কর্ণফুলীর পাড়ের সর্বোচ্চ দখলদার বাস্তুহারা জসিম

204

পূর্ব বাকলিয়ায় কর্ণফুলীর পাড়ের বাস্তুহারা সমবায় সমিতি। এই সমিতিকে সামনে রেখে নিজের ভাগ্য বদল করেছেন জসিম উদ্দিন। সমিতির সভাপতি হয়ে দখলে নিয়েছেন ২০৩টি স্থাপনা। গড়ে তুলেছেন পাকা-সেমিপাকা বসতঘর ও দোকান। দখলীয় জমির পরিমাণ প্রায় ৪০ একর। জেলা প্রশাসনের তৈরি করা কর্ণফুলী পাড়ের দখলদারের তালিকায় দুই নম্বর নামটিই জসিম উদ্দিনের। একে একে তালিকার ২৪ পাতা জুড়েই আছে একটি নাম। তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, কর্ণফুলী পাড়ের সর্বোচ্চ দখলদার এখন জসিম।
স্থানীয়রা বলেছেন, দখল তালিকায় জসিমের নাম আসার পর থেকে তার আধিপত্য কমতে থাকে। বাস্তুহারায় নতুন কমিটি আসার পর থেকে জসিম কিছুটা বেকায়দায়। তবে তার সা¤্রাজ্য বহাল আছে। নামে-বেনামে প্রচুর জায়গা দখলে রেখেছে জসিম। ফিরিঙ্গিবাজারে আছে তার আলিশান বাড়ি। জসিম একাধারে বড় ভবনের জমিদার আবার বাস্তুহারায় গড়ে তোলা সাম্রাজ্যেরও জমিদার।
জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘কোথায় কি পরিমাণ অবৈধ দখলদার আছে, কারা দখলে রেখেছে তা পৃথকভাবে বলা মুশকিল। তালিকায় সকলের নাম আছে। তাছাড়া কর্ণফুলীর দখলদার উচ্ছেদের বিষয়টি এখন দেখভাল করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।’
তালিকায় দেখা যায়, দখলদার হিসেবে নিজের নাম যেমন আছে তেমনি অন্যকে ভাড়া দিয়ে মূল দখলদারের ভূমিকায় আছেন জসিম। সেখানে নির্মিত বসতঘর ও দোকানঘরগুলো ফজলুল হক, গিয়াস উদ্দিন, বাবুল খান, লায়লা বেগম, অলি উল্লাহ, মোস্তফা, নুরুল আলম, শাহিন, খোকন মিয়া, উজ্জল চৌধুরী, ফাতেমা, জামাল, কাজল মাঝি, ইব্রাহিম, বিউটি বেগম, মোতালেব, রফিক, আবু তাহের, মজিবুল হোসেন, রনদা সাহা, মো. কাবিল, মানিক বাবু, এমরুল গং, মুসা আনসারী, মো. ইসমাইল, হাজী সালাম, হারুন মাঝি, রফিক, প্রদীপ কুমার, গোপাল দাস, জিয়াউর রহমান, আব্দুল শুক্কুর, ইসমাইল, মো. রাসেল, সামসু মিয়া, পারভীন আক্তার, জেবল হোসেন, হাছিনা বেগম, আইয়ুব, সাবের হোসেন, মো. দেলোয়ার, এসআই ফারুক, মো. ফারুক হোসেন, আবদুচ ছোবহান, তারা মিয়া, সৈয়দ নুর, জসিম উদ্দিন, অমূল্য নাথ, আমিন সাহেব, কর্ণ মোহন শীল, শিল্পী শীল, আবদুল হাকিম, নৃপতি ঘোষ, সত্যজিৎ দে, খতিজা বেগম, আবুল কাসেম, লোকমান, সানোয়ার, আনোয়ার, জুলফি, আবু তাহের, ইউছুপ কন্ট্রাকটর, আবুল কালাম, করিম সওদাগর, মুন্সী মিয়া, জানে আলম, নুর আহমদ, আবদুল মন্নান সওদাগর, জাহাঙ্গীর, নুর জামাল, কালু মিয়া, আয়েশা খাতুনসহ কমপক্ষে শতাধিক ভাড়াটিয়া থাকলেও মূল দখলদার হিসেবে আছেন জসিম।
নুর মোহাম্মদ নামে একজন ভাড়াটিয়া বলেন, ‘জসিম এখানে স্কুল, মন্দির, মসজিদ গড়ে তুলেছেন। পাকা-সেমিপাকা ঘর তুলে অন্যজনকে ভাড়া দিয়েছেন। এখন বাস্তুহারায় জসিম কম আসলেও তার হয়ে কেউ না কেউ ভাড়া তুলে নিয়ে যায়। বাস্তুহারা সভাপতি হয়ে অনেক জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিলেও কিছু জায়গা নিজের নামেও কিনেছেন। অনেক টাকার মালিক জসিম।’
পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম পূর্বদেশকে বলেন, ‘জসিম একজন রোহিঙ্গা। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বাস্তুহারা সমিতির নামে জসিম কর্ণফুলীর পাড়ে রামরাজত্ব চালিয়েছে। ফিরিঙ্গিবাজারে ছয়তলা ভবন আছে তার। এয়াকুবনগরে জায়গা আছে। বাস্তুহারা এলাকাটি রোহিঙ্গাদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বাস্তুহারায় থাকা তার এক শ্যালিকা সেখানে নির্মিতব্য দোকান ও ঘর থেকে ভাড়া তুলে।’
জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট নদ-নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও প্রকাশিত তালিকা অনুসারে উচ্ছেদ কার্যক্রম (ক্রাশ প্রোগ্রাম) পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। সে হিসেবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর তালিকা প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন। তালিকায় ১৭৪০ দখলদারের নাম উল্লেখ আছে। বিভিন্ন ভূমি অফিসের কানুনগো, সাভের্য়ার ও ভূমি সহকারী কর্মকর্তারা এ তালিকা তৈরি করেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। উচ্ছেদকালে কিছু জমি উদ্ধার করা হয়। পরে বন্দরের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি পরিকল্পনার কারণে মাঝপথেই উচ্ছেদ অভিযান থেমে যায়। এর আগে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।