‘কলেমা পড়, এনকাউন্টারে দেব তোকে’

40

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর কারাগারে পাঠানো পর্যন্ত তার সাথে কি ঘটেছিল তা তিনি বর্ণনা করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। আরিফুল ইসলাম বলেন, বাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে তাকে গাড়িতে তোলা হয়। আমাকে জোর করে গাড়িতে উঠানো হয়। আমি তাদের বলি আমার অপরাধ কী আমাকে বলেন। আমার কোন ভুল হয়ে থাকলে আমাকে মাফ করে দেন। আমি তাদের কাছে বার বার মাফ চেয়েছি।
সে সময় উপস্থিত জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে আরিফুল ইসলাম বলেন, তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য ছিল তাদেরকে বলেন, এর হাত পা বেঁধে ফেল, আজকে একে এনকাউন্টারে দিয়ে দেব।
আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল। আমি তখন তাদের কাছে মাফ চাই,কিন্তু তিনি বলেন তুই কলেমা পড়, তোকে এনকাউন্টারে দেব, তুই সমাজের জঞ্জাল।
আমাকে তিনি জিঞ্জেস করেন তুই কি ডিসির বিরুদ্ধে লিখিস? ডিসি কি ঘুষ খায়? আমি বললাম আমি এমন কিছু লিখি না, আমার ভুল হলে মাফ করে দেন।
আমি তাদের বলেছিলাম আমার দুটি সন্তান আছে, আমি মারা গেলে ওদের কে দেখবে। ওদের উপর রহম করে আমাকে আপনারা ছেড়ে দেন।
উনি (ঐ কর্মকর্তা) কোন কথাই শুনছিলেন না। শুধু বলছিলেন তোর সময় শেষ তুই কলেমা পড়। আমার চোখ যে কাপড় দিয়ে বাঁধা ছিল সেটা কোন রকম একটু সরিয়ে আমি দেখতে পেলাম ধরলা ব্রিজ পার হয়ে আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যেটা আমার বাড়ি থেকে ৭/৮ কিলোমিটার দূর।
আমি তখন শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম। এর ২/৪ মিনিটের মধ্যে তারা ফোনে কথা বলে, মেসেজ পাঠায় তারপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। খবর বিবিসি বাংলার
আরিফুল বলেন, চোখের কাপড়ের ফাঁক তিনি দেখতে পান তাকে ডিসি অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। তারপর শুরু হয় প্রচন্ড মারধোর। আমাকে বিবস্ত্র করে মারে, ছবি তোলে।
ঐ কর্মকর্তা আমাকে বলতে থাকে তোর বাপের নাম ভুলিয়ে দেব। আমাকে বিবস্ত্র করে মারে, ছবি তোলে , ভিডিও করে।
অরিফুল বলেন, পরে তাকে কাপড় পরিয়ে জোর করে চারটা স্বাক্ষর করে নেয়া হয়। আমি এখনো জানি না এই স্বাক্ষরগুলো কেন, কোথায় নেয়া হয়েছে।
এরমধ্যেই পুলিশ চলে আসে, কিন্তু তিনি বলেন, পুলিশ কি করতে পারবে! তাকে দ্রুত কারাগারে নিয়ে আসা হয়।
বাড়ি থেকে তাকে বের করা হয় রাত সাড়ে ১২টার দিকে। আর কারাগারে পাঠায় রাত দেড়টা থেকে দুইটার দিকে। আরিফুল ইসলাম বলেন, এক/দেড়ঘন্টার মধ্যে এসব কিছু হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফ এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এছাড়া, স¤প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়োগ নিয়ে ডিসি সুলতানা পারভীনের অনিয়ম নিয়েও প্রতিবেদন তৈরি করেন আরিফুল। এসময় একাধিকবার তাকে ডিসি অফিসে ডেকে নিয়ে হুমকি দেওয়া হয়।