কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশের সুবিধা বাড়ানোর দাবি

96

কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারবর্গের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, এ ক্ষেত্রে পুলিশ সদস্যরা বঞ্চিত হচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার নগরীর ছোটপুল এলাকার জেলা পুলিশ লাইন্সে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ উপলক্ষে আয়োজিত সম্মাননা প্রদান ও স্মরণসভায় এ দাবি জানানো হয়। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের উদ্যোগে পুলিশে কর্তব্যরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী সদস্যদের স্মরণে ‘পুলিশ মেমোরিয়াল ডে’ আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, ‘সরকারি অন্যান্য সংস্থার সদস্য যখন মৃত্যুবরণ করে-তারা ফ্ল্যাট বাড়ি পায়, অনুদান পায়, বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। তাহলে কেন পুলিশ সদস্যরা মৃত্যুবরণ করলে সরকার এগিয়ে আসবে না? আমি আহবান করবো, আমাদের জন্য স্পেশাল কিছু করা হোক। আমরা জানবো-কাজ করতে গিয়ে যদি আমরা মৃত্যুবরণ করি, সরকার আমাদের পাশে আছে। তাহলে পুলিশ সদস্যরা আরও দ্বিগুণ মনোবল নিয়ে কাজ করবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা শান্তি-শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটায়, দেশকে পেছনের দিকে ঠেলে নিয়ে যায়, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশকে যেসব শক্তি আবার পেছনে নিতে চায় তাদের আঘাতে যদি আমাদের মৃত্যু হয়, তবে রাষ্ট্র কেন আমাদের স্পেশাল কিছু দিবে না? আশা করি রাষ্ট্র আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করবে।’
তিনি বলেন, ‘মনোবল শক্ত থাকলে কেউ আঘাত করতে পারবে না।

আঘাত করতে আসলে প্রতিঘাত করা হবে। যারা অস্ত্র নিয়ে আসে, আইনের মাধ্যমে অস্ত্র দিয়েই তাদের মোকাবেলা করতে হবে। মাদক ও জঙ্গির বিরুদ্ধে সামনের দিনের লড়াইয়ে আমরা জীবন উৎসর্গ করতে রাজি আছি।’
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক খন্দকার গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘পুলিশ ছাড়া অন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠান যেমন- হাসপাতালের একজন কর্মচারীও যদি কর্তব্যরত অবস্থায় মারা যান তাহলে তার পরিবার ৮ লাখ টাকা পায়। আর পুলিশ মারা গেলে তার পরিবার পায় ৫ লাখ টাকা। আইজিপির মাধ্যমে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা সমতা চেয়েছি। আমরা বলেছি- অন্যান্যরা যদি ৮ লাখ টাকা পায়, আমাদের পাওয়া উচিৎ ১০ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী জানতেন না যে, পুলিশকে এভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে।’
রাজনৈতিক সহিংসতায় পুলিশ সদস্যদের হতাহতের বিষয়টি তুলে ধরে গোলাম ফারুক বলেন, এ ধরনের অবস্থায় কেউ মারা গেলে তাদের সহায়তার পরিমাণটা আরও বেশি দেওয়া দরকার।
পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের সমর্পণ করলে পুলিশ সদস্যদের বিপদে সাধারণ জনতাও পাশে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন ডিআইজি। তিনি বলেন, কর্তব্য পালনে পুলিশ সদস্যদের আরও সচেতন হতে হবে। মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ডিআইজি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনকালে মৃত্যুবরণকারী পুলিশ সদস্যদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি দেশের স্বার্থে আত্মোৎসর্গকারী পুলিশ সদস্যদের অমর হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং জাতি তাদের অবদান চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বলে জানান।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্য সচিব অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, দায়িত্বরত অবস্থায় মারা যাওয়া কনস্টেবল অভি দাশের মা রুমি দাশ।
অনুষ্ঠানে দায়িত্বরত অবস্থায় মারা যাওয়া ১৯ পুলিশ সদস্যের পরিবারের হাতে সম্মাননা ও সহায়তা তুলে দেন অতিথিরা। সম্মাননা পান ২০০৬ সালে মারা যাওয়া উপ-পরিদর্শক (এসআই) দিলীপ কুমার শর্মার পরিবার, ২০০৮ সালে মারা যাওয়া কনস্টেবল বিভু রঞ্জন দত্তের পরিবার, ২০১০ সালে মারা যাওয়া এএসআই মো. শাহেদুল আলমের পরিবার, ২০১৩ সালে মারা যাওয়া কনস্টেবল মো. কাইয়ুম হোসেনের পরিবার, কনস্টেবল মো. নুরুল ইসলামের পরিবার ও এএসআই মো. জাহাঙ্গীর আলমের পরিবার, ২০১৪ সালে মারা যাওয়া এসআই নাছির উদ্দিন শরীফের পরিবার, এটিএসআই মো. জয়নাল আবেদীনের পরিবার, কনস্টেবল আব্দুর রহমানের পরিবার ও কনস্টেবল ইউনুছ মিয়ার পরিবার, ২০১৫ সালে মারা যাওয়া এএসআই মো. জানে আলমের পরিবার, পুলিশ পরিদর্শক মো. ইউনুস সরকারের পরিবার, কনস্টেবল শফি উদ্দিন মিয়ার পরিবার ও কনস্টেবল মো. মোস্তফার পরিবার, ২০১৬ সালে মারা যাওয়া এএসআই রূপন চন্দ্র নাথের পরিবার, কনস্টেবল মো. মহিউদ্দিনের পরিবার ও কনস্টেবল পূর্ণয় বড়ুয়ার পরিবার, ২০১৭ সালে মারা যাওয়া কনস্টেবল মো. আরব আলীর পরিবার ও কনস্টেবল অভি দাশের পরিবার।
অনুষ্ঠানে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ডিআইজি কুসুম দেওয়ান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল ফয়েজসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।