করোনা ভাইরাস আতঙ্ক নয়, দরকার সতর্কতা

1059

সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও ঘনীভূত করোনা আতংক। যত দিন গড়াচ্ছে, করোনা ভাইরাসের হানায় সন্ত্রস্থ হচ্ছে গোটা দুনিয়া।এরই মধ্যে চীন থেকে ‘করোনা ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। সবখানে আতংক। বাংলাদেশে আতংক ছড়িয়েছে বেশি; সতর্কতা কম। রোগব্যাধি নিয়ে আতঙ্ক নয়, দরকার হলো সতর্কতা ও সচেতনতা। এখনও বাংলাদেশে চীনা নাগরিক এবং প্রবাসীরা প্রবেশ করছে।করছে বহু চীনা নাগরিকদেশে বসবাস। তাদের ব্যাপারে সতর্কতা কম, বাধা নিষেধ কম। আমাদের বিমান বন্দর, স্থল বন্দর, সমুদ্র বন্দর গুলো এখনও রক্ষিত বলা যাবে না। কারা আসছে? কোথা থেকে আসছে? ট্রানজিট হয়ে করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ আসছে কিনা তা নিয়ে সতর্কতা নেই, কোন হিসাব নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহে (১ ফেব্রুয়ারি)ভারতের হুগলীতে সাহিত্যসভায় প্রধানঅতিথি হিসাবে যোগ দিয়ে দেশে ফিরছিলাম। কলকাতা বিমানবন্দরেআমরা বেশ সতর্কতা লক্ষ করলেও, ঢাকা হজরত শাহজালাল (রা) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফিরে সতর্কতা তেমন একটা চোখে পড়েনি আমাদের। কলকাতা থেকে ট্রানজিট হয়ে চীন থেকে আসা প্রবাসী সহজেই বিনা বাধায়, বিনা স্কেনিংয়ে দেশের ভেতরে ঢুকে পড়লেন। এমনটা হচ্ছে বিভিন্ন বন্দরে। বিষয়টা গাঁছাড়াই মনে হলো। এমনটা হলে বাংলাদেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। করোনা ভাইরাস এ দেশে ঢুকে পড়লে দ্রæত মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। কারণ আমরা সচেতন নই। এখনও আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের ১৫ কোটি মানুষই এ ভাইরাস সম্পর্কে ধারনো রাখে না। অধিকাংশই শুনছে এ ভাইরাসে মানুষ মারা যায়। সতর্কতার বিষয়ে জানে কম। এদেশে এ ভাইরাস নিয়ে আতংক আছে বেশ, সতর্কতা নেই। এটা ভয়ানক বিষয়।
আমাদের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্তের বিশেষ মেডিক্যাল চেকআপের ব্যবস্থা যাতে সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, আমাদের মতো জনবহুল দেশে এই ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এ ভাইরাস যেহেতু আক্রান্তেরে হাঁচি-কাশি-সর্দির মাধ্যমে ছড়ানোর ক্ষমতা রাখে, সে কারণে কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন, সাবান দিয়ে নিয়মিত হাত ধোয়া, সর্দি-কাশি হলে মাস্ক পরিধান করা, হাঁচি-কাশি হলে মুখ ঢেকে হাঁচি বা কাশি দেয়া এবং সে হাত সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। অন্যদিকে পোলট্রিসহ, পশুপাখি হতে দূরে থাকতে হবে। কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ ডিম বা মাংস না খাওয়া এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত ভিড় এড়িয়ে চলাচল করতে হবে। এমন সতর্কতা কমই অবলম্বন করছি আমরা।
এ ভাইরাস এদেশে প্রবেশ করতে পারলে কেবল মানুষই মরবে না, দেশের অর্থনীতির চাকা অচল হয়ে পড়বে।
গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে।করোনা ভাইরাসে চীনে এ পর্যন্ত কমপক্ষে সাড়ে ৩ শতাধিক লোক মারা গেছে। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৮ দেশে ৯৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক দেশ যোগাযোগ ছিন্ন করেছে দেশটির সাথে।চীনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়ায়,করোনা ভাইরাস নিয়ে চীন যুদ্ধকালীন তৎপরতা চালাচ্ছে। সর্বশেষ কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘আল জাজিরা’ ৪২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। এ ভাইরাসে আরও অনেক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।শুধু মানুষের জীবন নয়, এখন চীনের অর্থনীতির জন্যও হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে করোনা ভাইরাস।
এদিকে মরার উপর খাড়ার ঘাঁয়ের মতো এভাইরাস আর মানুষের মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি আর কূটচাল চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চীনের অভিযোগ, ভাইরাস নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ঐ দেশসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চীনে ব্যবসা পরিচালনা সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে। এ সংকটে চীনের আর্থিক ক্ষতি ৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দেশের অর্থনীতিতে আরো ২ হাজার ২শ’ কোটি ডলার যোগ করতে যাচ্ছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পরবে বৈকি!
সারা দুনিয়ায় করোনা ভাইরাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে চীনে। আতংক বিশ^জুড়ে। চীনে রেড এলার্ট জারি হয়েছে। করোনা ভাইরাস আতঙ্কে উহানসহ বিভিন্ন প্রদেশে বাংলাদেশের অনেক নাগরিক অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন। অনেকের বাসায় খাবার পর্যন্ত শেষ হয়ে গেছে। কোন কোন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি স্বজনদের অবহিত করেছেন। বাংলাদেশেও এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে হাজার হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন। আবার বাংলাদেশের হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা নিতে চীনে অবস্থান করছেন। এই দুই দেশের বাসিন্দাদের আশা-যাওয়ার মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে মতা পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে না।
করোনা ভাইরাস আক্রান্ত চীনা নাগরিক কিংবা প্রবাসীরা বাংলাদেশে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। এ ছাড়াও চীনে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক যারা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আসছেন তাদের মাধ্যমেও এই ভাইরাস বাংলাদেশে বিস্তার ঘটাতে পারে। আমাদের আরও অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। সতর্ক আর সচেতন হলে আমারা এ ভাইরাসের আক্রমণ থেকে দূরে থাকতে পারবো।এ ছাড়া এ ভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের উদ্যোগ নিতেই হবে। আমদের বিমানবন্দও, স্থল বন্দও, নৈবন্দরে সতর্কতা জারি করতে হবে। যাতে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত একজন নাগরিকও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার যাতে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে সেব্যাপারে সতর্কতা জারী করেছে। বিমানবন্দর, নৌবন্দরে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এর সঙ্গে দেশি প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশি নাগরিকদের ওপরও নজর রাখা হচ্ছে। বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠানে চীনা নাগরিকরা কর্মরত আছেন, তাদের দেশ ত্যাগ না করা এবং যারা ইতিমধ্যে চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন, তাদের পর্যবেক্ষণে রাখছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।পদ্মাসেতু প্রকল্প, দক্ষিণাঞ্চলের কলাপাড়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর চীনা প্রকৌশলী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে বিশেষ সচেতনতা সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কলাপাড়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং পদ্মসেতু প্রকল্পে নিয়োজিত চীনা প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের বাংলাদেশ ত্যাগ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে যারা এই মুহূর্তে চীনে অবস্থানকারী চীনা নাগরিক ও বাংলাদেশি নাগরিকদেরও দেশে না আসার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করলেই ভালো। তা না হলে আমাদেও কপালে দুর্গতি আছে এটা ভাবতে হবে সকলকে।
করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা আছে। কোথা থেকে কিভাবে ছড়ালো এই প্রাণঘাতি ভাইরাস। কোন কোন সংস্থা বলছে চীনের উহানের একটি গবেষণাগার থেকে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি। দেশটির গোপন জৈব অস্ত্র প্রকল্পের কাজ চলছিল ওই গবেষণাগারে। ইসরায়েলের এক জৈব অস্ত্র বিশেষজ্ঞ এ দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন টাইমস। আবার বলা হচ্ছে প্রাণী খ্যাদ্য থেকে করোনা ছড়িয়েছে। ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সন্দেহ করেছে, রহস্যময় ‘নোভেলব করোনা ভাইরাসের’ চাষ করেছে চীনের গোপন সামরিক গবেষণাগার। মার্কিন পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট এই দাবিকেই সমর্থন করেছে। ইজরায়েলের জীবাণু অস্ত্রের বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, এই ভাইরাসের জন্মদাতা ইউহানের জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কারখানা বায়ো-সেফটি লেভেল ৪ ল্যাবোরেটরি। কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, অসাবধানতাবশত এই গবেষণাগার থেকেই ছড়িয়েছে ভাইরাসের সংক্রমণ। আসলে জৈব রাসায়নিক অস্ত্রের উপর গবেষণা করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন চীনের বিজ্ঞানীরা। ইজরায়েলের সেনা গোয়েন্দাদের উদ্ধৃত করে সে দেশের দুটি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর ব্যাপক আধুনিকীকরণ, ছাঁটাই প্রক্রিয়া ও প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন করছে চীন। চলছে জীবাণু অস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্র নিয়েও গবেষণা। এরই অঙ্গ হিসাবে সার্স জাতীয় ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করছে চীনের সামরিক বাহিনীর গবেষণাগার। কোনও কোনও থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, নাশকতা বা অন্তর্ঘাত করেই চীনের কোনও বিজ্ঞানী বা গুপ্তচর এই ভাইরাস ছড়িয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের প্রতিবেদনে স্পষ্ট জানিয়েছে, এই আরএনএ ভাইরাসকে চীন তৈরি করেছে মারণাস্ত্র হিসেবেই। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের ছোবলে হাজার হাজার মানুষকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলা সম্ভব। উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বিএসএল-৪ ল্যাবরেটরিতে অতি গোপনে এই জৈব রাসায়নিক মারণাস্ত্র তৈরির কাজ চলছিল অনেকদিন ধরেই।
ইজরায়েলের দাবি, বিশ্বের সব দেশকে জব্দ করতে, চাপে রাখতে সবচেয়ে শক্তিশালী জীবাণু অস্ত্র বানাচ্ছে চীন। এজন্যই জিনগত অভিযোজন ঘটিয়ে করোনা ভাইরাসের মতো অনেক ভাইরাস তৈরি করছেন চীনের সামরিক বাহিনীর গবেষকরা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ও ইজরায়েলের গোয়েন্দাদের দাবি ভিত্তিহীন জল্পনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে চীন। কিন্তু ভাইরাসের প্রতিষেধক হিসাবে কোনও টিকা, ওষুধ বা ইঞ্জেকশন কাজ না করায় সন্দেহ তির রয়েছে চীনা গবেষণাগারের উপরেই। এসব কথা সত্য হলে তা হবে সত্যিই দু:ভাগ্যজনক।
যেভাবেই ছড়াক এ ভাইরাস এখন আমাদের সতর্ক হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। মনে রাখতে হবে রাগব্যাধি নিয়ে আতঙ্ক নয়, দরকার হলো সতর্কতা ও সচেতনতা। চীন থেকে ‘করোনা ভাইরাস’ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় বিশ্বব্যাপী জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। করোনা ভাইরাসে গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটলে এ পর্যন্ত চীনে এপর্যন্ত কমপক্ষে চারশ’ জন মারা গেছে। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৮ দেশে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা ভাইরাস যেন কোনভাবেই বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে না পারে সে ব্যাাপারে আগাম ব্যবস্থা নেয়া সমীচীন। বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার পরামর্শও দেয়া হয়। পরামর্শ পর্যন্তই যেন তা সীমাবদ্ধ না থাকে। করোনা ঝুঁকি এড়াতে অধিক সতর্কতা জরুরী এখন। কারণ বাংলাদেশ এখন বিশ্ব আগ্রীহর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশ থেকেই বাংলাদেশে পর্যটক বা ব্যবসায়ীদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। ফলে এই ভাইরাসটি বাংলাদেশে প্রবেশ করার শঙ্কা প্রবল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সব মহল করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছে এটি আমাদের আশা এবং স্বস্তির বিষয়। তবে শুধু সরকারের পদক্ষেপের ওপর ভরসা করে থাকলেই চলবে না, জনগণকেও দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যেমন- ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার করা, বেশি লোক সমাগম হয় অর্থাৎ সভা-সমাবেশস্থলে উপস্থিত না থাকা, হাত ও ভালভাবে পরিষ্কার করে খাওয়া- এগুলো মেনে চলতে হবে। ইতোমধ্যে আগাম সতর্কতামূলক প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন এবং আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল (র) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রবেশপথে করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং (শনাক্ত) কার্যক্রমও নেয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রম যেন কার্যকরী থাকে সেদিকে নজরদারি দিতে হবে।
২০০২-০৩ সালে চীন হংকংসহ দুই ডজনেরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়া সার্স মহামারিতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১০০-র কাছাকাছি। করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় প্রাণঘাতী এ ভাইরাস আগের সিভিয়ার অ্যাকুট রেসপিরেটরি সিনড্রোমে (সার্স) আক্রান্তের সংখ্যাকে অতিক্রম করেছে। চীন থেকে ছড়িয়েপড়া করোনা ভাইরাস ক্রমেই মহামারীর আকার নিচ্ছে। লাফিয়ে বাড়ছে মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা। আক্রান্ত হতে বাদ নেই ইউরোপ, আমেরিকাও। বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে এ ভাইরাস। আতঙ্ক ছড়িয়েছে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। বাংলাদেশের মানুষ আরও আতংকে আছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যতটা সতর্ক রয়েছে তার থেকেও অধিক সতর্কতা প্রয়োজন। ভৌগলিক অবস্থান এবং চীন থেকে আসা যাত্রীদের কারণে করোনা ভাইরাস বাংলাদেশে আসার ঝুঁকি রয়েছে। করোনা ভাইরাস যেভাবে দ্রæত গতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে তা বিবেচনায় রেখে আরও সতর্কতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সুরক্ষায় সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস যাতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করতে হবে। চীনের বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শহর উহানে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এর সুফল না পাওয়া এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সেখানে আটকা পড়ার কথা বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রচার করছে। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সুরক্ষায় দূতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা আশা করছি।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিষ্ট ও গবেষক