কর্ণফুলীতে ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যা মামলার চার্জশিট প্রদান

54

কর্ণফুলী উপজেলায় রাতে ছাত্রলীগ নেতা মামুনুর রশিদ মামুনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় আদালতে চার্জশিট প্রদান করেছে কর্ণফুলী থানা পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কর্ণফুলী থানার সাবেক ওসি (তদন্ত) হাসান ইমাম কর্তৃক প্রদত্ত চার্জশিটে বলা হয় এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য সুমন এবং ছোট ভাই শাহনুরকে থাপ্পড়ের প্রতিশোধ নিতে পারভেজ কর্তৃক মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। মামুনকে হত্যার মাধ্যমে আশরাফুল আলম সুমন রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের জন্য বাঁধা অপসারণ এবং পারভেজ তার ছোট ভাই শাহনুরকে চড়-থাপ্পড় দেয়ার প্রতিশোধ নেয়। সুমন ও পারভেজের পরিকল্পনা মোতাবেক মামুন হত্যাকান্ড অংশ নেয় আজম, ওমর, আজগর, আশিক ও শাহানুরসহ ৫ জন। পরিকল্পনায় আশরাফুল আলম সুমন ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া ৫ জনকে নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং সব ধরণের আইনী মোকাবেলা ও কারাগার থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুত দেয় বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। পরিকল্পনাকারী আশরাফুল আলম সুমন নিহত মামুনের সম্পর্কে চাচাত ভাই। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাত ৭টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার ৬নং ওয়ার্ডস্থ শাহমীরপুর এলাকায় বাড়ির সম্মুখস্ত রাস্তার মাথায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় মামুনকে। এ ঘটনায় আবদুল আজিজ (২৪) নামের আরো এক ছাত্রলীগ নেতা গুরুতর আহত হয়। ঘটনার পর দু’ছাত্রলীগ নেতাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতলে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার একজনকে মৃত ঘোষণা করে। এরপর নিহতের ভাই মোহাম্মদ ইয়াছিন বাদি হয়ে কর্ণফুলী থানায় একটি হত্যা মামলা করে।
কর্ণফুলী থানার ওসি (তদন্ত) হাসান ইমাম মামলাটি তদন্ত শেষে চার্জশিট প্রদান করেন। মামলার চার্জশিটে বলা হয়, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপজেলার শিকলবাহা ক্রসিং সংলগ্ন এস আর স্কয়ারের সম্মুখে একটি সভা করেন। ওই সভায় আজম, ওমর, আজগর, আশিক ও শাহানুর নিহত ছাত্রলীগ নেতা মামুনের পরিবর্তে সুমনের সাথে সভায় যোগ দেন। তাতে ক্ষিপ্ত হন মামুন। এ কারণে ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে মামুন তার প্রতিবেশী আশিক ও শাহনুরকে চড়খাপ্পড় দেয়। এদিকে ওনদিন সকালে ওমর এবং আজগর নগরীর নিউ মার্কেটস্থ একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ক্লাসে অংশ অংশ নেয়। সেখানে বেলা ১১টায় ওমরকে ফোন করে আশরাফুল আলম সুমন চকবাজার এলাকায় যাওয়ার জন্য বলে। তাদের কথা মতো ওমর এবং আজগর চকবাজার এলাকায় গিয়ে সুমন ও পারভেজের সাথে দেখা করে। সেখানে ৪জন মিলে মামুনকে হত্যার শলা পরামর্শ করে। সে সময় ওমর ও আজগরকে সুমন বলে আমি একজন উকিল। আমার কাছে যথেষ্ট টাকা পয়সা আছে। তোমরা মামুনকে মারো। তোমাদের কিছু হলে কোর্টকাচারী আমি দেখব। আর প্রাথমিক খরচের জন্য ৫০ হাজার টাকা সন্ধ্যায় বাড়িতে এসে দেব। চরবাজারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওইদিন বিকালে মামুনের বাড়ির কাছাকাছি তালতলা নামক স্থানে এসে সকলে জড়ো হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক অন্যরাও ওমর এবং আজগরের সাথে হত্যায় অংশ নিতে রাজি হয়। এরপর তারা অস্তসস্ত্র নিয়ে আসে। আসরের নামাজের সময় থেকে নিজের বাড়ির ছাদের উপর থেকে পরিকল্পনাকারী সুমন (নিহত মামুনের চাচাত ভাই) ছাত্রলীগ নেতা মামুনের গতিবিধির উপর নজর রাখে। সন্ধ্যার পর মামুন ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির সম্মুখে রাস্তার মাথায় এসে তার বন্ধু আজিজের সাথে আড্ডা দেয়। বিষয়টি ফোনে চাচাত ভাই সুমন ওই ওমরকে ফোন করে জানায়। এরপর ৫জন মিলে রাস্তার মাথায় এসে মামুনকে হত্যা করে। চার্জশিটে বলা হয়, নিহত ছাত্রলীগ নেতা মামুনের চাচাত ভাই আশরাফুল আলম সুমন রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে চাইত। কিন্তু মামুন বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ায় সুমনসহ অন্য আসামিরা তাকে পছন্দ করত না। এ কারণে প্রায়শ বিবাদ হতো। মামুনের কারণে সুমন এলাকায় নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে পারতো না।
এ কারণে আশিক ও শাহনুরকে চড়থপ্পড় দেয়ার আজুহাতে মামুনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ঘটনার দিন সুমন ওমরের সাথে ফোনে ৮ বার কথা বলে। মামুনকে হত্যায় প্রথমে আজগর তার হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কোপ দেয়। এ সময় মামুনের সাথে থাকা আজিজ প্রতিবাদ করলে তাকে আসামি ওমর তার পায়ে একটি কোপ দেয়। এরপর আজম রাম দা দিয়ে মামুনের হাতে কোপ দেয় এবং হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। শাহনুর কিরিচ দিয়ে মামুনকে এলোপাথারি কোপায়। বিষয়টি আচ করতে পেরে লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে আসামিরা পালিয়ে যায়। আসামি সুমন ও পারভেজ হত্যাকান্ডের মুল হোতা হিসেবে কাজ করে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়। কর্ণফুলী থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর জানান, এজাহার নামীয় ৫ আসামির মধ্যে চারজনকে পুলিশ আটক করে। কিন্তু একজন পলাতক রয়েছে। গত ১১ মার্চ প্রদত্ত চার্জশিটে এজাহারের বাইরে আরো দুই জনকে চার্জশিটভূক্ত আসামি করা হয়। এরা হলেন পরিকল্পনাকারী আশরাফুল আলম সুমন এবং পারভেজ। এরা মামুন হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী।