কাগুজে ‘হিস্ট্রি বুকের’ বদলে ডিজিটাল সফটওয়্যার

57

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মালিকানাধীন প্রতিটি গাড়ির বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয় কাগুজে ‘হিস্ট্রি বুক’। একটি গাড়ি কয়বার মেরামত করা হয়েছে, ফুয়েল ব্যবহার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট তথ্য সংরক্ষণ করা হয় বইটিতে। তবে এবার কাগুজে হিস্ট্রি বুকের পরিবর্তে অনলাইন ডাটাবেজের সফটওয়্যার করছে সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ফলে গাড়ির ডাটাবেজ সংরক্ষণে কাগুজে ফাইলের ঝামেলা যেমন থাকবে না, তেমনি গাড়ি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সময়ক্ষেপণ হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অবশ্য গত বছর চসিকের সাগরিকা ও দামপাড়ায় ট্রান্সপোর্ট পুল অফিসে প্রায় ৭৪৬ জনের চালকের ডিজিটাল হাজিরার জন্য ‘ফিঙ্গার প্রিন্ট’ বসানো হয়। এতে সফল হওয়ার পরই কাগুজে হিস্ট্রি বুকের পরিবর্তে ডিজিটাল ডাটাবেজের সফটওয়্যার করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রকৌশল বিভাগের যান্ত্রিক শাখা।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য কাজের জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ৫ শতাধিক গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি পরিচালনা ও মেরামতের জন্য কর্পোরেশনের নিজস্ব গ্যারেজ, ফুয়েল ও গ্যাস পাম্প রয়েছে। পাশাপাশি ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে গাড়িগুলো মেরামত করা হয়। ফলে প্রতিটি গাড়িতে ফুয়েল ব্যবহারের তথ্য সংরক্ষণের জন্য রয়েছে আলাদা কাগুজে বই। আবার গাড়ি মেরামত বা কি কি পার্টস লাগানো হয়েছে, এসব তথ্য সংরক্ষণের জন্য রয়েছে ‘হিস্ট্রি বুক’। কিন্তু কাগুজে হিস্ট্রি বুকে তথ্য সংরক্ষণ করলে গাড়ির বয়সের সাথে বইয়ের আকারও বাড়তে থাকে। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর নতুন আরেকটি বই শুরু করতে হয়। ফলে একটি গাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতায় পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের। সে জায়গায় অনলাইন ডাটাবেজ সফটওয়্যার করা হলে মুহূর্তেই একটি গাড়ির বিস্তারিত তথ্য সহজেই বের করা যাবে। গাড়ি নিলামে যাবে কি না, তা সহজেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। গত ১১ মার্চ প্রকৌশল বিভাগ অনলাইন ডাটাবেজ সফটওয়্যার করার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যার জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫৫০ টাকা। শীগগিরই টেন্ডার আহŸানের মাধ্যমে কাজটি সম্পাদন করা হবে বলে জানিয়েছে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ।
এ বিষয়ে চসিকের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক বলেছেন, আমরা চালকদের মত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন প্রয়োগ করে সফল হয়েছি। এখন গাড়িরগুলোর তথ্য সংরক্ষণে ডাটাবেজ সফটওয়্যার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুহূর্তেই যেকোন গাড়ির ডাটা বের করা যাবে। এখন আমাদের ফুয়েলের ডাটার জন্য একটি বই, আবার মেরামতের তথ্যের জন্য আরেকটি বই ব্যবহার করতে হয়। এসব কাগুজে ডাটার বইগুলো ব্যবহার করা হলে তথ্যগুলো অনেকটা বোঝার মত হয়ে যায়। এখন প্রতিদিন হিস্ট্রি বুক থেকে সফটওয়্যারে এন্ট্রি হয়ে যাবে, তারপর একসাথে ফুয়েল, মেরামতসহ সবধরণের তথ্য পাওয়া যাবে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগী নেতৃত্বের কারণে সিটি কর্পোরেশনের মত প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে।
চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ পূর্বদেশকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কাজের প্রসারতা অনেক বেশি। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, মেডিকেল সার্ভিসসহ অন্যান্য কাজের জন্য প্রায় ৫ শতাধিক গাড়ি রয়েছে। এসব গাড়ি নিয়মিত মেরামতের প্রয়োজন হয়। গাড়িতে ফুয়েলের ব্যবহার ও মেরামতের তথ্যও সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। কেননা একটি গাড়ি আর মেরামত করা হবে কি না, নাকি নিলামে দেওয়া প্রয়োজন-এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রতিটি গাড়ির বিপরীতে ‘হিস্ট্রি বুক’ ব্যবহার চালু করেছিলাম। এখন যুগোপযোগী সেবা নিশ্চিত করতে অনলাইন ডাটাবেজ সফটওয়্যার করা হচ্ছে, যাতে একসাথে এবং অল্প সময়ে একটি গাড়ির সব ধরণের তথ্য পাওয়া যায়। ফলে স্বচ্ছতা যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি সিদ্ধান্ত নিয়ে সহজ হবে।