করোনা নিয়ে চীন-আমেরিকা লড়াই

157

করোনাভাইরাস নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছে চীন ও আমেরিকা। কদিন আগেই চীনা এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা বলেছিলেন, আমেরিকান সেনারা এই ভাইরাস নিয়ে এসেছে, যারা চীনে খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। তার এ বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো এটাকে চীনা ভাইরাস হিসেবে নাম দিয়েছেন। দেশ দুটির লড়াই শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। করোনাভাইরাস নিয়ে অনুসন্ধানরত অন্তত ১৩ জন মার্কিন সাংবাদিককে বহিষ্কার করেছে চীন। চীন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত চীনা সাংবাদিকদের ওপর আরোপ করা বিধি-নিষেধের জবাবেই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন পত্রিকাগুলো বলছে, চীনের উহান শহরে এই ভাইরাসটির প্রকোপ দেখা দেওয়ার পরপরই ওই সাংবাদিকরা এই মহামারির ওপর বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করছিলেন। বহিষ্কৃত এই সাংবাদিকরা নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক। নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, চীন এভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে বড় ধরনের ভুল করেছে। আর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে যে, এই বহিষ্কার মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নজিরবিহীন আক্রমণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনসহ সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবেলায় জোর লড়াই করছে, তখন বিশ্বের এই দুটো মহাশক্তিধর দেশের এই যুদ্ধ সেই লড়াইকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এই ভাইরাসটি মোকাবেলা নিয়ে দুটো দেশ শুরু থেকেই একে অপরকে আক্রমণ করে ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসকে ‘চীনা’ বলে উল্লেখ করে চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। জবাবে বেইজিং বলছে, এধরনের মন্তব্য করে ওয়াশিংটন চীনকে বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করছে। ভাইরাসটি চীনের উহান শহরেই প্রথম পাওয়া যায় গত বছরের শেষের দিকে। কিন্তু চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন যে মার্কিন সৈন্যরাই এই ভাইরাসটি সেখানে নিয়ে গেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে মার্কিন সাংবাদিকদের মিডিয়া পাস কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দিতে হবে।
এ মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে ঠিক কতজন চীনা নাগরিক সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতে পারবেন তার সীমা বেঁধে দিয়েছিল। বলা হচ্ছে, এর প্রতিশোধ হিসেবেই বেইজিং মার্কিন সাংবাদিকদের চীন থেকে বহিষ্কার করেছে। ‘যুক্তরাষ্ট্র যা করেছে সেটা চীনের সংবাদ মাধ্যমকে লক্ষ্য করেই করেছে। আর সেটা করা হয়েছে শীতল যুদ্ধের সময়কার মানসিকতা এবং আদর্শগত পক্ষপাত থেকেই,’ এক বিবৃতিতে বলেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমেরিকান পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও চীনকে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন। বিবিসির চীনা বিভাগের সাংবাদিক ঝাওইন ফেং বলছেন, চীনে যেসব বিদেশি সাংবাদিক কাজ করেন তাদেরকে প্রতি বছর তাদের মিডিয়া পাস বা কাজের অনুমতি পত্র নবায়ন করতে হয়।
সাধারণত বছরের শেষ দিকে সেটা করা হয়ে থাকে। তিনি বলছেন, চীনের এই সিদ্ধান্তের ফলে মার্কিন এই সাংবাদিকদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাদেরকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘এর ফলে চীনে মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাজের ক্ষতি হবে, বিশেষ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের, কারণ গত মাসে তাদের তিনজন সাংবাদিককে চীন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’