিরে আসার পথে বাঁশখালীর ১৬ জেলেকে মামলা দিয়ে আটকের ঘটনায় মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল বাঁশখালী উপকূলের শেখেরখীল এলাকা থেকে ১৬ জেলেকে নিয়ে এফবি খাজা আজমীর নামক একটি ফিশিং ট্রলার গভীর সাগরে মাছ ধরতে যায়। ১৯ এপ্রিল মাছ ধরে উপকূলে ফিরে আসার পথে কুতুবদিয়া দ্বীপের অদূরে তাদের ধাওয়া করে কোস্টগার্ডের সদস্যরা। তাদের গায়ে নির্ধারিত পোশাক না থাকায় মাছ ধরার ট্রলারে থাকা জেলেরা কোস্টগার্ডের সদস্যদেরকে ডাকাত মনে করে নিজেদের মাছ রক্ষা ও দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচতে ট্রলারের গতি বাড়ায়। ফলে নির্ধারিত পোশাক না পড়া অবস্থায় কোস্টগার্ডের সদস্যরা জেলের ট্রলারকে লক্ষ্য করে ১৫-২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। জেলেরা তাদের ডাকাত মনে করে এক পর্যায়ে ভয়ে ট্রলারটি সাগরে ফেলে উপকূলে নেমে পড়ে। উপকূলে নেমেই জেলেরা ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করে। এলাকাবাসী বিষয়টি কুতুবদিয়া থানাকে জানায়।
এর মধ্যেই কোস্টগার্ডের সদস্যরা তাদের নির্ধারিত পোশাক পড়েন এবং জেলেদের ফেলে আসা ট্রলারটি নিয়ে যান। স্থানীয় মানুষের কাছে সংবাদ পেয়ে এদিন বায়োবিদ্যুৎ এলাকা থেকে ওই ১৬ জেলেকে কুতুবদিয়া থানা পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। নিরীহ জেলেদের থানায় নিয়ে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে তাদের পরিবার-স্বজনদের মাঝে আতঙ্ক নেমে আসে। তাদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। মাছ ধরার ট্রলারটির মালিক মো. ইদ্রিচ কুতুবদিয়া থানায় যোগাযোগ করলে জেলেদের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড অস্ত্র ও ইয়াবা পাচারের পৃথক পৃথক দুটি মামলা করেছে বলে জানতে পারেন।
মো. ইদ্রিস কোম্পানী আরো জানান, তার ট্রলারে ৭ লাখ টাকার মাছ ছিল। কোস্ট গার্ড কুতুবদিয়া স্টেশনের ইনচার্জ জেলেদের এসব আহরিত মাছ মগনামায় বিক্রি করে দিয়ে জেলেদের বিরুদ্ধে উল্টো কুতুবদিয়া থানায় পৃথক দু’টি মামলা রুজু করে। ঐ ট্রলারটি কোস্ট গার্ড দুই দিন পর থানার জিম্মায় দেয়।
এব্যাপারে কোস্ট গার্ড কুতুবদিয়া স্টেশনের ইনচার্জ মো. মাইদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, কোস্টগার্ডের সদস্যদের টহল দেখে সাগরে একটি ট্রলার গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করছিল। আমরা ডাকাত সন্দেহে ট্রলারটি ধাওয়া করলে ডাকাত দল ট্রলার ফেলে উপকূলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাদের আটক করে। আটক ১৬ জেলের বিরুদ্ধে গত ২০ এপ্রিল পৃথক দু’টি মামলা হয়েছে কুতুবদিয়া থানায়।
এব্যাপারে কুতুবদিয়া থানার ওসি (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম জানান, সাগরে ডাকাতের ভয়ে জেলেরা উপকূলে এসে আত্মরক্ষার জন্য আশ্রয় নেয়। উক্ত জেলেদের পুলিশ উদ্ধার করে থানা হেফাজতে রাখে। পরে জেলেদের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড দু’টি মামলা করে।
আটক জেলে মাহামুদুল ইসলাম জানান, আমিসহ ১৬ জেলে সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কোস্টগার্ডের সদস্যরা কোস্টগার্ডের পোশাক না পরে আমাদের দিকে আসছিল। আমরা তাদের ডাকাত মনে করে প্রাণ বাঁচাতে ট্রলারের গতি বাড়াই। এরপর তারা আমাদের দিকে অনেকগুলো গুলি করে। এক পর্যায়ে আমরা প্রাণ বাঁচাতে সাগরে ট্রলার ফেলেই উপকূলে নেমে পড়ি। কিন্তু কোস্টগার্ড উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এ দুই মামলার কারণে আমরা পরিবারে খাবার জোগান দিতে পারছি না। তিনি এর সঠিক তদন্তের দাবি জানান।
ট্রলার মালিক বাঁশখালী উপকূলের শেখেরখীল গ্রামের মো. ইদ্রিচ জানান, তার মালিকানাধীন ট্রলারটি ১৬ জেলে নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। গত ২০ এপ্রিল দেখি উক্ত জেলেদের বিরুদ্ধে কুতুবদিয়া থানায় কোস্ট গার্ড কুতুবদিয়া স্টেশনের ইনচার্জ (পেটি অফিসার) মো. মাইদুল ইসলাম বাদি হয়ে দুইটি মামলা করে। এজাহারে উল্লেখ করে মরিচাযুক্ত দুই অংশের একনলা বন্দুক, মরিচাযুক্ত ৩ টি কার্তুজ আর ৪ টি দা কিরিচ উদ্ধার করে তারা। অপর মামলায় একই ব্যক্তি বাদি হয়ে ৯ হাজার পিস সাদা ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে ঐ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রশ্ন, কুতুবদিয়ার বায়োবিদ্যুৎ এলাকা থেকে গত ১৯ এপ্রিল সকালে ১৬ জেলেকে উদ্ধার করে কুতুবদিয়া থানা পুলিশ। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পর কোস্ট গার্ড বাদি হয়ে সাধারণ জেলেদের বিরুদ্ধে মামলা করে থানায়। সাগরে জেলেদের ধরা মাছ লুট করতে প্রায়শ ডাকাতের হানার বিষয়টি সর্বমহলে জানা একটি বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই নির্ধারিত পোষাক ছাড়া জেলেদের তাড়া করলে জেলেরাতো ডাকাত মনে করে প্রাণ বাঁচাতেই চেষ্টা করবে। তারা কোস্ট গার্ডের পোষাক না পড়ে অন্যায়ভাবে জেলেদের গুলি ছুঁড়বে আবার সেটি আড়াল করতে মিথ্যা মামলা দিবে- এটা কেমন বিচার?