কাউন্সিলর মনি বললেন মেয়র নাছিরের প্রশংসা আবেগ তাড়িত হয়ে

51

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে মেয়র আ জ ম নাছিরের প্রশংসা করে দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর নেতাদের কাছে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ করেছেন চট্টগ্রাম নগর মহিলা দল সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনি। ওই ঘটনায় ‘লজ্জিত’ জানিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন মনি। আগামীতে কখনও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অনুষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো দলের কর্মসূচিতে না যাওয়ার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
গত শনিবার রাতে মহিলা দল থেকে মনিকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘এলাকার কাজ আদায় করতে ও জনকল্যাণে আবেগ তাড়িত হয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অতি প্রশংসা করেছি’।
দুর্গা পূজা উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ আয়োজিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মাতৃমন্ডলীর মাঝে শাড়ি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেয়রের ভূয়সী প্রশংসা করেন নগর মহিলা দল সভানেত্রী ও সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি।
এ নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের থেকে সমালোচনা শুরু হলে ‘দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মনিকে বহিষ্কার করে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। মহিলা দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে তাকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
এ বিষয়ে গতকাল রবিবার সকালে মনোয়ারা বেগম মনি বলেন, ‘মানুষের তো ভুল হতেই পারে। আমি ভুল করতে পারি। একটা কারণ দর্শানো নোটিশও আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি একজনের প্রশংসা করেছি। আমার দল বিএনপি বা দলের নেতাদের বিরুদ্ধে তো কিছু বলিনি। আমার ৩০ বছরের রাজনৈতিক জীবন। রাজনীতি করতে গিয়ে কতগুলো মামলার আসামি হয়েছি। কতবার আমার উপর সরাসরি হামলা হয়েছে। কতবার জেল খাটলাম? একটা কথায় সব শূন্য হয়ে গেল?’ খবর বিডিনিউজের
মনি বলেন, ‘আমি মরে গেলেও বিএনপিই করব। কোনো পদ-পদবি না থাকলেও’। বহিষ্কারের আগে বা পরে বিএনপির কোনো নেতার সাথে তার ‘যোগাযোগ’ হয়নি বলেও দাবি করেন মনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মেয়রের সাথে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আপা আপনি বিএনপির রাজনীতি করেন। আমি জানি, আপনি বিএনপিই করবেন। যা হয়ে গেল, আপনার জন্য খারাপ লাগছে’।
এ বিষয়ে জানতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
‘লজ্জিত ও অনুতপ্ত’ মনি :
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার লালখান বাজারের অনুষ্ঠানে আমার দেয়া বক্তব্যের জন্য আমি লজ্জিত ও অনুতপ্ত’। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে হামলার শিকার হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দলের সাথে ছিলাম, আছি, থাকব। আমি রাজনীতি করি শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ও জনগণের কল্যাণে। দলীয় কোনো পদপদবী না থাকলেও একজন সমর্থক হিসেবে আমি আমৃত্যু প্রাণপ্রিয় সংগঠন বিএনপি ও মহিলা দলের সাথে থাকব। পাশাপাশি অঙ্গীকার করছি ভবিষ্যতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের কর্মসূচি ছাড়া অন্য কোনো দলের কর্মসূচিতে অংশ নেব না’। খরব বিডিনিউজের
তার নিজের এলাকায় ওই অনুষ্ঠান হওয়ায় অনুরোধে সাড়া দিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানান মনি। বিবৃতিতে মনি বলেন, ‘দুইজন দুই নীতির হলেও জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব জনকল্যাণে কাজ করা। এলাকার কাজ আদায় করা ও জনকল্যাণে আবেগ তাড়িত হয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অতি প্রশংসা করেছি। মহিলা দলের সভানেত্রী হিসেবে আমার বক্তব্যটি সমুচিত হয়নি, যা আমি স্বীকার করছি। এতে আামর প্রাণপ্রিয় দল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছে। আমার অমার্জনীয় অপরাধের জন্য আমি সকলের নিকট ক্ষমাপ্রার্থী’।
আবার মেয়র পদে নাছিরকে চেয়েছিলেন মনি
বৃহস্পতিবারের ওই অনুষ্ঠানে আগামিতে সিটি মেয়র পদে আবারও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে দেখতে চেয়ে বক্তব্য রাখেন মনি। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আ জ ম নাছির কোন দল করে সেটা দিয়ে কাজ করেন না। একটা জায়গায় উনি আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি, কিন্তু উনি চট্টগ্রামের অভিভাবক। আগামি দিনেও আ জ ম নাছিরকে আমরা আবার মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। ইনশাল্লাহ সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে মেয়র হয়ে আবার এখানে আসবেন। উনি প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে যত কাজ করেছেন সেটা বলার লোক খুব কম। উনার দলে উনার পেছনে ষড়যন্ত্র করছে, অন্য দল না। সাধারণ মানুষ আ জ ম নাছিরকে ভালোবাসে’।
মহিলা দল নেত্রী মনি বলেন, ‘যখন কেউ আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে কিছু বলে প্রতিবাদ করি। আমি সাক্ষী উনি কাউকে কখনো খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। তিনটা মেয়র পেয়েছি আমি। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পেয়েছি, মনজুর আলমকে পেয়েছি, আ জ ম নাছিরকে পেয়েছি। আমার দৃষ্টিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আপনারা যদি আ জ ম নাছিরকে আবার নির্বাচিত করতে না পারেন এটা আপনাদের জন্য ব্যর্থতা, চরম ব্যর্থতা’।
মনি বলেছিলেন, ‘উনি (নাছির) নমিনেশন… পাবেন আমি জানি, কিন্তু না হলে আমি নির্বাচন করব না। আর কোনো মেয়রের অধীনে কমিশনার আর হওয়ার ইচ্ছা নাই। অনেক করেছি। আর নির্বাচন করি কি না সেটাও ঠিক নাই’। মনির বক্তব্যের সময় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অনুষ্ঠান মঞ্চে বসা ছিলেন।
ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক আহমদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, খুলশী থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মোমিনুল হক মোমিন এবং লালখান বাজার ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম মাসুম। এর আগে ২৫ জুলাইও অন্য এক অনুষ্ঠানে আ জ ম নাছিরকে আবারও মেয়র হিসেবে দেখার আকাঙ্খার কথা জানিয়েছিলেন মনি।