করোনার পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি: এপি

21

করোনাভাইরাসের মহামারিতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস এ তৈরি পোশাকের চাহিদায় ধস নামলেও আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। বিদেশে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে আসা রেমিটেন্স প্রবাহও সচল হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের প্রধান রফতানি শিল্প অ্যাপারেলের প্রস্তুতকারীরা আশা করছেন, বড়দিনকে সামনে রেখে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বড় বাজারগুলো থেকে ক্রয়াদেশ (অর্ডার) পাবেন। এইসব তথ্য বিশ্লেষণ করে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এ সপ্তাহে দ্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুত্থানের বিষয়টি আশাব্যঞ্জক। আভাস দেওয়া হয়েছে, বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে এ অর্থবছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬.৮ শতাংশ হবে। গত এপ্রিল-মে মাসের তুলনায় এটি অনেক বেশি। ওই সময়েই আন্তর্জাতিক পোশাকের ব্র্যান্ডগুলো ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করেছিল। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে প্রায় ৪০ লাখ পোশাক শ্রমিক।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এর সভাপতি রুবানা হক এপিকে বলেন, ‘এ মূহূর্তে আমরা বলতে পারি, তৈরি পোশাক শিল্প এর প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। মার্চ-মে এর তুলনায় এটি ঊর্ধ্বমুখী।’ তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমের অর্থনীতির মোড় ঘুরতে শুরু করেছে এবং আমরা সফলভাবে ক্রেতাদেরকে আলোচনার টেবিলে ফেরাতে পেরেছি। সেকারণে বাতিল হয়ে যাওয়া ৩১৮ কোটি ডলার মূল্যের ক্রয়াদেশের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ আমরা আবারও ফিরে পেয়েছি।’
পোশাক রফতানি করে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাক রফতানির মধ্য দিয়ে বছরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলার আয় করে বাংলাদেশ। এপ্রিলে রফতানির হার ৮৩ শতাংশ কমে তা ৫২ কোটিতে নেমে এসেছিল। জুলাইতে তা আবার ০.৬ শতাংশ বেড়ে ৩৯০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
আমদানি নিয়ে তিন মাস পরপর প্রতিবেদন তৈরি করা হয়ে থাকে। মে-জুন মাসে আমদানির পরিমাণও ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো এর তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে রফতানির পরিমাণ এক বছর আগের তুলনায় ৪.৩ শতাংশ বেড়ে ২৯৬ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ রফতানি অ্যাপারেল শিপমেন্টজনিত। জুলাই ও আগস্টে ৫৭০ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি হয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ. মানসুর বলেন, ‘পোশাক খাত ভালোভাবে পূর্বের জায়গায় ফিরে আসছে। আমাদের কৃষি খাতও ভালো করছে। রেমিটেন্স আসছে। এগুলো সবই অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ।’
মানসুর মনে করেন, লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আগামী কয়েক মাস পশ্চিমা বিশ্বে করোনা পরিস্থিতি কেমন হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে পুনরুদ্ধারের গতি।’
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ২৬ মার্চ থেকে দেশজুড়ে জারি হয় লকডাউন। প্রায় তিন মাস বন্ধ রাখা হয় পোশাক শিল্প খাত। এডিবি-এর কান্টি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ মনে করেন, সরকার ভালোভাবে এ সংকট মোকাবিলা করেছে। যথাযথ অর্থনৈতিক উদ্দীপনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘রফতানি ও রেমিটেন্স বাড়ায় আমরা উৎসাহ পেয়েছি। আশা করছি এ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া টেকসই হবে। প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।’