কারবালায় জঘন্য নির্মমতা দেখিয়েছিল ইয়াজিদি গোষ্ঠী

114

জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিলে গতকাল রবিবার ৮ম দিনে দেশি-বিদেশি আলোচকরা বলেছেন, সেদিন কারবালা প্রান্তরে হোসাইনি কাফেলার তাঁবুতে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় শিশু-নারীরা ছটফট করছিলেন। ফোরাত নদীর পানি কুকুর-বিড়ালসহ সকল প্রাণীর জন্য উন্মুক্ত ছিল, অথচ নবী পরিবারের জন্য এক ফোঁটা পানি পর্যন্ত আনতে দেয়নি ইয়াজিদি পাষবন্ডরা। পানীয় ও খাদ্যের জোগান বন্ধ করে দিয়ে ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় নারী-শিশুদের প্রাণ কেড়ে নেয়ার জঘন্য নির্মমতা ও স্পর্ধা দেখিয়েছিল ইয়াজিদি গোষ্ঠী।
বক্তারা বলেন, নদী-সমুদ্রের পানির সত্যিকার মালিকানা আল্লাহ পাকের। দুনিয়ার কোন দেশের শাসক পানির অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত রাখতে পারে না। নদী-সমুদ্রের পানির ওপর সকল দেশের মানুষের হক ও অধিকার রয়েছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি অনিবার্য হয়, তা হবে পানির জন্য। তাই পানির কষ্টে ভোগা বিশ্বের ৫০ কোটি মানুষকে বাঁচাতে সকল দেশের মানুষের জন্য পানির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। পানির ন্যায্য অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। এটাই শাহাদাতে কারবালার দর্শন ও শিক্ষা।
গতকাল অনুষ্ঠিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান আলহাজ সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদি প্রেতাত্মারা নবী পরিবারের নিষ্পাপ অবুঝ নিরপরাধ সদস্যদের ওপর যে জঘন্য নির্মমতা চালিয়েছে, ইতিহাসে এর দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারবালা আমাদের ঈমানি চেতনাকে জাগিয়ে তোলে। কারবালার শোককে শক্তিতে পরিণত করে ঈমানি শক্তি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
মাহফিলে বিদেশি আলোচক ছিলেন লেবানন গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর শাঈখ শাহ্ সূফী আল্লামা সৈয়্যদ জামাল শাক্কার আল-হোসাইনী। তিনি বলেন, হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর হাতে দ্বীন ইসলাম জীবন্ত হয়েছে। মুমূর্ষু ইসলামকে বিকৃতকারীদের হাত থেকে তিনি রক্ষা করে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। যতোদিন পৃথিবী টিকে থাকবে, ততোদিন ধরে কারবালা ট্র্যাজেডি ঈমানি জনতার মাঝে রক্তক্ষরণ ঘটাবে।
মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে সূফী মিজানুর রহমান বলেন, মানুষকে প্রফুল্ল রাখা, স্ত্রীকে যথাযথ মর্যাদা দেয়া, নিজের সন্তানদেরকে প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসা, সৎভাবে হালাল জীবিকা অর্জন এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা করাই একজন আদর্শ মানুষের বৈশিষ্ট্য। আজ আমরা ভোগ-উপভোগে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছি। একটি সাদামাটা জীবন খুব সহজেই পার করে দেয়া যায়। জীবনে বহু টাকার প্রয়োজন নেই। অল্পে তুষ্ট থাকলেই জীবন সুখে-শান্তিতে ভরে যায়। জমিয়তুল ফালাহর এ শাহাদাতে কারবালা মাহফিল চট্টগ্রামের ঐতিহ্য-মর্যাদাকে উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
কারবালা ট্র্যাজেডি নিয়ে মিডিয়ার ভূমিকা বিষয়ে আলোচানা করেন ঢাকা কাদেরীয়া তৈয়্যবিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আল্লামা আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক। তিনি বলেন, এদেশের মিডিয়া তথা গণমাধ্যমে ধীরে ধীরে শাহাদাতে কারবালার ঘটনা গুরুত্ব পাচ্ছে। আগে আশুরা দিবসে বড় হেডিংয়ে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের সচিত্র নিউজ দেখা যেতো। তাজিয়া মিছিল যে শিয়াদের লোক দেখানো মাতম এবং তা যে বিকৃত সংস্কৃতি মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে তুলে ধরতে হবে।
কারবালা প্রেক্ষাপটে ইয়াজিদিদের দুরভিসন্ধি, ব্যক্তিগত না কি ধারাবাহিকতার প্রতিশ্রুতি- এ বিষয়ে আলোচনা করেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসার প্রভাষক গবেষক হাফেজ আল্লামা মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান আলকাদেরী। তিনি বলেন, প্রচন্ড চাপ সত্ত্বেও হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেননি। সেদিন সত্যকে আঁকড়ে ধরে কঠিন সবরের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ইয়াজিদিদের সঙ্গে আদর্শের যুদ্ধে বিজয়ের মুকুট পরেছিলেন ইমাম হোসাইন (রা.)।
ড. আল্লামা মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ ও অধ্যাপক মাওলানা জিয়াউল হক রিজভির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মাহফিলে অতিথি ছিলেন শুলকবহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোরশেদ আলম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুহাম্মদ আলমগীর পারভেজ, আহলা দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন পীরে তরিকত সৈয়দ ইমদাদুল ইসলাম। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মহসিন ও গাউছিয়া কমিটির চেয়ারম্যান পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনার, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন আবুসুফিয়ান আবেদী আলকাদেরীসহ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা এবং বিভিন্ন মাদরাসার সম্মানিত আলেমবৃন্দ, গাউসিয়া কমিটির সর্বস্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন দরবারের সাজ্জাদানশিন, মতোয়াল্লিবৃন্দ ও খাদেমগণ এবং শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দ।
সালাত সালাম শেষে বিশ্বের নিপীড়িত মানবতার পরিত্রাণ, দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি সমৃদ্ধি কামনায় মুনাজাত করা হয়। কুরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন আন্তর্জাতিক ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। হামদ ও নাতে রাসূল (দ) পরিবেশন করেন শায়ের তৈয়্যব মুহাম্মদ তাহসিন।
আজ সোমবার মাহফিলের ৯ম দিবসে সভাপতিত্ব করবেন আঞ্জুমান ট্রাস্টের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুহাম্মদ মুহসিন। বিদেশি আলোচক থাকবেন বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রা.) সরাসরি বংশধর হযরত শাহসূফী সৈয়্যদ আব্দুল কাদের মনসুর আল-জিলানী আল-বাগদাদী এবং ভারতের কাসওয়াসা দরবার শরিফের সাজ্জাদানশিন কায়েদে মিল্লাত আল্লামা সৈয়দ মাহামুদ আশরাফ আল-আশরাফি আল জিলানী। এছাড়া বিশ্বের সুনামধন্য ক্বারী, ক্বারী মোহাম্মদ রিদওয়ান গোম্মাহ ইউনুছ।
জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের নিচতলায় প্রতিদিনের মাহফিলে মহিলাদের জন্য পর্দা সহকারে বক্তব্য শোনার ব্যবস্থা রয়েছে।