কুতুবদিয়ায় স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ করলেন এলাকাবাসী

55

বাঁধ নির্মাণে পাউবো’র ব্যর্থতার কারণে কুতুবদিয়া দ্বীপের শত শত পরিবার গৃহহারা হয়ে আজ নিঃস্ব। এসব পরিবারের হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিগত কয়েক বছর ধরে বঙ্গোপসাগরের জোয়ারে কক্সবাজার জেলার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) আওতাধীন উপকূলের ৭১ পোল্ডারের কুতুবদিয়া দ্বীপের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ২০ কিলোমিটার ভাঙা থাকায় ঐ সব এলাকায় প্রতিদিন জোয়ার-ভাটায় ভাসছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের স্রোতের সাথে ভেসে যায় শত শত পরিবারের গচ্ছিত স্বপ্ন আর আকাক্সিক্ষত উন্নত জীবন।
এসব ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে দ্বীপের মানুষ পানি পাউবো বারংবার তাগাদা দিয়েছেন, করেছেন আকুতি-মিনতি। সাগরের জোয়ার-ভাটায় মানুষের জীবন-মরণ প্রশ্নে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যখন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, ঠিক তখন অনেকটাই বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী-জনপ্রতিনিধি ও এনজিও’র যৌথ উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে বড়ঘোপ ইউনিয়নের মুরালিয়া গ্রামের এক কিলোমিটার এলাকা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, বড়ঘোপ ইউপির চেয়ারম্যান আ ন ম শহীদ উদ্দিন ছোটন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর, যুবলীগের আহব্বায়ক আবু জাফর ছিদ্দিকী, ছাত্রলীগের সভাপতি খোরশেদ আলম স্থানীয়দের সাথে নিয়ে এবং একটি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে জোয়ার-ভাটার তান্ডবলীলা ঠেকাতে শুরু করেন বাঁধ নির্মাণ কাজ।
স্থানীয়দের জান-মাল রক্ষায় তাদের এই উদ্যোগে সহমত জানিয়ে বাঁধ নির্মানে ৫ লাখ টাকার অর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে কোস্ট ট্রাস্ট নামের উন্নয়ন সংস্থাটি। এছাড়াও স্থানীয় ও আশেপাশের অনেকেই করেছেন আর্থিক সহযোগিতা।
চলমান বর্ষার জোয়ার ঠেকাতে বাঁশের বেড়ার মাঝে মাটি ফেলে বাঁধ নির্মাণ করেছেন উদ্যাক্তারা। গত এক সপ্তাহে মুরালিয়া এলাকায় এক কিলোমিটার জোয়ারপ্রবণ এলাকায় এই বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন বলে জানিয়েছেন বড়ঘোপ ইউপির চেয়ারম্যান আ ন ম শহীদ উদ্দিন ছোটন। তিনি আরো জানান, একইভাবে অমজাখালীর ভাঙ্গন কবলিত বেড়িবাঁধ এলাকায়ও বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
মুরালিয়া, অমজাখালীর ভাঙ্গন কবলিত বেড়িবাঁধ এলাকায় এই বাঁধ মেরামতের ফলে এই এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা নতুনভাবে চাষাবাদ শুরু করেছেন বলে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাড. ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান। তিনি আরো জানান, জোয়ার ঠেকানোর জন্য দ্বীপের কুমিরারছড়া, জেলে পাড়া, পশ্চিম তাবলরচর, কাহার পাড়া, বাতিঘর পাড়া, কাইছারপাড়া, নয়াকাটা, চর ধুরুং, সতর উদ্দিন, ক্রসডেম এলাকায়ও আপাতত এ ধরণের বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চলতি বর্ষা মৌসুমে জোয়ার-ভাটার ক্ষতির হাত থেকে স্থানীয়দের রক্ষায় বাঁধ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, স্থানীয় চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা কুতুবদিয়া দ্বীপে কর্মরত এনজিওদের নিয়ে বৈঠক করেন। এতে এলাকাবাসীর সাথে সমন্বয় করে বাঁধ নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করার আহবান জানানো হয়। কৃষক কামাল হোসেন জানান, মুরালিয়া এলাকায় জোয়ার ঠেকাতে বাঁধ দেয়ায় এ এলাকার শত শত একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ হবে। বিগত কয়েক বছর ধরে মুরালিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা থাকায় প্রতি অমাবস্যায় ও পূর্ণিমার জোয়ারে প্লাবিত হতো। বর্তমানে কৃষকরা চাষাবাদের জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছেন।