করোনা উপসর্গে ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ভাইয়ের মৃত্যু

32

করোনার প্রকোপ কোনোভাবেই থামছে না হাটহাজারীতে। একের পর এক করোনা শনাক্তের খবরে কম্পিত হচ্ছে হাটহাজারীবাসীর হৃদয়। করোনা উপসর্গ নিয়ে ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন- পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব দেওয়ান নগর জোহরা বাপের বাড়ির মরহুম গোলাম রসুলের ছেলে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী মো. শাহ আলম (৩৬) এবং তার ছোট ভাই হাটহাজারী বাজারের এন জহুর মার্কেটের কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়ী মো. শাহ জাহান (৩২)।
গত শুক্রবার বেলা ২টার দিকে চমেক হাসপাতালে মারা যান শাহ আলম, এর ৮ ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে একই হাসপাতালে মারা যান ছোট ভাই ব্যবসায়ী শাহজাহান। মাত্র ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারের দুই ভাইয়ের করুণ মৃত্যুতে এলাকায় শোকের মাতম চলছে। নিকটাত্মীয়দের অভিযোগ- হাসপাতালে আইসিইউ বেড না পাওয়াতে বিনা চিকিৎসায় দুই ভাইয়ের করুণ মৃত্যু হয়েছে চোখের সামনেই। এছাড়া একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় করোনা উপসর্গে নিয়ে চমেক হাসপাতালে হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সুমন বড়ুয়া নামে এক প্রধান শিক্ষকেরও মৃত্যু হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাই করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রায় চার দিন পূর্বে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে ডাক্তার তাদের আইসিইউতে রাখার পরামর্শ দেয়। কিন্তু হাসপাতালে অনেক ধর্ণা দিয়েও আইসিইউ বেড না পাওয়াতে গতকাল শুক্রবার বেলা ২টার দিকে শাহ আলম মারা যান। একইভাবে আইসিইউর অভাবেই শ্বাসকষ্ট নিয়ে রাত ১০টার দিকে মারা যান ব্যবসায়ী শাহজাহান।
মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ের আবীরস্থ সবজি মার্কেটে কাজ করতেন মো. শাহ আলম (৩৬)। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে প্রবাস থেকে ছুটিতে দেশের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। করোনার সংকটের কারণে আটকা পড়েন দেশে। গত ৭/৮ বছর আগে বিয়ে করেন শাহ আলম। সংসারে ৬ বছর বয়সী সানজিত নামের একটি সন্তান রয়েছে তার। শাহ আলমের ছোট ভাই নিহত শাহজাহান (৩২) হাটহাজারী বাজারের কাচারী সড়কের এন জহুর শপিং সেন্টার মার্কেটের কাপড়ের দোকান আপন ফ্যাশনের মালিক। এছাড়া শাহাজান গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ হাটহাজারী পৌর ব্যবসায়ী সমিতির সমাজ কল্যাণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার স্ত্রী ও ৫ বছর বয়সি এক কন্যা ও ১ বছর বয়সি এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
নিহত শাহ আলমের আপন খালাত ভাই মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী খোরশেদ জানান, মাত্র ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ভাইকে হারালাম শুধুমাত্র আইসিইউর অভাবে। চিকিৎসকরা বলেছেন আইসিইউতে রাখতে কিন্তু কোনো সিট পাচ্ছিলাম না। টাকা দিয়েও কোনো হাসপাতালে মেলেনি আইসিইউ শয্যা। এমনকি সময়মতো করোনা পরীক্ষাটাও করাতে পারিনি সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতার কারণে।
এ হাসপাতাল ওই হাসপাতাল ধর্ণা দিতে দিতেই দুই ভাই চোখের সামনেই মারা গেছে। কিন্তু আপনজন হিসেবে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি ভাইদের জন্য। তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই ভাইয়ের মৃত্যু হলেও কয়েক দিন আগে স্যাম্পল নেওয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো পর্যন্ত হাতে আসেনি।
মাত্র ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারের তরতাজা দুটি প্রাণ ঝড়ে যাওয়াতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যদের সান্ত¦না দেওয়ার ভাষা নেই নিকটাত্মীয়দের। অনেকেই তরুণ দুই ভাইয়ের ছবি দিয়ে ফেসবুকে শোক প্রকাশ করেছে।
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার সময় তাদের গোসল, দাফন ও জানাজার নামাজ সম্পাদন করেন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভা শাখার স্বেচ্ছাসেবকরা।
অন্যদিকে করোনা উপসর্গে নিয়ে চমেক হাসপাতালে একই দিন সন্ধ্যায় উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর মনছুরাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমন বড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে গত বুধবার চমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যুর খবর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষক সমাজে শোকের ছায়া নেমে আসে।