করোনা ভাইরাস : মুক্তির উপায়

40

অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি

করোনা ভাইরাস মানুষের কর্মের ফল:
যখনই কোন জাতি গোষ্টি ও সম্প্রদায়ে ব্যাভিচার, যৌনাচার ও অশ্লীলতার বিস্তার ঘটে তখন আল্লাহ তা’য়ালা তাদের মধ্যে ভয়ঙ্কর মহামারী রোগ প্রেরণ করে শাস্তি দেন। এতে কোন সন্দেহ নেই মহান আল্লাহ আমাদের উপর নারাজ হয়েছেন। এ কারণেই বিশ্বব্যাপী মানব সভ্যতা আজ ধ্বংশের দ্বার প্রান্তে। গোটা বিশ্ব আজ আক্রান্ত। মানবতা আজ বিপর্যস্ত। এ অবস্থা ধৈর্যশীল মু’মীনদের জন্য কঠিন ঈমানী পরীক্ষা। এ ভয়াবহ ক্রান্তিকাল ও দুযোর্গ থেকে রক্ষা পেতে মহান রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত ও প্রিয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রদর্শিত পথে ফিরে আসতে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে অনুতপ্ত ও পাপমুক্তির ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, “মানুষের কৃতকর্র্মের দরুণ জলে স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে যার ফলে তাদের কোন কোন কৃতকর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে।” (সুরা: রূম, আয়াত: ৪১)
আল্লাহর উপর ভরসা ও সাহায্য প্রার্থনা :
রোগ-ব্যাধি, মহামারী, দুর্ভিক্ষ, অভাব, অনটন, ধনসম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি প্রাণহানি ও বড় বড় দুর্ঘটনা, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ¡াস, টর্নেডো, আইলা, সিডর, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ইত্যাদি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকার আযাব যা মুমীনদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। আযাব যতই কঠিন হোক, বিস্তৃত হোক, বিপদ যতই ভয়াবহ হোক, মু’মিন আল্লাহর উপর ভরসা রেখে বিপদ মুকাবিলা করবে। আল্লাহকে ও তদীয় রাসূলকে স্মরণ করবে। বিপদ থেকে মুক্তি পেতে তাওবা এস্তেগফার করবে, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে, নবীজির উপর বেশী বেশী দরুদ শরীফ পাঠ করবে। আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, “আমি তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা অবশ্য পরীক্ষা করব। সুসংবাদ দিন ধৈর্য্যশীলদেরকে।” (সূরা: বাক্বারা, আয়াত: ১৫৫)
অতীতে সীমা লংঘণকারী বহুজাতিকে আল্লাহ ধ্বংস করেছে:
মহান আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত নবী রাসূলগণের বিধি-নিষেধ অমান্য করার কারণে অতীতে আল্লাহ বহুজাতি ও অনেক জনপদ ধ্বংশ করে দিয়েছে। এরশাদ হয়েছে, “কত জনপদ তাদের প্রতিপালক ও রাসূলগণের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল দম্ভভরে, ফলে আমি তাদের নিকট থেকে কঠোর হিসাব নিয়ে ছিলাম এবং তাদেরকে দিয়েছিলাম কঠিন শাস্তি। (সূরা: তালাক, আয়াত : ৮)
মুছিবত আল্লাহর নির্দেশেই আসে তিনিই রক্ষাকারী:
করোনা ভাইরাস একটি মুসিবত। মহান আল্লাহ এই মুসিবত প্রথমে চীন দেশে প্রেরণ করে। অত:পর গোটা বিশে^ তা ছড়িয়ে পড়ে। তা থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকদের নির্দেশনা ও পরামর্শ মেনে চলতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সরকারের প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রচারিত সতর্ক বার্তাগুলো মেনে চলতে হবে। এমন সতর্কতা কাম্য নয় যা আল্লাহর স্মরণ থেকে মানুষকে বিরত রাখবে। মৃত্যু একদিন অনিবার্য চিরন্তন। এ বাস্তবতাকে অস্বীকারের সুযোগ নেই। যতদিন বেচে থাকব জীবন মৃত্যুর মালিক আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর ইবাদত থেকে বিমুখ হব না। মহান আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন, “আল্লাহর অনুমতি ব্যাতিরেকে কোন বিপদই আপতিত হয় না। এবং যে আল্লাহকে বিশ^াস করে তিনি তার অন্তরকে সুপথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত। (সূরা: তাগাবুন, আয়াত: ১০)
বিপদে ধৈর্যধারণ মু’মীনের চরিত্র:
বিপদের ভয়াবহতা যতই মারাত্মক হোক মু’মিন আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সতর্কতার পাশাপাশি চরম ধৈর্য্যরে পরাকাষ্টা প্রদর্শন করবে। আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেন,“ যারা তাদের উপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরাতো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তারই প্রতি প্রত্যাবর্তনকারী।” (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৬)
মহামারী রোগ বিস্তার সম্পর্কে নবীজির সতর্কতা:
করোনা ভাইরাস একটি মহামারী রোগ। এ রোগের বিস্তার যাতে ছড়িয়ে না পড়ে নবীজি সকল প্রকার সতর্কতার নির্দেশ করেছেন। হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা:) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যদি তোমরা শুনতে পাও কোন জনপদে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে তখন তোমরা সেখানে প্রবেশ করবেনা। আর যদি তোমরা সে জনপদে অবস্থান করে থাক তাহলে পলায়ন করে সেখান থেকে বের হবে না। (সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস নং: ৫৭২৯)
মু’মীনের করনীয় হলো সকল প্রকার সতর্কতা অবলম্বন করা, স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা মেনে চলা সতর্কতার পরও আক্রান্ত হয়ে পড়লে আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হবেন না। আল্লাহর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মধ্যে রয়েছে মু’মীনের সাফল্য।
অসুস্থ হওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন:
হযরত ওমর ইবনে মায়মুন আল আওদী (রা:) থেকে বণির্ত, প্রিয়নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপদেশ দিতে গিয়ে এরশাদ করেছেন, পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের আগে গনীমত মনে কর। বার্ধ্যকের আগে যৌবন কালকে, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে, দরিদ্র হওয়ার আগে স্বচ্ছলতাকে, ব্যস্থতার আগে অবসর সময়কে, মরণের আগে জীবনকে।” (কানযুল উম্মাল, খন্ড: ১৫, পৃ: ১৬৩১, হাদীস নং: ৪৩৪৯)
বর্ণিত পাঁচটি জিনিস অস্থায়ী। এক সময় সবটিই শেষ হয়ে যাবে, যৌবনের পর বার্ধক্য আসবে বার্ধক্যের পর মৃত্য অনিবার্য। মৃত্যু থেকে পালাবার কোন পথ নেই। যৌবন মানে শক্তি, সাহস, সুতরাং যৌবনকালকে গণীমত মনে করুন, তার সঠিক ব্যবহার করুন।
সুস্থতা-অসুস্থতা:
কে কখন অসুস্থ হয়ে পড়বে কারো জানা নেই, রোগ-ব্যাধি সবার জন্য অবধারিত, অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে গনীমত মনে করুন, সতর্ক হোন সচেতন হোন অন্যকে সচেতন করুন।
চিকিৎসা করা সুন্নাত:
স্বাস্থ্য সচেতনতা সম্বন্ধে ইসলামের রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা। শরীর ও মন সুস্থ থাকার নামই স্বাস্থ্য। সুস্থ মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখী। অসুস্থ মানুষ নিজের ও পরিবারের জন্য বোঝা স্বরূপ। অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা করার চেয়ে সুস্থ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিধি পালন করা উত্তম। সুস্থতা আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধি-বিধান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই মানুষকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কোন নিয়ামত দান করা হয়নি (সুনানে নাসাঈ)
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়মিত হাত ধৌত করুন:
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের প্রথম নির্দেশনা হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। আমাদের চারদিকে অসংখ্য রোগ জীবানু ছড়িয়ে আছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য হাত মুখ পা তথা সমগ্র শরীরকে এসব রোগ জীবানু থেকে বাঁচিয়ে রাখার অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। এ জন্য ইসলামের মৌলিক বিধান নামায আদায়ে অযু করাকে অপরিহার্য করা হয়েছে, হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, “হযরত আবু মালিক আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অংশ। (সহীহ মুসলিম শরীফ)
সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করুন:
রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে নিজের জন্য পরিবার, দেশ ও জাতির জন্য দুআ করা নবীজির সুন্নাত। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, নবীজি এরূপ দুআ করতেন, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে সুস্থতা, পবিত্রতা, আমানতদারিতা, উত্তম চরিত্র ও তাকদীরের উপর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করি।” (কানযুল উম্মাল, খন্ড: ২, হাদীস নং: ৩৬৫০)
এভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে নবীজি ধৈর্যধারণ করার প্রার্থনা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দ্রæত সুস্থতা অর্জন বিপদে ধৈর্যধারণ এবং দুনিয়া থেকে আপনার রহমতের দিকে প্রত্যাবর্তনের প্রার্থনা করছি। (মুসতাদরাকে হাকীম, হাদীস নং: ১৮৭২)
আল্লাহ আমাদের সকলকে কুরআনের বরকত দান করুন, পবিত্র কুরআনের আয়াত প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ দ্বারা আমাদের নাজাত দান করুন। নিশ্চয় তিনি মহান দানশীল, রাজাধিরাজ, পুণ্যময় অনুগ্রহশীল ও দয়ালু।

লেখক : অধ্যক্ষ, খতীব,
কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।