করোনায় স্থবির পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প

109

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন। চারদিকে পর্যটকশূন্য অচেনা চিত্র। হঠাৎ থমথমে পরিস্থিতিতে লোকসানের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। এ অবস্থায় পাহাড়ি পর্যটনের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা।
গত ১৯ মার্চ থেকে তিন পার্বত্য জেলার পর্যটন স্পট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে তিন জেলার সব হোটেল-মোটেল বন্ধ রাখতে বলা হয়। এ কারণে ওইদিন থেকেই থমকে আছে পাহাড়ি পর্যটন।খবর বাংলা ট্রিবিউনের
জানা গেছে, সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগে থেকেই জেলার বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও কটেজে তালা ঝুলছে। এছাড়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির সব পর্যটন স্পট সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ রয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে অলস জীবনযাপন করছেন পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বেকার হয়ে পড়া এই মানুষগুলোর চোখেমুখে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ।
প্রতি বছর মার্চ মাসে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাঙামাটিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সমাগম হতো। কিন্তু এবার করোনার প্রভাবে তা দেখা যায়নি। বুকিং বাতিল হওয়ায় বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল মালিক এখনও বেতন ভাতা দিতে পারেননি কর্মীদের।
রাঙামাটি জেলা আবাসিক হোটেল-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈনুদ্দীন সেলিম বললেন, ‘ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও হোটেল-মোটেল বন্ধ রাখায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে রাঙামাটির পর্যটনে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো।তিন বেলা খাওয়া জুটছে না অনেকের। করোনা মহামারির কারণে এখন আমরাও অলস জীবনযাপন করছি। এর মধ্যে আবাসিক হোটেল-মোটেলে কাজ করা নিম্ন আয়ের মানুষগুলো বেশি কষ্টে আছে।’
এই সংগঠনের আওতাভুক্ত হোটেল-মোটেলের সংখ্যা ৪৫টি। এগুলোতে কাজ করা ৪৫০-৫০০ কর্মী এখন বেকার।
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়–য়া বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে আমাদের ৫০ লাখ টাকার ব্যবসা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর অগ্রিম বুকিং সব বাতিল হয়েছে। এ কারণে প্রায় ৩৫-৩৬ লাখ টাকা হাতছাড়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না।’
রাঙামাটির কাছেই পর্যটন স্পট সাজেকে মোট ১০৬টি কটেজ-রিসোর্ট রয়েছে। সাজেক কটেজ অ্যান্ড রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, মোটামুটি পর্যটক সমাগম হলে গাড়ি, রেস্তোরাঁ, কটেজ ও রিসোর্টসহ সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৮০ লাখ টাকার বেশি ব্যবসা হতো।
সংগঠনটির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ বলেন, ‘ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাজেকে এখন কোনও পর্যটক নেই। আমাদের হাজারেরও অধিক শ্রমিক-কর্মচারী বেকার হয়ে আছে। অথচ পর্যটন মৌসুমের এই শেষ সময়ে আমাদের মোটামুটি ভালো আয় হতো। এবারও ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত সাজেকের প্রায় সব কটেজ-রিসোর্টে ৬০-৭০ শতাংশ অগ্রিম বুকিং ছিল। পরে সবই বাতিল হয়ে গেছে।’
একই আশা ছিল রাঙামাটি পর্যটন বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও পর্যটন বোটঘাটের ম্যানেজার মো. রমজান আলীর। তার কথায়, ‘২৬ মার্চকে কেন্দ্র করে রাঙামাটিতে প্রচুর ভ্রমণপ্রেমী আসার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে তা ভেস্তে গেছে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই শতাধিক ইঞ্জিনচালিত ট্যুরিস্ট বোট পড়ে আছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন চালক-মালিকরা।’
সংগঠনটির হিসাবে, প্রতিদিন অর্ধশত বোট ভাড়া হলে ২-৩ লাখ টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। এগুলোতে যারা কাজ করেন তারা সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ। এখন অনেককে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে বলে জানান সমিতির সহ-সভাপতি।
এদিকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, করোনা সংকট মোকাবিলায় রাঙামাটিতে সরকারিভাবে পাওয়া খাদ্যশস্য ও নগদ টাকা হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তার কথায়, ‘আমরা উপজেলা পর্যায়ে খাদ্যশস্য ও অর্থ পাঠিয়েছি। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের এগুলো দেওয়া হচ্ছে।’