কর্ণফুলীতে ভুয়া বৈদ্যের অভিনব প্রতারণা

89


জ্বিন চালান দিয়ে মাটির নিচ থেকে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের দুটি স্বর্ণের কলস তুলেছে বৈদ্য। তবে তার দাবি মতো অতিরিক্ত এক লাখ টাকা না দেয়ায় এসব কলস এবং এর ভেতরে থাকা স্বর্ণ তামা ও মাটি হয়ে গেছে। এরই মাঝে এসব কলস তুলে দেয়ার বিনিময়ে এক মহিলার কাছ থেকে ঐ বৈদ্য নিয়ে গেছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এমন প্রতারণার বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল বুধবার কর্ণফুলী থানাধীন বড়উঠান ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ দৌলতপুর গ্রামের ভূট্টেইয়ার কলোনি থেকে সিরাজুল ইসলাম প্রকাশ রানা বৈদ্যকে আটক করে জনতা। এরপর উত্তম মাধ্যম দিয়ে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। রানা বৈদ্য মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালীর ফকিরপাড়াস্থ সৈয়দ চেয়ারম্যান বাড়ির বাসিন্দা মৃত কবির হোসেনের পুত্র।
স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল হক জানান, কয়েক মাস আগে ওই কলোনিতে বাসা ভাড়া নেয় ভুয়া বৈদ্য সিরাজুল ইসলাম। এরপর সে ‘আমার মায়ের আসন’ নামের একটি বৈদ্যখানা গড়ে তোলে। সেখানে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন এবং নানা অজুহাতে প্রতারণা করে সে টাকা হাতিয়ে নিতো। সর্বশেষ গত দুই মাস আগে আনোয়ারা উপজেলার বোয়ালীয়া এলাকা থেকে এক মহিলা আসেন শ্বাশুড়ির সাথে বিবাদ আর মতের অমিলের বিষয়ে তার কাছে প্রতিকারের জন্য। এ সময় হাজিরার আসন বসিয়ে তিনি মহিলাকে জানায়, তার বাড়ির উঠানে দুটি স্বর্ণের কলস রয়েছে। এ দুটি কলস যতক্ষণ তুলে আনা না হবে ততক্ষণ বিবাদ লেগে থাকবে। এছাড়া এসব স্বর্ণের কলস তুলে বিক্রি করলে তাদের পরিবারও কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে। ওই মহিলা বৈদ্যের এ কথা বিশ্বাস করে এসব স্বর্ণের কলস তুলতে রাজি হন। রানা বৈদ্য জ্বিন চালানের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করে। এরপর কয়েকবার জ্বিন চালান দিয়ে স্বর্ণের কলসের অবস্থান নিশ্চিত করে। কয়েকদিন আগে গভীর রাতে বাড়ির আশপাশ থেকে দুটি কলস (একটি পিতলের, অপরটি মাটির) তুলে আনে। কাপড়ে মোড়ানো এসব কলস বাড়ির মালিককে খুলে দেখতে না দিয়ে ঘরের অতি গোপনীয় স্থানে লুকিয়ে রাখতে বলে এবং আরো এক লাখ টাকা দাবি করে। ওই মহিলাকে বলা হয়, এক লাখ টাকা না দিয়ে কাপড় খোলা হলে এসব কলস ও তাতে রক্ষিত স্বর্ণ পিতল, পাথর ও মাটি হয়ে যাবে। তার কথামতো ওই মহিলা এসব কলস লুকিয়ে রেখে অবশিষ্ট এক লাখ টাকা জোগাড় করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। বিষয়টি তার আত্মীয় স্বজনদের নজরে এলে তারা কারণ জানতে চান। অনেক পিড়াপীড়ির পর ওই মহিলা বিষয়টি স্বজনদের খুলে বলে। তার স্বজনরা ঘরের গোপনীয় স্থান থেকে কলস দুটি বের করে দেখতে পান একটি তামার তৈরি আর অন্যটি মাটির। এসব কলসের মধ্যে রয়েছে পাথরকনা। মহিলার স্বজনরা গতকাল বুধবার প্রতারক এ বৈদ্যকে বড়উঠানস্থ দৌলতপুরের ওই কলোনি থেকে সকালে খুঁজে বের করে এর কারণ জানতে চান। এ সময় রানা বৈদ্য বলে এক লাখ টাকা না দিয়ে কাপড় খোলায় এসব কলস মাটি, পাথর আর তামা হয়ে গেছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে লোকজন তাকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে কর্ণফুলী থানাধীন শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রতারক বৈদ্য আটকের কথা স্বীকার করে শাহমীরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ নাছির গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় জানান, প্রতারক বৈদ্যকে আটক করে রাখা হয়েছে। তবে এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। প্রতারণার শিকার মহিলার স্বজনরা তাদের টাকা ফেরত দেয়ার বিনিময়ে প্রতারক বৈদ্যকে ছাড়িয়ে নিতে চাইছেন।
পুলিশ হেফাজতে থাকা রানা বৈদ্য জানান, তার কাছে দুই মাস আগে প্যারালাইসিস রোগ নিয়ে এক ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য আসেন। তিনি ওই রোগীর চিকিৎসা করেছেন। স্বর্ণের কলসের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এরপরও তাকে আটক করে লোকজন মারধর করে পুলিশে দিয়েছে।