কর্ণফুলী টানেলের সংযোগ সড়ক হবে চার লেন

325

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) প্রায় ১৩ হাজার ৬৩৯ কোটি ১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে নির্মাণাধীন কর্ণফুলী টানেলের সংযোগ সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পও রয়েছে। সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া ১০ শীর্ষ প্রকল্পের অন্যতম হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। তবে এর সংযোগ সড়ক পৃথক প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ‘আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ (শিকলবাহা-আনোয়ারা সড়ক)’ প্রকল্পটির জন্য একনেক সভায় ৪০৭ কোটি ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
এম এ মান্নান জানান, একনেকে অনুমোদিত ৯ প্রকল্পের সবগুলোই নতুন প্রকল্প। মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো প্রকল্পের খরচ হবে ৬ হাজার ১৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ হিসেবে ভারতীয় ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৪৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অধিক সংখ্যক জাহাজ বার্থিংয়ের মাধ্যমে কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে এবং নতুন নতুন পণ্য আমদানি রপ্তানির দ্বার উন্মোচন হবে। এর পাশাপাশি ভারত, নেপাল ও ভুটানে ট্রানজিট সুবিধা চালু হলে বন্দর ব্যবহারের ব্যাপক চাহিদাও সৃষ্টি হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরে অতিরিক্ত ১৫ মিলিয়ন টন কার্গো ও ৪ লাখ টিইইউ কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের আওতায় সব ধরনের সুবিধাসহ ১ নম্বর জেটি এবং ২ নম্বর কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মিত হবে। সব ধরনের সুবিধা সম্বলিত কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ইয়ার্ড ও কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণ হবে। এছাড়া সিকিউরিটি সিস্টেম, রাস্তা, ইয়ার্ড, শেড, নিরাপত্তা প্রাচীর, অটোমেশন ও অন্যান্য অবকাঠামোসহ বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা সম্প্রসারণ করা হবে।
এর পাশাপাশি সকল সুবিধাসহ সার্ভিস ভেসেল জেটি, শেড, এমপিএ টাওয়ার, পোর্ট রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স, মেকানিক্যাল ওয়ার্কসপ, সরঞ্জাম ইয়ার্ড, সরঞ্জাম শেড এবং সকল যন্ত্রপাতিসহ পুল নির্মাণ করা হবে।
জানুয়ারি ২০২০ থেকে জুন ২০২৪ সাল মেয়াদে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেখানে ব্রিজ নির্মাণ করা হবে, সেখানে যেন আপদকালীন সময়ে দ্রæত নৌ-চলাচল ব্যবস্থা থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বন্দরসহ দেশের যেসব স্থান দিয়ে মালামাল পরিবহন করা হয় সেখানে স্ক্যানার মেশিন বসাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ সুরক্ষায় সড়ক ও মহাসড়কের পাশ দিয়ে পর্যাপ্ত গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো- নোয়াখালী জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী কামাল উদ্দীন সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮২ কোটি ১১ লাখ টাকা। শরীয়তপুর-জাজিরা-নাওডোবা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় হবে ১ হাজার ৬৮২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। পাটুরিয়া এবং দৌলতদিয়ায় আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নদী বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পের ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এছাড়া রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর বাম তীরের স্থাপনাসমূহ নদী ভাঙ্গন হতে রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৭২২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। বিলুপ্ত ছিটমহল ও নদী বিধৌত চরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, এর খরচ ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। হাওরাঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প, এর খরচ হবে কোটি ১৩ লাখ টাকা। রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় হবে ২ হাজার ৯৩১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
সভায় অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজি’র মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।