কর্মস্থলে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কী করবেন?

63

বাংলাদেশের সরকারি অফিসগুলোতে কর্মরতরা অনেকেই জানিয়েছেন তারা তাদের বেতনের সাথে চিকিৎসা ভাতা পেয়ে থাকেন তবে অফিসে কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ বা ব্যবস্থা কোনোটাই নেই।
‘হঠাৎ অসুস্থ হলে ছুটি নিয়ে বাসায় বা ডাক্তারের কাছে যেতে পারি। কিংবা বেশি অসুস্থ হলে সহকর্মীরা কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাবেন হয়তো। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে একে অপরকে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সহায়তা কিভাবে করা যায় সেটি শেখার সুযোগই হয়নি।’ বলছিলেন সরকারের একজন উপসচিব।
তিনি বলেন, ‘যেমন ধরুন কারও হৃৎস্পন্দন বন্ধ হলে বা কমে গেলে কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাস সাময়িক কমে গেলে তাকে সিপিআর দিয়ে সহায়তা করা যায় এবং এটা জানা থাকলে যে কেউ করতে পারে সেটা বিদেশে ভিন্ন একটা প্রশিক্ষণের সময় জেনেছিলাম।’
কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন বা সিপিআরকে বলা হয় জীবন রক্ষাকারী একটি কৌশল। হার্ট অ্যাটাক বা বিভিন্ন কারণে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা হলে জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে সিপিআর দেয়াটা বিশ্বজুড়ে প্রচলিত। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিখিয়ে থাকেন কিভাবে সিপিআর দেয়া হয়।
ঢাকার উত্তরায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ করার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে এক নারী কর্মকর্তার মৃত্যুর দৃশ্য সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ওই কর্মকর্তা অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলে সহকর্মীরা তাকে উঠে বসানোর চেষ্টা করলেও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে কেউ এগিয়ে আসেনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই অনেকে লিখছেন যে ওই নারীকে সিপিআর দেয়া সম্ভব হলে তাৎক্ষণিক ভাবে হয়তো তা কাজে দিতো বলে মনে করছেন তারা কারণ সিপিআর দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার আগে ব্যক্তির রক্ত চলাচল ও শ্বাস প্রশ্বাস চালু রাখতে সহায়তা করে।
বেসরকারি ঢাকা ব্যাংকের একটি শাখা ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম বলছেন তাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালের জন্য ব্যাংকের চুক্তি আছে কিন্তু অফিসে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য সেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। আমি কয়েকটি ব্যাংকে কাজ করেছি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি ফার্স্ট এইড বক্সও নেই। আর সহকর্মী বা নিজে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক করণীয় কি হতে পারে সে সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়ার রেওয়াজটাই চোখে পড়েনি।
আর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলছেন ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার কিছু ব্যবস্থা থাকলেও আর কোনো কার্যালয়ে সেটি নেই। শাখা অফিসগুলো অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী কাজ করেন। কিন্তু সেখানে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থাই নেই। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে তাকে কিভাবে সহায়তা করা যাবে বা কোন সমস্যার জন্য প্রাথমিকভাবে করণীয় কি তা শেখানোর কোনো ব্যবস্থাও নেই।
আবার অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একজন নারী কর্মকর্তা বলেন, ওই কার্যালয়ের দুজন চিকিৎসক আছেন যারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকেন। অফিসে কেউ অসুস্থ বোধ করলে তাদের সহায়তার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে ওই দুজন চিকিৎসক কাজ করেন। তবে অফিসে ফার্স্ট এইড বক্স বা প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ চোখে পড়েনি আমার।
ব্যাংকের বাইরেও নানা ধরনের করপোরেট প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে, আছে নানা ধরনের গ্রুপ অব কোম্পানি যাদের প্রধান কার্যালয়গুলো করপোরেট অফিস হিসেবে পরিচিত। তেমনিই একটি প্রতিষ্ঠান এসরোটেক্স গ্রুপ যার প্রধান কার্যালয়ে কাজ করেন দু’শোর বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী।
গ্রুপের প্রধান তামান্না তাহমিনা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কিছু ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা তারা করে থাকেন। আমাদের এখানে সার্বক্ষণিক ডাক্তার নেই তবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা আছে। তবে কেউ একটু বেশি অসুস্থ হয়ে গেলে আমরা নিজেরাই তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।
আবার গ্রামীণ ফোনের মতো বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো অফিসে স্বাস্থ্যসেবার বেশ কিছু পদক্ষেপ আছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার কর্মকর্তারা। নিয়মিত কর্মীদের প্রশিক্ষণ ছাড়াও অফিস ভবনেই ‘মিনি হাসপাতালের’ মতো ব্যবস্থা আছে বলে বলছেন তারা।