করোনা বিরোধী যুদ্ধে বিজয় অনিবার্য

60

অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী

১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তাঁরা আমাদের মাথার তাজ। দেশের সূর্য সন্তান। বর্তমানে করোনা বিরোধী যুদ্ধেও যারা বীরত্ব প্রদর্শন করছেন, তারাও একদিন ইতিহাসে ঠাঁই করে নিবে। তাই আমরা মনে করি, করোনা সমস্যাও একটা বড় যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধার দেশপ্রেম, শৌর্যবীর্য ও সম্মান দেখে নতুন প্রজন্ম এবং সে সময়ে মুক্তিযুদ্ধে যারা যেতে পারেনি তাদেরকে আফসোস করতে শোনা যায়। অনেকে এমনও বলতে শোনা যায়,‘ইস্ আরেকটা যুদ্ধ হতো,আমরাও মুক্তিযোদ্ধা হতাম’। আজ ২০২০ সাল। বাংলাদেশ আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। এই সংকটে দেশকে রক্ষা করার জন্য আবাল বৃদ্ধ সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ মিস করেছে তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ।
’৭১ সালের যুদ্ধে সর্বাধিনায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অধিনায়ক ছিলেন কর্নেল ওসমানী। জেড ফোর্স,এস ফোর্স, সেক্টর কমান্ডার ও একটা সুশৃঙ্খল সিস্টেম ছিল। কিন্তু সিস্টেমের বাইরেও দেশপ্রেমিক অনেক যুবক, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষ এই যুদ্ধে নিজের মত করে ও নিজেদের বাহিনী করে যুদ্ধ করেছে। তাদের অনেকে সাহসী ভূমিকার জন্য বড় বড় খেতাবও পেয়েছে। সবার পজিটিভ ভূমিকার জন্য সেটা সাংঘর্ষিক হয়নি। আজকের যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি কাঠামোর মধ্যে সরকারের সচিবসহ বিভিন্ন কর্মকর্তারা করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু সরকারের একক প্রচেষ্টায় সেটা সম্ভব নয়। সুতরাং সরকারি কাঠামোর বাইরের শক্তিগুলোকেও এযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ইতিমধ্যে অনেক ডাক্তার, নার্স, পুলিশ সেনাবাহিনী, উকিল, ব্যবসায়ী,স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যক্তি ও গোষ্ঠি বিভিন্নভাবে সরাসরি যুদ্ধরত আছেন। অনেক ডাক্তার নিজে সংক্রমিত হওয়ায়কে তুচ্ছ মনে করে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেক ডাক্তার মারাও গেছেন। মৃত ব্যক্তিকে যেখানে ছেলেমেয়েরা জানাযায় ও দাফনে পর্যন্ত সহযোগিতা করছে না সেখানে আনঞ্জুমানে মফিজুল ইসলামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগন এই বিপজ্জনক কাজ অবলীলায় করে যাচ্ছে। একাজে অনেকে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুবরন করছেন। পুলিশ, সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও সরকারি অফিসার করোনা প্রতিরোধে অংশ নিয়ে মৃত্যুবরু করেছেন এবং অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।এভাবে যারা জীবনবাজী রেখে কাজ করছেন তারাই হবেন নব মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এই যুদ্ধে ভূমিকা রাখার ইচ্ছে বা ক্ষমতা আছে এরূপ গুরুত্বপূর্ণ গ্রæপ বা ব্যক্তি এখনো অংশগ্রহণ করেনি অথচ এরা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই যুদ্ধে অর্থ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চেম্বার অব কমার্স, গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রি ও ব্যবসায়ী বা ধনীক শ্রেণির সক্রিয় অংশগ্রহণ যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তারা করোনা হসúিটাল, টেস্ট সেন্টার করে ও গরীবদের সহযোগিতা করে যুদ্ধের বিজয় ত্বরান্বিত করতে পারে। ছাত্র, যুবক ও শ্রমিকরা নিজেদের নিরাপদ ও জনগনের সেবায় ভূমিকা রাখতে পারে। এতো গেলো যুদ্ধের পক্ষের যোদ্ধাদের কথা। কিন্তু প্রতিপক্ষ করোনা ও করোনার সহায়ক শক্তিও আছে। তারাই হচ্ছে এই যুদ্ধের শত্রু। সেটা রাজাকার বা ভিন্ন নামে অভিহিত করতে পারেন। তারা কারা? একটি গোষ্ঠী সরকারকে মিসগাইড করছে, অনেক ডাক্তার জনগণের সেবা না করে লুকিয়ে আছে, অনেক হাসপাতাল বা ক্লিনিক করোনা রোগীকে সেবা দিচ্ছে না, অনেকে সরকারি ত্রান লুট করছে, অনেক জনপ্রতিনিধি উপজেলা চয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছে না, অনেক ব্যবসায়ী ঔষধসহ পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, বাড়ির মালিকরা বাড়ি ভাড়া বাড়াচ্ছে, গাড়ি মাল পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে এরাই করোনা বিরোধী যুদ্ধের শত্রæ বা এখনকার রাজাকার। যারা জনগণকে বাঁচানোর জন্য দিন রাত নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে ভূমিকা রাখছে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহিত করা দরকার।তাদেরকে পুরস্কৃত করা দরকার কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার! আমরা মানসিক দৈন্যতায় ভুগছি। বিক্ষিপ্তভাবে তাদের উৎসাহিত করার জন্য কিছু প্রোগ্রাম করা হলেও জাতীয়ভাবে কোন কর্মসূচি আমরা দেখি নাই। জাতীয়ভাবে তাদের সমর্থনে ‘এক মিনিটের অবিরাম করতালি’র মতো কর্মসূচি দিলে ওরা উজ্জীবিত হবেন। যারা এ দুঃসময়ে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে না বরং বিভিন্নভাবে এ যুদ্ধে ক্ষতিকর ভূমিকা রাখছে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সুতরাং অসংখ্য মানুষকে বাঁচাতে ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় হতে জাতিকে রক্ষার জন্য জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এধরনের কার্যক্রম চালিয়ে গেলে করোনা বিরোধী যুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করতে পারব।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী