কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ যাবে কবে?

221

কুতুবদিয়া দ্বীপে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের বসবাস হলেও এখনও তারা বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে জেগে উঠে প্রায় ৫শ’ বছরের পুরনো এ দ্বীপটি। এটি বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু তা দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তা বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান এলাকাবাসী। উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা বিকম দাবি করেন, যেখানে সন্দ্বীপে ১৬ কিলোমিটারজুড়ে সাগরের তলদেশে ক্যাবল দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে সেখানে কুতুবদিয়া চ্যানেল তিন থেকে চার কিলোমিটার সাগরপথ দিয়ে জাতীয় গ্রিড লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ করা কোনো ব্যাপারই নয়।
সাত সদস্যের একটি টিম গত মার্চে কুতুবদিয়া দ্বীপ পরিদর্শনে আসেন। এসময় তারা কিভাবে সহজে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় তা প্রত্যক্ষ করেন। এ টিমে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীও ছিলেন।
এছাড়াও গত ১১ মার্চ কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর কাদের গনী স্বাক্ষরিত কক্সবাজার জেলা প্রশাসকসহ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে একটি আবেদন করেন। এতে কুতুবদিয়া দ্বীপকে সাব-মেরিন ক্যাবল দ্বারা জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত একটি শক্তিশালী জেনারেটর মেশিন ক্রয়ের জন্য বলা হয়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, দ্বীপটির উপজেলা সদরে একটি ৫শ’ কেবি ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর রয়েছে। ঐ জেনারেটর অনেক পুরনো হওয়ায় তা ৩শ’ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে। দ্বীপের আবাসিক অনাবাসিক বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ৬৫০ জন। এসব গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুৎ চাহিদা ৪শ’ কিলোওয়াট। বর্তমানে ঘাটতি থাকায় গ্রাহকরা নিয়মিত বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না।
কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর জানান, বর্তমানে যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কুতুবদিয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে সংযোগ দিলে এ ঘাটতি থাকবে না বরং গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
আবাসিক প্রকৌশলী মো. আবুল হাসনাত জানান, আমেরিকান তৈরি ৫শ’ কেবি ক্ষমতা সম্পন্ন জেনারেটর মেশিনটি পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে লোডশেডিং লেগেই আছে। বর্তমানে কোন প্রকারে বড়ঘোপ বাজার ও উপজেলা পরিষদে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছে সন্ধ্যা ৬টা হতে রাত ১১টা পর্যন্ত।
বিদ্যুৎ মার্কেট এলাকার গ্রাহক জসিম উদ্দিন জানান, মার্কেটটি বিদ্যুৎ অফিসের নামে। এখানেও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
সরকারি বিদ্যুতের এ অবস্থা দেখে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিজস্ব জেনারেটর ব্যবহার করছে। আবার ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, কুতুবদিয়া দ্বীপের অর্থনৈতিকভাবে মাছ, লবণ, তরিতরকারী প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন হলেও বিদ্যুতের অভাবে তা মজুদ বা স্টক করে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিনিয়তই উৎপাদনকারী কৃষক, জেলে ও খামারীরা সিস্টেমের অভাবে লোকসান খাচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে গড়ে উঠছে না বরফকল, সল্ট (লবণ) মিল, ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান, ড্রাই ডগ ইত্যাদি।
কুতুবদিয়া চ্যানেলের উপর দিয়ে জুলন্ত ব্রিজ করে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট করার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। এসব গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে কুতুবদিয়া দ্বীপ থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থনৈতিক যোগান দিতে পারতো সরকারকে।