কুতুবদিয়ায় বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ

51

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ছে। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় কুতুবদিয়ায় এই উত্তাপ একটু কম হলেও থেমে নেই প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। এই আসনটি ছিনিয়ে নিতে মরণ কামড় দিয়ে মাঠে কাজ করছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। চোখের ঘুম হারাম করে রাত-দিন ডোর টু ডোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে চলমান প্রেক্ষাপটে প্রচারণায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি নিজে ভোটারের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনায় সরব রয়েছেন। এছাড়াও নৌকার পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রত্যেক ওয়ার্ডে দল, উপ-দল গঠন করে আ’লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা জনগণের দ্বারে দ্বারে প্রচার করে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পথসভাও করছেন তিনি।
আইনী জটিলতায় বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীশূণ্য হতে হতেও শেষ পর্যন্ত ধানের শীষে ভোটে লড়ার সুযোগ পান সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ। নানান কারণে ফরিদের ধানের শীষের প্রচারণা চোখে পড়ছে না। যদিও ধানের শীষের সমর্থকদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন আ’লীগের নেতা-কর্মী এবং পুলিশের হামলা-মামলার কারণে মাঠে নামতে পারছেন না ধানের শীষের প্রার্থী ফরিদ।
একই অবস্থা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে থাকা জামায়াতের সহকারী আমীর সাবেক সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদও। মামলার কারণে তিনি কারাগারে থাকায় দলীয়-নেতা-কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন তার সহধর্মীনী জেবুন্নেছা হামিদ। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আ’লীগ ও পুলিশ তাদেরকে বাধা দিচ্ছে। এমনকি প্রচারণার সময় গাড়ি এবং মাইক ভাঙচুর করছে। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দিচ্ছে না তারা।
অবশ্য কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর মিসেস হামিদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আ’লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের গাড়ি ভাঙচুর করেনি। হামিদুর রহমান আযাদ আর আলমগীর মুহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ উভয়ই ২০ দলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী দাবি তুলে নিজেরাই সংঘাতে জড়িয়ে প্রচারণার গাড়ি ভাঙচুর করে আ’লীগের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
জানা গেছে, এই আসনে বিএনপি তথা ঐক্যজোটের প্রার্থী আযাদ নাকি ফরিদ- এই প্রশ্নে দ্বিধায় আছেন এখানকার ভোটাররা। উভয়ই নিজেদের ২০ দল তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী পরিচয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। উভয় প্রার্থীর সমর্থকেরা প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিতে না পারলেও নানান কৌশলে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা জানান, কুতুবদিয়া উপজেলা বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি। কিন্তু নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলা থাকায় এবং পুলিশ-আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলার কারণে মাঠে নামতে পারছে না কেউ। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি-জামায়াতেরই হবে বলে তাদের ধারণা। উভয়ই শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দিতে পারবে কি না- এ নিয়ে শংকিত বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে, যেহেতু এ আসনে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ড. আনছারুল করিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাছ প্রতীকে এবং জোটগতভাবে জাতীয় পার্টির মহিবুল্লাহ (নাঙ্গল প্রতীক) উভয়ই দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশে নৌকা প্রতীকের পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি যদি নির্বাচন পর্যন্ত স্থির থাকে, তাহলে কুতুবদিয়ায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক সুবিধা নিতে পারবেন।
তবে স্থানীয় অনেকের মতে, উপরে নৌকার কথা বলে ভেতরে ধানের শীষ কিংবা আপেল প্রতীকে এখানকার বিশাল সংখ্যক ভোটার ভোট দিবেন।