কাপ্তাইয়ে আ.লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব

14

কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দীর্ঘ সাত বছর পর আগামী ২৮ অক্টোবর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে বলে জানান উপজেলা সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরী। রাঙামাটির সাংসদ সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা। এদিকে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে আসন্ন কাউন্সিলকে ঘিরে। কে হচ্ছেন দলের পরবর্তী সভাপতি ও সম্পাদক? এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে সবাই অভিমত ব্যক্ত করেছেন দলের দুর্দিন ও সুদিনে যারা কর্মীদের পাশে ছিলেন, তারাই যেনো দলের মূল দায়িত্বে আসেন। ইতোমধ্যে সভাপতি হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অসুইছাইন চৌধুরী, বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য নুরউল্লাহ ভূঁইয়া। সাধারণ সম্পাদক পদে চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্তার হোসেন মিলন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান সভাপতি অংসুইছাইন চৌধুরী জানান, ছাত্র রাজনীতি থেকে দলের দুর্দিন ও সুদিনে সবসময় নেতাকর্মীদের পাশেই ছিলাম। জেলা পরিষদের সদস্য এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়েও সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি দল গঠনে সবসময় নেতাকর্মীদের পাশেই ছিলাম। তিনি আরো জনান, রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত সাংসদ দীপংকর তালুকদার এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যদি চান, তাহলে আমি আবারও দলের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই। বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী থোয়াই চিং মারমা বলেন, আমি সবসময় জনগণের রাজনীতি করে আসছি। দলের নেতাকর্মীদের সুখে দুখে তাদের পাশে ছিলাম এবং থাকবো। জননেতা দীপংকর তালুকদার আমাকে জেলা পরিষদের সদস্য করেছেন। তার বিনিময়ে ও দলের প্রয়োজনে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে উন্নয়নের কাজ করে গেছি। আগামীতে যদি দীপংকর তালুকদার এমপি এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চান, তাহলে আমি দলের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগকে আরো সুসংগঠিত করতে চাই। সভাপতি প্রার্থী নুরউল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ছাত্রজীবন থেকে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলের ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছি। আমি চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা কৃষকলীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। এ দীর্ঘ সময় সর্বদা দলের সুখে দুখে ছিলাম ও আছি। আগামীতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যদি চান আমি সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দলকে আরো এগিয়ে নিবো এবং এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবো।
এদিকে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনোয়ারুল ইসলাম বেবি জানান, ছাত্রলীগ দিয়েই আমার রাজনীতি শুরু। পর্যায়ক্রমে উপজেলা যুবলীগকে সুসংগঠিত করে আওয়ামী লীগের কমিটিতে নিজের যোগ্যতায় স্থান করে নিয়েছি। সুদীর্ঘ এ রাজনৈতিক জীবনে বিরোধীদলে থাকাকালীন হয়রানির শিকার হয়েছি। কিন্তু দলের আদর্শ হতে কখনো পিছপা হইনি। তাই দল এবং নেতাকর্মীরা যদি মনে করেন আমি সাধারণ সম্পাদক হিসাবে যোগ্য তাহলে তাদের সম্মানকে মাথা পেতে নেব। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে উপজেলার ৫ ইউনিয়ন চষে বেড়ানো প্রার্থী ইব্রাহিম খলিল জানান, ছাত্রলীগের মাধ্যমেই আমার রাজনীতি শুরু। তবে ১৯৯৫ সালে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে দিয়ে কাপ্তাইয়ে রাজনীতি শুরু করি। আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে। এমন পরিস্থিতিতে দলকে এগিয়ে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হই। যার প্রেক্ষিতে ২০০০ সালে যুবলীগের সম্মেলনে পুনরায় আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেই যুবলীগের দায়িত্ব পালন করে ২০১২ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ১নং যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা যদি সম্পাদক হিসাবে আমাকে চান, আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সুখে দুখে তাদের পাশে থেকে দলকে এগিয়ে নিব। দলের বর্তমান কমিটির সদস্য আক্তার হোসেনমিলন বলেন, ১৯৯৮-১৯৯৯ সালে কর্ণফুলী কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০২-২০০৫ সাল পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহŸায়কের দায়িত্ব পালন করি এবং পরবর্তীতে যুবলীগের প্রার্থী হিসাবে বর্তমান সভাপতির নিকট হেরে যাই। ২০১২ সাল হতে অদ্যাবধি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসাবে দলের সুখে দুখে কাজ করে যাচ্ছি। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে সে সময়কার আ’লীগ সভাপতি অনিল তংচংগ্যা সহ কারাবরণ করেছি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। আগামী কাউন্সিলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আমাকে সম্পাদক হিসাবে মনোনীত করলে নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে সে দায়িত্ব পালন করবো।
দীর্ঘ সাতবছর পর কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে চিৎমরম ইউনিয়ন ও চন্দ্রঘোনা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। উপজেলা সম্মেলনের আগে অপর ইউনিয়নগুলোর সম্মেলন শেষে আগামী ২৮ অক্টোবর উপজেলা সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে বলে দলের নীতি নির্ধারকরা জানান। আর এ সম্মেলনকে ঘিরে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনাই প্রমাণ করে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়া বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের যে কোন পদে আসীন হওয়া মানে সম্মান এবং গৌরবের।