করোনা ভাইরাস-সতর্কতা জরুরি

556

সাম্প্রতিক মধ্য চীনের উহান প্রদেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে ৮৩ জন মানুষের মৃত্যু ঘটায় চীনসহ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নড়েচড়ে বসেছে। এসংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আশংকা প্রকাশ করছেন। তাছাড়া এখনও পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এই ভাাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ইতিমধ্যে পৃথিবীর আরো বেশ কয়েকটি দেশে দেখা দিয়েছে। যদিও এ রোগে বাংলাদেশে কেউ আক্রান্ত হওয়ার খবর এখনও পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এই রোগটির প্রতিষেধকই খুঁজে পাচ্ছেনা। কারণ এই রোগটির লক্ষণ নিউমোনিয়ার মতো হলেও কোনো ওষুধই কাজ করছেনা, ফলে এই ভাইরাস নিয়ে ইতিমধ্যে চীনসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশে হৈচৈ শুরু হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে চীনের উহান প্রদেশে গত ১১ জানুয়ারি একজন মানুষের প্রথমে শ্বাসকষ্ট তারপর সর্দি – কাশি হওয়ার পর চিকিৎসকগণ স্বাভাবিক নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করে লোকটিকে বাঁচাতে না পারায় তাদের মধ্যো প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল এরোগ আদৌ নিউমোনিয়া কীনা, কিন্তু পরবর্তীতে এরোগে উক্ত প্রদেশে আরো ১৬জনের মৃত্যু হলে চীনসহ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নড়েচড়ে বসে এবং এই ভাইরাসকে সনাক্ত করে। সনাক্তে দেখা যায় এটি নিউমোনিয়া নয় এটি ‘করোনা’ নামক একটি ভাইরাস যার সংক্রামণে মানুষ দ্রুতই মৃত্যুর দিকে ধাপিতো হতে পারে। এরোগের পুরো লক্ষণ দেখা দিতে সাধারণত ৫ দিন লাগে বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন। এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর প্রথমে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় তারপর জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা যায় এবং রোগি একসময় শ্বাস নিতে নাপেরে মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। অর্থাৎ এই ভাইরাস সরাসরি মানুষের ফুসফুসকে প্রথমে আক্রান্ত করে তার শ্বাসনালীকে অকার্যকর করে দিয়ে মানুষের শারীরকে পুরোপুরি অকেজো করে দেয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ভাইরাস মানুষের হাঁচি এবং কাশির মাধ্যমে অন্য মানুষের শরিরে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই চীনের উহান প্রদেশসহ যে সকল দেশ কিংবা অঞ্চলে এই ভাইরাসটি দেখা গেছে সে সমস্ত অঞ্চলের সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা অনুরোধ করেছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মধ্য চীনের উহান প্রদেশের সামুদ্রিক একটি খাবার থেকে এই ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে আশংকা করছেন। উহান প্রদেশের এক সামুদ্রিক বাজারে এক ধরনের মাছ পাওয়া যায় যা স্থানীয় চীনারা রান্না করে খায়। এই মাছটি হচ্ছে ‘বেলুগা’ জাতীয় তিমি এই তিমি মাছই সাধারণত করোনা ভাইরাস বহন করে। প্রাণি থেকে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ অবশ্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও ইঁদুর থেকে প্লাগ, বাদুড় থেকে নিপাহ ইত্যাদি ভাইরাস রোগ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং ব্যাপক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। তবে পরবর্তীতে এসব রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হলে মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলেন-এই ভাইরাসটি সহজে ধ্বংস না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে “ ভাইরাসটি হয়তো ইতিমধ্যে মানুষের দেহকোষের ভেতরে প্রবেশ করে তার গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ ধারণ করেছে। তাই কোন ওষুধই কাজ হচ্ছেনা। বরং এটি দিনদিন ভয়ংকর হয়ে ওঠছে। ইতিমধ্যে এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, নেপাল, কানাডা, জাপান, দ. কোরিয়া, ভিয়েতনাম এবং যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা দিয়েছে। সেসব দেশেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। যেকোনো সময় এই ভাইরাসটি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে চলে আসতে পারে। তাছাড়া নেপালে এই ভাইরাসটি ঢুকে পড়ায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে রেট এলার্ট জারি করা হয়েছে। নেপাল, চীন, ভারত এবং পাকিস্তান একেবারে নিকটবর্তি দেশ আর এসব দেশে এই ভাইরাস ঢুকে পড়লে আমাদের দেশে ঢুকে পড়বে। তাছাড়া ভাইরাসটি যেহেতু মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় সেহেতু সীমান্তবর্তী সকল বর্ডারে এখন থেকেই নজরদারি বাড়ানো উচিৎ। বাইরের দেশ থেকে যাত্রী আসলে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো বাঞ্ছনীয়। কারণ একবার কোনো বিদেশি যাত্রীর মাধ্যমে এই ভাইরাস ঢুকে পড়লে আমাদের হয়তো কঠিন মূল্য দিতে হতে পারে। তাছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের পরামর্শ অনুযায়ী এই মুহূর্তে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে দেশের সবাইকে মাস্ক ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।আর এই ভাইরাসের লক্ষণ কোনো এলাকায় দেখা দিলে তা চেপে না রেখে সরাসরি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নজরে আনা জরুরি।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই ভাইরাস যেহেতু ছোঁয়াচে সেহেতু এটি প্রতিরক্ষার দায়িত্বও আমাদের নিজেদের। আমরা সবাই যদি একটু সচেতন এবং সতর্ক হই সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকি, বাইর থেকে এসে হাত মুখ পরিষ্কার করি ও বাইরে মুখে মাস্ক ব্যবহার করি তাহলে এই ভাইরাস থেকে আমরা অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবো। এর বাইরে সরকারের উচিত, এ বিষয়ে জনগণকে আগেভাগেই সতর্ক করা। প্রয়োজনে প্রচার মাধ্যমে ঘনঘন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিজ্ঞাপন প্রচার করা। দেশের প্রান্তিক মানুষদের এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সমাজকর্মীদেরও কাজে লাগানো যেতে পারে। আমরা প্রত্যাশা করবো সরকার এমন একটা জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আগেভাগেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখবেন।

লেখক : কলেজ শিক্ষক, প্রাবন্ধিক