কলা চাষে স্বাবলম্বী

153

চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর, কাঞ্চননগর, ধোপাছড়ি, জামিজুরী, দোহাজারী এলাকায় কলা চাষ করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাশিমপুর বরুমতি খালের পাড়ে রেললাইনের পাশে বেশ কয়েকজন কলা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। একইভাবে ধোপাছড়ি, জামিজুরী, দোহাজারী, কাঞ্চননগর এলাকায় কলা চাষ করে লাভবান হয়েছেন কলা চাষিরা। হাশিমপুরের ‘কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত’। খনার বচনটি কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছেন চন্দনাইশের কলা চাষিরা। চন্দনাইশে উৎপাদিত কলা এলাকার চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। দোহাজারী ব্রিজ সংলগ্ন শঙ্খ নদীর পাড়ে বেশ কয়েকটি কলার আড়ত রয়েছে। সেখানে কলা ব্যবসা করে অনেকে সংসার চালাচ্ছে। কলা চাষিদের পরিবারে কেবল ভাত কাপড়ের ব্যবস্থাই নয়। পরিবারের অন্যান্য ব্যয়ের সংস্থান হচ্ছে কলা চাষ করে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় উপজেলায় বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কলার চাষ। চন্দনাইশ উপজেলার অর্থকরি ফসল হিসেবে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ কলা। উপজেলার অনেক পরিবার কেবল কলা চাষ করেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানান যায়, অন্য যে কোন ফসলের চেয়ে অনেক বেশি লাভ হয় কলা চাষে। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি এখন কলার চাষও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চন্দনাইশে। ২/৩ ফুট লম্বা চারা কলা গাছ লাগানোর অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। সাধারণত বৈশাখ মাসে কলার চারা রোপণ করলে অগ্রহায়ণ মাস থেকে কলা পাওয়া শুরু হয়। যেসব জমিতে বর্ষার পানি সাধারনত এক সপ্তাহের বেশি থাকে না সে সকল জমিতে কলার চাষ ভাল হয়। কৃষকরা জানান, একবিঘা জমিতে কলার জাত ভেদে ৩’শ থেকে সাড়ে ৩’শ কলার চারা রোপণ করা হয়ে থাকে। যত্ন সহকারে কলা চাষ করলে একটি গাছে বিপুল পরিমাণ কলা পাওয়া যায়। এক বিঘা জমিতে কলা চাষ করতে ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ পড়লেও প্রতি বিঘা জমি থেকে কলা বিক্রি হয় ৯০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। যা অন্য কোন ফসলে সম্ভব নয়। উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রাণী সরকার জানান, চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকাসহ গৃহস্থের বাড়ির আশে পাশেও কলা চাষ হয়। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে কৃষকেরা লাভবান হয়ে থাকে। তবে পাহাড়ি এলাকায় বাগান করে কৃষকেরা কলার চাষ করায় অনেকে লাভবান হয়েছেন। হাশিপুরের কলা চাষি মো. আরিফ বলেন, তিনি এবার ২ বিঘা জমিতে কলার চাষ করেছেন। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় ৭৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়েছে। সোলাইমান বলেছেন, কলা বিক্রিতে কোন ঝামেলা হয় না। খুচরা পাইকাররা জমি থেকেই কলা কেটে নিয়ে যায়। এছাড়াও দোহাজারীতে কলার আড়ত থাকায় কলা কেটে দোহাজারী নিয়ে আড়তে বিক্রি করার সুযোগ রয়েছে। প্রতি কাইন (স্থানীয় নাম ঘাউর) বিক্রি হয় চাপা কলা ১৫০-৩৫০ টাকা, সবরি কলা ৩০০-৫০০ টাকা, বাংলা কলা প্রতি কাইন বিক্রি হচ্ছে ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা। প্রায় ৫ শতাধিক লোক প্রতিদিন কলা কেনা-বেচার সঙ্গে জড়িত থাকেন। প্রায় অর্ধ কোটি টাকার কলা কেনা বেচা হয় বলে জানান স্থানীয় কলা ব্যবসায়ীরা। প্রতিদিন গড়ে ১৪/১৫ ট্রাক কলা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলা শহরের গুলশান চৌ মোড়ে ছোট আকারে পাইকারী কলার হাট বসে। জয়পুরহাটের কলা উন্নত মানের হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ভৈরব, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ ৩৫ জেলায় জয়পুরহাটের কলার বড় মার্কেট বলে জানান ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম, বাবু, তাব্বা ও মিজানুর রহমান। জয়পুরহাট থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৪/১৫ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় বলে জানান, এস এ ট্রেডার্সের মালিক শফিকুল ইসলাম। জয়পুরহাটে উৎপাদিত কলার মধ্যে রয়েছে ওষুধি কলা হিসেবে চিহ্নিত চাম্পা কলা, সবরি কলা, রঙ্গিন মেহের সাগর ও সাগর কলা। বর্তমানে জয়পুরহাটের হাটবাজারে সবরি কলা ১৮ থেকে ২০ টাকা হালি এবং চাম্পা ও সাগর কলা ৮ থেকে ১৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক প্রাপ্ত কৃষিবিদ সেরাজুল ইসলাম বলেন, কলা চাষ বেশ লাভজনক ফসল। জেলার প্রায় ১০ হাজার পরিবার কলা চাষের সঙ্গে জড়িত। কলা চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন বলেও জানান তিনি।