কার পকেটে যায় লোপাটের টাকা?

48

বাঁশখালী হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মচারীদের নিয়ে নিউমোক্ষাল টিকা (পিসিভি) বিষয়ে অনুষ্ঠিত হয় উদ্বুদ্ধকরণ সভা। দুই গ্রুপে ৪০জন করে মোট ৮০জন এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। গত ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ৮০জনের জন্য খাবারের অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় ১৬ হাজার টাকা। প্রতিজনের জন্য বরাদ্দ দেয়া ২০০ টাকার জায়গায় আনুমানিক ৪৫ টাকার খাবার দেয়া হয়। বাকি টাকা কার পকেটে?
বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দেয়। একইভাবে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দের টাকাতেও নয়-ছয় করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সে সময় খাবার কেনার সাথে জড়িত থাকা ওয়ার্ড বয় মোরশেদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘পিসিভি সভার জন্য ইপিআই রফিক সাহেব আমাকে দুই হাজার ২০০ টাকা দিয়েছেন। সে টাকায় আপেল, কেক, মিষ্টি ও চা দিয়েছিলাম। উপস্থিত হয়েছিল ৬৬জন। এ প্লাস ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠানে কমলা, সিঙ্গারা, কেক, চা, পানি দেয়া হয়েছিল উপস্থিত অতিথিদের। সে সময় আমাকে টিএইচও স্যার দুই হাজার ১০০ টাকা দেয়। আমি দুই হাজার ৮০ টাকা খরচ করেছিলাম।’
জানতে চাইলে বাঁশখালী হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কমরুল আযাদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘পিসিভি প্রশিক্ষণে ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। সবাইকে বিরানি খাওয়ানো হয়েছে। ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইনের বরাদ্দের টাকা এখনও পাওয়া যায়নি। আর বহির্বিভাগের রোগী টিকিটের বাড়তি টাকা নেয়ার বিষয়ে দুইজনকেই সতর্ক করা হয়েছে। প্রমাণ পেলেই ব্যবস্থা নিব।’
হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, সভা-সেমিনারের জন্য বরাদ্দের টাকা নানাভাবে হরিলুট হয়। সভা-সেমিনারের বরাদ্দ যখন নয়-ছয় হচ্ছে, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার বরাদ্দে কীভাবে দুর্নীতি হচ্ছে, সেটা তদন্ত হওয়া উচিত। হাসপাতাল সংস্কার ও বিভিন্ন ক্যাটাগরির বরাদ্দগুলো সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কিনা সেটি তদন্ত করা দরকার। সরকারি বরাদ্দ থাকলেও নানা সমস্যা কারণে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ হাসপাতালে একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এ সিন্ডিকেটে যারাই আছেন তারা বদলি হলেও নানাভাবে তদবির করে বদলি ঠেকিয়ে দেন।
সূত্র জানায়, বাঁশখালী হাসপাতালের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) বিরুদ্ধেই অভিযোগ বেশি। এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিসে না থাকা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র পরিদর্শন না করেই বিল উত্তোলন করার অভিযোগ আছে। গত এক সপ্তাহে তিনি মাত্র একদিন অফিস করেছেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ ও পরিদর্শনের কথা বলে তিনি হাসপাতালে উপস্থিত থাকেন না। এছাড়াও বহির্বিভাগে রোগীদের কাছ থেকে সরকারিভাবে তিন টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও নেয়া হয় ৫টাকা। সবুজ, শিলু ও মোরশেদ নামে কয়েকজন রোগীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন বুকিং ক্লার্করা। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে শাস্তিমূলক বদলি হয়ে যাওয়া সবুজ নিজেই বাড়তি টাকা নেন। প্রতিদিন আউটডোরে দুই থেকে তিন’শ রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সবুজ বলেন, ‘কিছু বাড়তি টাকা নেয়া হলেও তা স্টেশনারি খাতা, কলম, মোমবাতি কেনার জন্য ব্যয় করা হয়।’
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী পূর্বদেশকে বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি বরাদ্দে অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে তৎকালীন বাঁশখালী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত হয়েছিল। সে সময় হাসপাতালে নিয়মিত উপস্থিত না হওয়া, চট্টগ্রামের বাসায় কর্মচারীদের নিয়ে গিয়ে অফিসের বেতন ভাতাদিসহ সকল কাগজপত্রাদি স্বাক্ষর করানো, এমএসআর এর জন্য বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে মালামাল ক্রয় না করা, এনসিডি প্রশিক্ষণ না হওয়া, ট্যাব বিষয়ক প্রশিক্ষণ না হওয়াসহ বেশকিছু বিষয়ে কয়েক লক্ষ টাকার অনিয়মের সত্যতা পেয়েছিল গঠিত তদন্ত কমিটি।