করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে, সতর্ক থাকুন

106

শবে বরাতে চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঘরে বসে নামাজ পড়ার আহব্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবাই দোয়া করবেন। এবারের শবে বরাতে আল্লাহ যেন করোনা থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেন। আল্লাহ বাংলাদেশটা যেন রক্ষা করেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গণভবন থেকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা চট্টগ্রামবাসীর প্রতি এ আহব্বান জানান।
একই সময় চট্টগ্রাম ও সলেট, এ দুই বিভাগের ১৫টি জেলার জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা এতে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস।
ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে- মক্কা শরীফ, মদিনা শরীফ এখন বন্ধ। সেখানে কারফিউ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মক্কা শরীফ, মদিনা শরীফেই যখন এ অবস্থা সেখানে মসজিদে গিয়ে অনেক লোক একসঙ্গে জমায়েত হওয়া- এটাতে কিন্তু সংক্রমণ হওয়ার একটা ভয় থাকে।’
তিনি বলেন, সামনে শবে বরাত। সবাই যাতে ঘরে বসে ইবাদত করে। মসজিদে ভিড় না করে। আল্লাহকে যেকোনো জায়গা থেকেই ডাকা যায়। সবাই আল্লাহকে ডাকুন। এবারের শবে বরাতে আল্লাহ যেন লেখেন যে, করোনা থেকে মুক্তি পাই। সবাই সে দোয়াটা চাইবেন। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের কাছে আমি এ আহব্বান জানাই। আল্লাহ অন্তত বাংলাদেশটা যেন রক্ষা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে ১৬২ জনের টেস্ট করা হয়েছে। ২ জনের করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। আর যাতে কারও এটা না হয়- সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। আমি অনুরোধ করবো চট্টগ্রামবাসীকে- এখানে প্রবাসী যেহেতু একটু বেশি, তারা যেন আত্মীয় স্বজনদের বলে দেয় এখন না আসার জন্য।
‘বাইরে থেকে যারাই আসে, এসেছে- তাদের যেন ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার পর আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া হয়। বিষয়টা বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।’ যোগ করেন তিনি।
ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামের সার্বিক অবস্থা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজে (বিআইটিআইডি) এ পর্যন্ত ১৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তারা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। খবর বাংলানিউজ, বিডিনিউজ ও বাংলা ট্রিবিউনের
জেলা প্রশাসক জানান, আপনার দেয়া ৩১টি নির্দেশনা চট্টগ্রামে যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে। আপনি বলেছেন- একজন লোকও ক্ষুধার্ত থাকবে না। আমরা সে লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ৭২ হাজার ৪৮৭টি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি জানান, সার্বিক অবস্থা এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য চট্টগ্রামে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানে আসা ফোন কলের সূত্র ধরে প্রতিদিন ১৫০-২০০ মধ্যবিত্ত পরিবারে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাদের পরিচয়ও গোপন রাখা হচ্ছে।
রোগী ফিরিয়ে দেওয়া ডাক্তারদের কড়া বার্তা : দেশে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় যেসব চিকিৎসক প্রত্যক্ষভাবে জনগণের সেবা নিশ্চিতে এগিয়ে আসেননি তাদের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, এমন খবর পাওয়ার কথা তুলে তিনি বলেছেন, যেসব চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন না, ভবিষ্যতে তারা চাকরি করতে পাবেন কিনা, তা ভাবা হবে। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে চিকিৎসক, নার্স নিয়ে আসার কথাও বলেন তিনি।
বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাওয়া চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, ত্রাণ বিতরণে যুক্ত অন্যান্য কর্মচারীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
যারা সাহায্য চাইতে পারবে না তাদের তালিকা করুন : সরকারি সেফটিনেটের বাইরে থাকা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এ বিষয়ে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
জনপ্রতিনিধি ও মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যাদের যাদের আমরা সামাজিক নিরাপত্তায় সাহায্য দিচ্ছি তার বাইরে যারা আছে, যারা হাত পাততে পারবেন না, তাদের তালিকা করে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া হবে। এই কাজটা আপনারা করবেন।
করোনা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখায় মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা করতে পারছে না, কাজ করে খেতে পারছে না, অনেকের জীবন-জীবিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম, যারা দিন এনে দিন খায়, ছোটখাটো ব্যবসা করে যারা খেতো তাদের কাজগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের মানুষকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে এখন। আমরা আমাদের সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছি। ১০ টাকার চাল বিতরণ করছি। বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। আমাদের সামাজিক সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা যেমন বিভিন্ন ধরনের ভাতা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু ১০ টাকার চালের রেশন কার্ডের বাইরেও যারা এই চাল কিনে খেতে চায়, তাদের জন্য ব্যবস্থা করবো। অর্থাৎ সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার বাইরে যারা উপার্জন করে খেতো কিন্তু সেই উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে তারা যেন ছেলেমেয়ে নিয়ে কষ্ট না করে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের তালিকা করতে হবে। নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত যারা উপার্জন করতে পারছে না, তাদের জন্য দশ টাকার চালের রেশন কার্ডটা করে দিতে হবে।’
করোনা আক্রান্তদের সেবাকারীদের জন্য বিশেষ বিমা : করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ বিমার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ভূমিকা পালনকারী সরকারি কর্মকর্তাদেরও একই ধরনের বিমার আওতায় আনা হবে।
এপ্রিলে করোনার বড় ধাক্কা আসতে পারে : চলতি মাসে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস বড় ধাক্কা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি এ আশঙ্কার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘এই ভাইরাসটির প্রসারিত হওয়ার বিষয়টি অঙ্কের মতো। এপ্রিলে আমাদের দেশে এর ধাক্কা ব্যাপকভাবে আসবে। এ রকমই আলামত পাওয়া যাচ্ছে। এ ধরনের কিছু প্রতিবেদনও আমরা দেখতে পাচ্ছি। সেই অবস্থায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
বারবার পানি পানের পরামর্শ : সবাইকে বারবার পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস পেটের ভেতরে চলে গেলে ক্ষতি করতে পারে না। এটি গলায় ক্ষতি করে। এজন্য বারবার পানি পান করে গলা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী সবার সামনে পানির বোতল থাকলেও তা পান না করার প্রসঙ্গটি তোলেন। তিনি বলেন, ‘সবাই পানির বোতল সামনে নিয়ে বসে থাকলে হবে না, পানি খেতে হবে। সবাইকে বলবো, কিছুক্ষণ পর পর পানি পান করার জন্য। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে পানি পান খুবই উপকারী। আমার এখানেও (গণভবনে) কেউ পানি খাননি। বারবার পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে রাখতে হবে। অনলাইনে যারা আছেন, আমি সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছি, পানি পান করে গলা ভিজিয়ে রাখার জন্য। করোনায় ক্ষতিটা করে গলাতে। পেটের ভেতরে চলে গেলে কোনও ক্ষতি করতে পারে না। কাজেই সবাই সবসময় গলা ভিজিয়ে রাখবেন।