করোনা পরিস্থিতি ত্রাণ বিতরণে মহড়া ও অনিয়ম দুটোই বন্ধ করতে হবে

135

কোভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাস চীন হয়ে ইউরোপে তান্ডব চালিয়ে এখন আমেরিকা ও দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়ায় হানা দিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে গত মাসের শুরু থেকে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ৮ মার্চ ১ম একজনের মৃত্যুর ঘটনায় সরকার নড়েচড়ে বসে। ক্রমান্বয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধসহ দেশ সাধারণ ছুটিতে অনেকটা অচল হয়ে পড়ে। সকল পর্যায়ের উৎপাদনের মেশিন বন্ধ, গাড়ির চাকা স্তব্দ, আফিস-আদালত সবখানে লকডাউন। কর্মজীবী, শ্রমজীবী মানুষসহ সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ এখন ঘরবন্দী। একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুয়ায়ী এ অবস্থায় দেশের প্রায় ৭ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটের কবলে পড়বে। সরকার এসব মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারসহ বিবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে. যা ইতোমধ্যে দেশ ও দেশের বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। এরবাইরে দেশের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী ও সামর্থবান ব্যক্তি ও তাদের ব্যক্তি সংগঠনের উদ্যোগে গরিব, অসহায় ও নি¤œ আয়ের মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হচ্ছে। কিন্তু এ ত্রাণ পরিচালনায় ত্রাণদাতাদের মহড়া ও কোন কোন জায়গায় সরকারি ত্রানের সাতপাঁচের কাহিনী দেশের এ দূর্যোগমুহূর্তে সাধারণ জনগণকে হতাশ করেছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত করোনায় ত্রাণ বিতরণের ‘মহড়া’র সচিত্র প্রতিবেদন দেখেও দেশের সচেতন মানুষ আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। এছাড়া সরকারি ত্রাণের জন্য বরাদ্দকৃত টনে টনে চাল পাইকারি ও খুচরা বাজারে বিক্রি বা চাল ব্যবসায়ীদের গুদামে কীভাবে চলে যায়-তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। কারা এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত? তাদের খুঁজে বের করতে হবে দ্রæত। কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সন্মেলনে করোনায় বিপদগ্রস্ত সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণের অনিয়মের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণসহ এক্ষেত্রে জিরো ট্রলারেনান্সের কথা ঘোষণা করেছেন। এরপরও যারা এ দূর্যোগে অনিয়ম ও দুর্নীতির স্পর্ধা দেখায়, তাদের ব্যাপরে কোন ছাড় দেয়া হবেনা বলে আমরা বিশ্বাস করি। আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর কঠোরতা এখানে যথাযথ প্রয়োগ করা হবে। এছাড়া ত্রাণ বিতরণের পদ্ধতি নিয়েও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে নির্দেশনা দিয়েছেন? তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ ত্রান বিতরণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশি সংবাদ ও ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ত্রাণদাতাদের এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারি ত্রাণ বিতরনে মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের নীতি? এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ত্রাণ বিতরণের সময় ফটো সেশন? এমনও দেখা গেছে যারা ত্রাণ নিচ্ছেন তারা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না? কিন্তু যারা দিচ্ছেন তারা গাদাগাদি করে দাঁড়ান? ত্রাণ দেয়ার সময় ছবি তুলতে গিয়ে আরো ঘনিষ্ঠ হন ত্রাণ প্রার্থীদের? সব মিলিয়ে ত্রাণই এখন যেন নতুন এক বিপদের নাম?
আমরা মনে করি, দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে যেভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে তাতে, ত্রাণ দেয়ায় শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন এখনই। সরকার ইতোমধ্যে মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় উসনালয়গুলোতে ৫ বা ১০ জনের অধিক মানুষের উপস্থিতি বন্ধ করেছেন, সড়ক, মহাসড়ক, হাট-বাজারও নিয়ন্ত্রণ করছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, কিন্তু ত্রাণ বিতরণে বিশৃঙ্খলা থামাতে না পারলে এটিই দেশের জন্য নতুন বিপদ হতে পারে।
আমরা জানি, বাংলাদেশে এখন করোনার কমিউনিটি স্প্রেডিং শুরু হয়েছে? এ পর্যন্ত করোনায় ২৭ জন মারা গেছেন? গত ছব্বিশ ঘন্টায় মারা গেছেন ছয় জন? সারাদেশে কার্যত লকডাউন চলছে? সেই অবস্থায় নিয়ম নীতি না মেনে এইভাবে ত্রাণ বিতরণে আশঙ্কায় রয়েছেন চিকিৎসকেরা? বিশেষজ্ঞদের দাবি, ‘সরকারি বেসরকারি সব পর্যায়ে ত্রাণ দেয়ায় শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন এখনই? সবচেয়ে ভালো হয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিধি মেনে তালিকা করে ত্রাণ বাসায় পৌঁছে দেওয়া? তবে বস্তি বা ভাসমান মানুষের জন্য নিরাপদ কোনো জাগায় তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ করা যেতে পারে? সেখানে প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে? মনে রাখতে হবে এটা করোনার সময়? আমরা যেন সেবা করতে গিয়ে ক্ষতি না করে ফেলি?’’ আমরা এ বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ন সহমত পোষণ করে বলতে চাই, ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অনিয়মরোধে সরকারের পদক্ষেপগুলো আরো কঠোর হতে হবে।