কলহ-সংঘাতই চট্টগ্রাম আ.লীগের বড় দুর্বলতা

105

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কলহ-সংঘাতই বড় দুর্বলতা। বড় দুঃসময় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক শক্তির শিকার হয়েছে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ। এ চট্টগ্রামের কর্মীরা ত্যাগী ও আদর্শবান। কিন্তু চট্টগ্রামে মাঝে মাঝে যখন তুচ্ছ কারণে অবাঞ্ছিত, অপ্রীতিকর ঘটনা হয় তখন মনে বড় কষ্ট লাগে। বড় দুঃখ পাই। সামান্য কারণে একে অন্যের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। চট্টগ্রামে যখন দেখি আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের শত্রু তখন কষ্ট লাগে, দুঃখ পাই।’
গতকাল বুধবার দুপুরে নগরীর একটি কনভেনশন সেন্টারে আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন,‘নেত্রীর শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। যারা অন্তর্কলহ, অপকর্ম করবে, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ভূমি দখল, মাদক ব্যবসা করবে তাদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই। গুটিকয়েক খারাপ লোকের জন্য গোটা আওয়ামী লীগ বদনামের ভাগিদার হবে না। গোটা আওয়ামী লীগের ভালো লোকদের ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘খারাপ আচরণ উন্নয়নকে ম্লান করে দিতে পারে। আমরা পরিবর্তন চাই শিকড়ের সাথে যুক্ত যে পরিবর্তন। সে পরিবর্তন চাই না যেটা আওয়ামী লীগের আদর্শের শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন। ট্র্যাডিশন চাই, সেটা হচ্ছে সিনিয়র জুনিয়রকে স্নেহ করবে, জুনিয়র সিনিয়রকে সম্মান করবে। এখানে আমরা ডিজিটাল চাই না। আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে, সেটাই ট্র্যাডিশন। মানুষের মাঝে থেকেই পরিবর্তনের ধারা এগিয়ে নিতে হবে।
প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বাবু ভাই শুধু ব্যবসা করলে তিনি দেশের এক নম্বর ধনী হতেন। কিন্তু রাজনীতিকে তিনি মানি মেকিং মেশিন করেননি। আজ অনেকে রাজনীতিকে কেনাবেচার পণ্য মনে করে। বাবু ভাই আমাদের নেত্রীর সংকটকালে সবধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন। চট্টগ্রামের রাজনীতির সাথে সমার্থক ছিল দুটি নাম একটি আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও আরেকটি মহিউদ্দিন চৌধুরী। বাবু ভাই মরে গিয়েই মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাবু ভাই বিত্তশালী ছিলেন। কিন্তু অহংকার করতেন না। তিনি সবার কাছের মানুষ। আমরা বাবু ভাইয়ের কর্মী ছিলাম। কোনো মানুষ সাহায্যের জন্য বাবু ভাইয়ের কাছে গিয়ে বিফল হননি। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, চট্টগ্রাম ও দেশের বহু মানুষ বাবু ভাইয়ের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন। বাবু ভাইয়ের হাত সবসময় প্রসারিত ছিল। বাবু ভাইদের কারণেই সমস্ত ষড়যন্ত্র, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ এখনো টিকে আছে।
তিনি বলেন, বিত্তশালী বাবু ভাইয়ের ব্রত ছিল রাজনীতি। আর এখন বিত্তশালীরা রাজনীতিকে অর্থ দিয়ে ক্রয় করার চেষ্টা করছেন। বাবু ভাই তেমন নেতা নন, বিত্তশালী হয়েও অকাতরে দান করেছেন। মন্ত্রীর অফার ফেরত দিয়েছেন। এখন যারা রাজনীতিকে কিনতে চান তারাও বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বড় ছেলে ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, আমার বাবা এখনো আপনাদের মাঝে বেঁচে আছেন। তিনি মরেও অমর। একজন মানুষ মারা যাওয়ার পর মানুষ তা উপলব্ধি করে, আমি সেটি করেছি। আজকের স্মরণসভা তারই বহিঃপ্রকাশ। জীবিত অবস্থায় আমার বাবার নানা কর্মকাÐ, রাজনীতি ও সামাজিকভাবে মানুষের সাথে সুসম্পর্ক ছিল। তিনি নিজেকে ব্যবসায়ীর চেয়ে রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।
শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় আমি যখন লন্ডনে ছিলাম তখন ব্যারিস্টার মনোয়ার চাচার মাধ্যমে আমাকে ডেকে পাঠান বাবু চাচা। সেখানে গিয়ে উনার সাথে দেখা করেছি। উনি আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন আওয়ামী লীগের দুঃসময় কেটে যাবে। তখন কোনোধরনের আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উনার সাথে আমাকে দেখা করতে বলেছিলেন। যখন অনেক নেতাকর্মী দুঃসময়ে সাহস হারিয়ে, নেত্রীর প্রতি আস্থা হারিয়ে ভিন্নপথ খুঁজে নেন তখন বাবু চাচা নেত্রীর প্রতি অবিচল ছিলেন। তিনি বেছে বেছে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা সৃষ্টি করেছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ সালাম, সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাশ, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান প্রমুখ।