কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরা উন্মুক্ত হচ্ছে কাল

25

কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস বন্ধ রাখার পর মাছ ধরার ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হচ্ছে। ফলে কাল ১ আগস্ট থেকে আবারও মাছ ধরা উন্মুক্ত হচ্ছে এ হ্রদে। অন্যদিকে চলতি মৌসুমে সঠিক সময়ে হ্রদে পর্যাপ্ত পানি জমেনি। ফলে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন সম্পন্ন হয়নি উল্লেখ করে মাছ ধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞার সময় আরো বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ। এটি বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য উৎপাদন ক্ষেত্র। বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে খর¯্রােতা কর্ণফুলী নদীর ওপর রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে নির্মিত বাঁধের ফলে এ হ্রদের সৃষ্টি। হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রাকৃতিক প্রজনন, বংশ বৃদ্ধি ও উৎপাদন বাড়াতে প্রত্যেক বছর বর্ষা মৌসুমে সব ধরনের মাছ শিকার, আহরণ ও বিপণনের ওপর তিন মাস নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। এবার গত ১ মে থেকে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মেয়াদ শেষে ১ আগস্ট ভোরগত মধ্যরাত থেকে হ্রদে মাছ আহরণের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
তবে হ্রদে মাছের সুষ্ঠু প্রজনন সম্পন্ন করতে নিষেধাজ্ঞার সময় আরও বিশ দিন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। মৎস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক বরাবরে এই বিষয়ে লিখিত আবেদনও জানিয়েছেন তারা।
সমিতির সভাপতি মো. হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়–য়া বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রাথমিকভাবে ১ আগস্ট থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের আদেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঠিক সময়ে কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না হওয়ায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন এখনও সম্পন্ন হয়নি। মাছের গুণগত আকার ও পরিমাণ এখনও ছোট। এ অবস্থায় পোনা নিধন করা হলে রাজস্ব হারিয়ে সরকারের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন জেলেসহ মৎস্য ব্যবসায়ীরা। তা ছাড়াও হঠাৎ ভারি বৃষ্টির কারণে রাঙামাটি সড়কের অবস্থা বেহাল হয়ে রয়েছে। এতে মাছ বোঝাই পরিবহন চলাচল বিঘিœত হতে পারে। পাশাপাশি আসন্ন ঈদ-উল আযহার উৎসব থাকায় মৎস্য শ্রমিকদের কাজে পাওয়া দুস্কর হবে। তাই কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা ২০ আগস্ট পর্যন্ত বলবৎ রাখার দাবি জানিয়েছি আমরা।
মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, নানা অব্যবস্থাপনার কারণে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে দিন দিন মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন। রাজস্ব আদায়সহ নানা ক্ষেত্রে নয়-ছয় হয়ে আসছে। পাশাপাশি হ্রদ হারাচ্ছে নাব্যতা। বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে হ্রদের পানি। অব্যাহতভাবে চলছে অবৈধ উপায়ে মাছ শিকার। দ্রæত এসব অব্যবস্থাপনা রোধে পদক্ষেপ নেয়া না হলে ভবিষ্যতে হ্রদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা মাছ ব্যবসায়ীদের।
জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ এপ্রসঙ্গে বলেন, হ্রদে মাছ ধরার ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সভা হয়েছে। সভায় বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের কাপ্তাই হ্রদের বিপণন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষসহ মৎস্যজীবী ও বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছে।