কার স্বার্থে এ কৌশল ? চট্টগ্রামের খাল খনন প্রকল্প

152

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনের জন্য নতুন বারইপাড়া খাল খননের প্রকল্প বাস্তবায়নে যে গড়িমসির ভাব লক্ষ করা যা”েছ, তা দুর্ভাগ্যজনক। এ অবস্থায় নগরবাসীর দুর্ভোগ নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা আসলে কতটা আন্তরিক সেই প্রশ্ন খুবই স্বাভাবিক। বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটি দীর্ঘ ছয় বছর আগে অনুমোদন পেয়েছিল একনেকের সভায়। কিন্তু দুইদফায় সময় বাড়িয়েও এ প্রকল্পটির কোন কাজ শুরু করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে তৃতীয়বার সময় বাড়ানোর কৌশল হিসাবে গত মঙ্গলবার নতুন করে খালটি খনন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। চসিক দায়িত্বশীল প্রকৌশলীদের নানা ছলচাতুরীতে এ প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির সাথে বহুগুণ আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও আদৌ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে কিনা বা বাস্তবায়নের প্রয়োজন এ মুহূর্তে আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় ২০১৪ সালের জুন মাসে। প্রথমবার প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু করা যায়নি। কারণ ছিল ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা। অবশ্য এই জটিলতা তৈরির নেপথ্যে রয়েছে চসিকের দায়িত্বরত প্রকৌশলীর অদূরদর্শীতা ও দায়িত্বে চরম গাফিলতি। বাস্তব অবস্থা অবলোকন ছাড়া সিডিএ মাস্টারপ্লান অনুসারে প্রকল্প প্রস্তাবনা দিয়ে অনুমোদিত হয় প্রকল্প। বাস্তবায়ন করতে গেলে শুরু হয় এলাইনমেন্টের ঝামেলা। তারপর আবারও দ্বিতীয় দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এরই মধ্যে সরকার মৌজা মূল্যের তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেয়। ফলে দেরি করার মাশুল হিসেবে চারগুণ বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়। সেবারও ব্যয় বাড়িয়ে অনুমোদন দেয় সরকার। কিন্তু অধিগ্রহণের ধীরগতির কারণে এখনও মাত্র দুইটি এলএ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও তিনটি। ফলে নিষ্পত্তি হওয়া এলাকায় টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে কাজে নেমে পড়তে চাচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক। অন্যথায় তৃতীয়বার মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে নতুন ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। এর মধ্যে তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কৌশল হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বহুল আলোচিত বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খনন কাজ উদ্বোধন করেন মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন। প্রতিবেদনে নানা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘ ছয় বছর আগের এ প্রখল্প এই সময়ে আর প্রয়েজন আছে কিনা বা প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেননা সিডিএ জলাবদ্ধতা নিয়ে মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। একইদিনে সময়ের সাথে আবারও ব্যয় বাড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য যে, শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় ছিল ২২৪ কোটি টাকা। এখন শুধু জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ১ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। যেখানে শুধু জমি অধিগ্রহণের খরচই বেড়েছে সাড়ে তিন গুণ, সেখানে গোটা প্রকল্পের খরচ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপন এবং ব্যয় বৃদ্ধির দায়ভার কে নেবে তাও জানার বিষয়। সামগ্রিকভাবে আমরা অনুমানের উপর বলতে পারি, একদিকে খরচ বৃদ্ধির কারণে যেমন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনি এই প্রকল্পের ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের অব¯’ানও বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম নগরী ভয়াবহ জলাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এমন হচ্ছে। মহানগরীর ভেতরে ছোট-বড় যে ৫৭টি খাল রয়েছে, তার অনেকগুলোই ভরাট হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতা দূর করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নানা প্রকল্প নেওয়া ও অর্থ খরচ করা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। চট্টগ্রাম নগরীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন খালের প্রকল্পটি কার্যকর বিবেচিত হলে তাই করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সক্রিয় হবে বলে আমরা আশা করছি।