করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে লকডাউনে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে

68

গতকাল মঙ্গলবার আইইডিসিআর এর নিয়মিত ব্রিফিং থেকে জানা যায়, দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দুটোই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এতোদিন মৃত্যুর হার ও সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও গত ২৪ ঘন্টায় অর্থাৎ একদিনেই করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫জন। আর নতুনভাবে সংক্রমণ হয়েছে ৪১ জন। এ নিয়ে একমাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জন। আর সংক্রমণের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৪ জনে। ঢাকার কয়েকটি এলাকা, নারায়নগঞ্জ ও মাদারিপুরসহ দেশের যে স্থানেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আলামত দেখা দিলে বা সন্দেহ করা হলে সেই এলাকা ‘লকডাউন’ করে দেওয়া হচ্ছে। করোনা উপসর্গ দেখা দিলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে কাছাকাছি পরীক্ষাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়াও গতি পেয়েছে। পরীক্ষার আওতা বাড়ার পর দেশে এক দিনে নতুন ৪১ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে। দেশে কভিড-১৯-এ মৃতের সংখ্যাক্রমান্বয়ে বাড়ার আশঙ্কা সরকার থেকে শুরু করে সকলমহল করে আসছে। গতকালের প্রতিবেদনে এর কিছুটা ইঙ্গীত পাওয়া যাচ্ছে। দুঃখজনক হচ্ছে, নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন পরিচালক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি প্রায় আট দিন রাজধানীর কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আইইডিসিআরের গত মঙ্গলবারের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী দেশের মধ্যে রাজধানী ঢাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, এরপর নারায়নগঞ্জ ও মাদারিপুর। ঢাকা মহানগরীতে ৩০টি স্থানে রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুটি স্থানে গুচ্ছ আকারে কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ছে। আইইডিসিআর বলছে, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে। এখন ক্লাস্টার থেকে রোগী আসা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ ছুুটির মেয়াদ বেড়েছে। সরকার যেকোনোভাবে মানুষকে ঘরে রাখতে চাইছে। এজন্য গত সোমবার মন্ত্রী পরিষদের মিটিং-এ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরপর ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ বিভাগীয শহরগুলোতে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার ক্ষেত্রে কফোর অবস্থানে গিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়া সকাল থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার ও মুদির দোকান এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁচাবাজার সংশ্লিষ্ট শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। তবে ঔষধের দোকান ও সংবাদপত্র পরিবহন এ বিধিনিষেধের বাইরে থাকবে। আমরা লক্ষ করছি, এ নির্দেশনার পর অনেকটা মানুষের স্থানান্তর বন্ধ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সরকারি নির্দেশনা মানতে কড়াকড়ি বেড়েছে। কেউ যাতে শহরে ঢুকতে এবং বেরোতে না পারে সে বিষয়েও পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পারি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কভিড-১৯ মহামারি ঠেকাতে হলে এখনই পাড়া-মহল্লা-গ্রাম-গঞ্জে সক্রিয় গণসার্ভেইল্যান্স শুরু করতে হবে। সেটি কী করে সম্ভব, তা-ও বলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ব্যাপক মানুষকে সম্পৃক্ত করে সক্রিয় করে পাড়া-মহল্লা-গ্রাম-গঞ্জে গণকমিটি গঠন করে পারস্পরিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে খবর নিতে হবে। দীর্ঘ জাতীয় কোয়ারেন্টিনে তাদের কী অসুবিধা হচ্ছে, খাবারের বা বাজার করতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না, হয়ে থাকলে সমস্যা সমাধানের জন্য সক্রিয় হতে হবে। খোঁজ নিতে হবে, বাসার কারো জ্বর ও শুকনো কাশি আছে কি না? বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এভাবে পাড়া-মহল্লা-গ্রাম-গঞ্জে কভিড-১৯ রোগের উৎস খুঁজে বের কেরে রোগীকে আলাদা করা, পরীক্ষা করা, চিকিৎসা করা, সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন করা প্রভৃতি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে সরকারের পাশাপাশি এর সঙ্গে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করেন, মানুষকে সক্রিয় করে তাদের মধ্যে যে শুভবুদ্ধি আছে, তা জাগিয়ে তুলে তাদের সংগঠিত করে মহামারিকে ঠেকিয়ে দেওয়া সম্ভব।
আবার এটিও সত্য যে মানুষকে ঘরে রাখতে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে গেলে তার বিরুদ্ধে নিতে হবে উপযুক্ত ব্যবস্থা। সবার সম্মিলিত চেষ্টা মহামারি রুখে দেবে-এটিই আমাদের প্রত্যাশা।