কিছুই শেষ হয়নি আবার উঠে দাঁড়াব : ফখরুল

40

নির্বাচনের রেশ কাটিয়ে নেতা-কর্মীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াইয়ে ডাকলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ভোটের পর ধর্ষিত নারীকে দেখতে গতকাল শনিবার নোয়াখালীতে যাওয়ার পর সেখানে এক মতবিনিময় সভায় দলের নেতাকর্মীদের চাঙা করার প্রয়াস চালাতে দেখা যায় বিএনপি মহাসচিবকে। খবর বিডিনিউজের
পাঁচ বছর আগে দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ভোট ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েও পারেনি বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এবার নির্বাচনেও এলেও ভরাডুবি হয়েছে তাদের; যদিও বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোট ডাকাতি করে তাদের হারানো হয়েছে।এই পরিস্থিতিতে বিএনপির সামর্থ্য নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের প্রশ্ন তোলার মধ্যে নোয়াখালীর সভায় ফখরুল বলেন, “যে কথা আমরা বার বার বলেছি- জেগে উঠুন, আপনাদের অধিকার রক্ষা করুন। আমরা রক্ষা করতে পারিনি। কেন পারিনি আমরা? পারি নাই এজন্য যে আমরা সুশৃঙ্খল নই। আমরা মরার আগেই মরে যাচ্ছি? কেন মরে যাচ্ছি? কেন উঠে দাঁড়াচ্ছি না?”
“ক্ষোভ হয় না? রাগ হয় না? উত্তেজনা হয় না?” নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন বিএনপি মহাসচিব। একটা সুযোগ আমরা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আন্দোলন তৈরি করে তাদেরকে পরাজিত করতে। আমরা আবার রুখে দাঁড়াব। আমার যে বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যে ভাইয়ের ঘর পোড়ানো হয়েছে, তার প্রতিশোধ নেব।
ভোটের দিন ধর্ষণের শিকার নারীকে নোয়াখালীর হাসপাতালে গিয়ে দেখে এবং এই ঘটনার বিচারে সোচ্চার থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মতবিনিময় সভায় যান ফখরুল। নোয়াখালী জেলা শহরে পৌঁছার পর সড়কে দাঁড়িয়ে তাকে স্বাগত জানান বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
ভোটের পর প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করে ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই তার মিটিং বলেছেন যে, দানবীয় আচরণ করবেন না, দানবে পরিণত হবেন না। আপনি তো দানব হয়ে গেছেন। আমি বলি না, এস কে সিনহা সাহেব (সাবেক প্রধান বিচারপতি) বলেছেন, এটা দানব তৈরি হয়েছে। সেই দানব থেকে মুক্তি পেতে হবে, পাথর বুক থেকে সরাতে হবে।
নোয়াখালীসহ সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় যারা আহত হয়েছেন, তাদেরকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে সহানুভূতি জানান ফখরুল। ক্ষতিগ্রস্তদের আইনি সহযোগিতা দিতে বিএনপির আইনজীবীদের নির্দেশনা দেন তিনি।
সংসদ সদস্য এখন ৬০০ : দশম সংসদের মেয়াদ ফুরোনোর আগে একাদশ সংসদের সদস্যদের শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘বেআইনি’ কাজ হয়েছে বলে দাবি করেন জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব।
নোয়াখালীর মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “উনি (শেখ হাসিনা) তড়িঘড়ি করে শপথ নিয়েছেন। আপনি তো ভোটে জিতেন নাই। আপনার শপথ নেওয়া বেআইনি। এই সংসদের (দশম) মেয়াদ আছে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত, সেই সংসদ বাতিল করেছে, এটা আমি কোনো পত্রিকায় দেখি নাই। তাহলে বাংলাদেশে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদ সদস্য হলে ৬০০! ওই সংসদ বাতিল না করে কীভাবে শপথ নিলেন আপনারা? এই শপথ বেআইনি ও অবৈধ। আপনার শপথ সংবিধানবিরোধী ও নীতি-নৈতিকতা বিরোধী।
১৯৮৮ সালে সব দলের নির্বাচনের বর্জনের মধ্যে গঠিত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রব বলেন, ভোটের তারিখ ছিল ৩০ তারিখ, ২৯ তারিখে ব্যালট শেষ। আমি ১৯৫৪ সালে ভোট দিতে গেছি, সেই থেকে এই পর্যন্ত সব ভোট দেখেছি, পৃধিবীর বিভিন্ন দেশের ভোটের ইতিহাস আমি পড়েছি, এরকম ভোট কোখাও হয়েছে কি না, আমার জানা নেই। এটা ঘৃণা করার ভাষা নেই।
সভায় কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়নি, প্রহসন হয়েছে। আজকে আইন নেই, বিচার নাই, প্রশাসন নাই, পুলিশ নাই। সব দলীয় হয়ে গেছে। এদের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে হলে প্রথম নিজেকে তৈরি করতে হবে।
আইনজীবী সমিতিতে মতবিনিময় সভার পর ঢাকার পথে রওনা হন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। পথে বেগমগঞ্জে শরীফপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামে ভোটের পর জ্বালিয়ে দেওয়া বিএনপি নেতা জাহাঙ্গীর আলম শাহিনের বাড়িতে যান তারা।