কলকাতায় দেখা ভিন্ন কিছু

226

একজন মানুষ যখন সড়কপথে, রেলপথে বা আকাশপথে কলকাতায় প্রবেশ করবে তখন তার স্বাভাবিকভাবে একটু ক্লান্তিবোধ আসবে। আমি কলকাতা ভ্রমণে গিয়ে একটি ভালো চায়ের দোকান খুঁজছিলাম, যেখানে বসে এক কাপ চা খাওয়া যাবে। গাড়ি থেকে নেমে চোখে পড়লো একটি চায়ের দোকান। দেখে বুঝতে পারলাম, সেখানে একটু বিশ্রাম নিয়ে কথাবার্তা বলতে বলতে চা পান করার কোন সুযোগ নাই। কারণ দোকানে বসার জন্য কোন চেয়ার-টেবিল রাখা হয়নি। সবাই দাঁড়িয়ে চা পান করছে। দোকানদার একটি বড় মগের মধ্যে দুধ, চিনি আর চা পাতার রঙ দিয়ে চায়ের পূর্ণ মিশ্রণ তৈরি করছে। এরপর মাটির কাপ ও প্লাষ্টিকের কাপে করে চা পরিবেশন করা হলো।
একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, কলকাতায় চায়ের কাপে যে পরিমাণ চা দেয় তা আমাদের দেশের চায়ের কাপের পরিমাণের অর্ধেক। স্বাদটাও আমাদের দেশীয় চায়ের তুলনায় কম। সেখানকার মানুষের মিতব্যয়ীতার প্রমাণ মিললো এভাবেই। কলকাতায় রাস্তার পাশেই খাবারের দোকান দেখা যায়। সকালে সবাই অফিসে যাওয়ার সময় লুচির সাথে ভাজি, ডাল, সবজি দিয়ে খেয়ে গন্তব্যে ছুটে যায়। অনেককেই দেখা যায়, এক কাপ চা কিনে তা হাতে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। রাস্তার পাশেই মিষ্টি, লাড্ডু, সন্দেশসহ নানান মিষ্টির দোকানও দেখা যায়। এসব মিষ্টির দাম তুলনামূলক কম এবং ভালো। পাঁচ টাকা দিলেই ভালো মিষ্টি পাওয়া যায়। রাস্তার দুইপাশে ফুটপাত জুড়ে শাকসবজি, ফলমূল বিক্রিও চলে। পুরুষ-নারী উভয়ে বিক্রি করছে আর কেউবা কিনছে। কম পরিমাণ সবজি, মাছ-মাংস কিনতে চাইলেও পাওয়া যায়। সেগুলো একটু কেটে দেওয়ার জন্য বললে তাও বিক্রেতা কেটে দেয়।
কলকাতায় কলকাতায় রেল স্টেশনে ট্রেনের পরিমাণ সংখ্যায় অনেক বেশি, ব্যবহারও অত্যধিক। প্রতিটি বাস স্ট্যান্ডের পাশে রেল স্টেশন আছে। নতুন কেউ স্টেশনে গেলে নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চার হবে। সবাই অফিসে যাওয়ার জন্য বা অফিস ছুটি শেষে বাড়িতে ফেরার জন্য নির্দিষ্ট প্লাটফরমে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করেন। কয়েক মিনিট পরপর কোন না কোন প্লাটফরমে ট্রেন আসার শব্দ শোনা যায়। কেউ যদি ভুল করে অন্য প্লাটফরমে গিয়ে দাঁড়ায়, তাহলে গন্তব্যের ট্রেন মিস করবে। এতগুলো ট্রেন আসা-যাওয়া করছে, মনে হবে প্রতিটি স্টেশনেই ট্রেনের মেলা বসেছে। কলকাতায় লোকাল ট্রেনগুলো সবসময় যাত্রীতে ভর্তি থাকে। লোকাল ট্রেনগুলোর মধ্যে তিন থেকে চারটি বগি শুধু নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। প্রতিটি ট্রেনে পানি, সন্দেশ, গজাসহ নানা খাবার হকররা বিক্রি করে। ট্রেনগুলো ব্রডগেজ বিধায় আকারে বড়, তাই অনেক যাত্রী একসাথে ট্রেনে পরিবহন করতে পারে।
কলকাতায় বাসগুলোতে একজন ড্রাইভারের সাথে একজন সহকারী থাকে। বাসের সহকারী যে পরিমাণ টাকা ভাড়া হিসেবে যাত্রীর কাছ থেকে নেয়, সে অংকের টোকেন যাত্রীকে দিয়ে দেয়। প্রতিটি বাসে উঠলেই চোখে পড়বে দেবীর ছবি বা মূর্তি। প্রতিটি বাসস্ট্যান্ড অনেক বড় জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বাসে যে পরিমাণ যাত্রী থাকুক না কেন নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রতিটি বাসে দশ থেকে পনেরটি আসন বয়স্ক, মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। বাকি সিটগুলোতে উভয়েই বসতে পারে। আর সিট খালি না থাকলে নারী-পুরুষ দুজনই নিঃসংকোচে দাঁড়িয়ে থাকে। বাসটি কোন কোন জায়গা দিয়ে যাবে তা বাসের গায়ে লেখা থাকে। বাসের ভেতর বাংলাদেশের মত চিপস্, চিড়াভাজি ও অন্যান্য খাবার বিক্রি করা হয়। লক্ষ্যণীয় যে, কলকাতার বাসে, ট্রেনে ও ফুটপাতে যেসব খাবার বিক্রি করা হয়, তা মানসম্মত ও নিরাপদ। কলকাতায় ভ্রমণে যে কোন বাঙালির বলতে হবে, সবকিছুর মধ্যে নিয়ম-শৃঙ্খলা আছে।