করোনার দুর্যোগে মানুষের মন জয় করেছে ‘রাঙ্গুনিয়া হেলথ কেয়ার হসপিটাল’

119

মহামারী করোনার এসময়ে নিজেদের ঝুঁকিতে রেখে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান অক্ষুণœ রেখেছে রাঙ্গুনিয়া হেলথ কেয়ার হসপিটাল। ২৪ ঘণ্টাই এই হাসপাতাল খোলা রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে রাঙ্গুনিয়া ও পার্শ্ববর্তী পার্বত্য এলাকার জনসাধারণের মন জয় করেছে হাসপাতালটি। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকায় জঠিল রোগে আক্রান্তদের চট্টগ্রামে যেতে হচ্ছে না। এ হাসপাতালটি চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালের শাখা হিসেবে প্রতিষ্টার পর থেকে নিবিড় সেবা দিয়ে যাচ্ছে। করোনা ভাইরাসে যেখানে উপজেলা সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার সংকটে চিকিৎসাসেবা প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে অসহায় দুস্থ রোগীদের জঠিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রীদের সেখানে প্রতিদিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিবিড় চিকিৎসা সেবা প্রদান করে এলাকার চিকিৎসা সেবার বিশ^স্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। উপজেলার ৪ লক্ষাধিক জনসাধারণের জন্য একটি উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতাল ও ১৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতালে ৪ জন ডাক্তার থাকায় চিকিৎসা সেবা অনেকটা নিভু নিভু অবস্থা। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আরো বেহাল দশা। উপজেলায় ২টি বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে প্রতিষ্ঠার ১ম বছরের মধ্যে মরিয়াম নগর চৌমুহনীতে সেন্ট্রাল হাসপাতাল বন্ধ রয়েছে। চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতাল রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা দিতে না পারায় রাঙ্গুনিয়ার স্বাস্থ্য সেবা গরীব দুস্থদের জন্য অনেকটা অধরাই রয়েছে। এসব অসহায় জনসাধারণ একটু কিছু হলে চট্টগ্রাম শহরে খ্যাতনামা হাসপাতালগুলোতে ছুটতে হয়। আর এ উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমটিার। তাও চট্টগ্রামÑকাপ্তাই সড়কের বেহাল দশায় মাঝপথে অনেক রোগীকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। অনেকে গ্রামের মানুষ বলে খ্যাতনামা হাসপাতালগুলো আশানুরুপ চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। যেটুকু পাওয়া যায় তাও আবার অনেক অর্থের প্রয়োজন পড়ে। সব মিলিয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা অসহায় রোগীরা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন। এরই মাঝে রাঙ্গুনিয়া হেলথ কেয়ার হসপিটাল উপজেলার চিকিৎসা সেবার সংকট দূর করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবায় উপজেলার তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। রাঙ্গুনিয়া হেলথ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টাারের জেনারেল ম্যানাজার মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, ৫তলা বিশিষ্ট ২৫ শয্যাবিশিষ্ট সর্বাধুনিক হাসপাতালের অবকাঠামো, সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসাসেবা, আধুনিক ল্যাব, ২৪ ঘন্টা ইমারজেন্সি সার্ভিস, আধুনিক ল্যাব, ২৪ ঘন্টা প্যাথলজি সার্ভিস, আউটডোর দিনে রাতে খোলা থাকে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে অপারেশন থিয়েটার পরিচালনা, অটো ক্ল্যাব মেশিনের মাধ্যমে জীবানু দূর করা. শতভাগ হাইজেনিকযুক্ত ডেন্টাল ইউনিট, কসমেটিক পদ্ধতিতে খতনা, আধুনিক এক্সরে মেশিন, ২৪ ঘন্টা এ্যাম্বুলেস সার্ভিস ও দুর্গম এলাকায় রোগীদের হাসপাতালে আনা নেয়ার জন্য বিশেষ যানবাহনের সুবিধা রয়েছে এই হাসপাতালে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা রযেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে বহির্বিভাগে সার্বক্ষণিক সেবা পাবেন জটিল রোগীরা। প্রসূতির চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক মহিলা চিকিৎসকের উপস্থিতি রয়েছে। দক্ষ সেবিকাসহ চিকিৎসা সেবার সকল সুবিধা একই ছাদের নিচে পাওয়া যাবে। হাসপাতাল অফিস সূত্র জানায়, হাসপাতালে সব ধরনের অপারেশন, জরুরি বিভাগ, মেডিসিন, সার্জারি, গাইনী, প্রসূতি , মা, শিশু , নাক, কান, গলা, বক্ষব্যাধি ও হৃদরোগ, চর্ম, যৌন এলার্জি, ডায়াবেটিস, অর্থোপেডিক, নিওরোলজি, ইউরোলজি, এনআইসিইউ, ডেন্টাল রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হবে। ডায়াগনস্টিক সুবিধার মধ্যে জাপানী (ফুজি) মেশিনে শতভাগ ডিজিটাল এক্সরে, কালার আল্টাসনোগ্রাম, কম্পিউটার এনালাইজার, ইসিজি, প্যাথলজি, ইলেক্ট্রোলাইট, ইকো-কার্ডিওগ্রাম, হিমাটোলজি, বায়োকেমিস্ট্রি মাইক্রোবায়োলজি, ইমিউনোলজি, হিস্ট্রোপ্যাথলজি, ভেক্সিনেশন, স্বল্প খরচে মাস্টার হেলথ চেক আপ, মেডিকেল চেকআপ, সব ধরনের হরমোন পরীক্ষা করা হয়।
হাসপাতালের হিসাব বিভাগের প্রধান সুলতান মোহাম্মদ টিপু জানান, এ হাসপাতালে গরীব রোগীদের জন্য অনেক ছাড় দেওয়া হয়।
হাসপাতালে জটিল রোগে চিকিৎসাধীন চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের হিন্দুপাড়া গ্রামের শেখর বিশ্বাস জানান, জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আমি এখানে ভর্তি হয়েছি। এখন আমি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিবিড় সেবায় আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থ। আমাদের মত মানুষের শহরে গিয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসা করানো অসম্ভব। হাসপাতালটি ছিল বলে অল্প খরচে আমরা জটিল রোগের চিকিৎসা করাতে পেরেছি। এখানকার ডাক্তার ও নার্সদের সেবা খুবই ভাল। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় রোগীদের মন ভাল রাখে। এ হাসপাতালের চিকিৎসায় আমরা শতভাগ ভরসা রাখতে পারি।
চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর জানান, শহর ছেড়ে গ্রামে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে চিকিৎসা সেবার বিশ্বস্থ প্রতিষ্ঠান এ হাসপাতালটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শহরের মানের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। রাঙ্গুনিয়া হেলথ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টাারের মেডিক্যাল ডাইরেক্টর ডাক্তার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম রুবেল জানান, আমরা হাসপাতাল প্রতিষ্টার শুরু থেকে সেবার মনোভাব নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমরা আমাদের রোগীদের সেবাটা দিয়ে রোগ সারিয়ে তুলি। মহামারী করোনা রোগের এ সময়ে নিজেদের সেরা সেবাটুকু দিয়ে যাচ্ছি।
হাসপাতালের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ডাক্তার মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, গ্রামে আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ নিয়ে গত ৬ বছর আগে আমরা এ হাসপাতালটি প্রতিষ্টা করি। আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে এ হাসপাতালকে ঘিরে।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাক্তার এটিএম রেজাউল করিম জানান, সম্পূর্ণ চিকিৎসা সেবার মনোভাব নিয়ে হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু করেছি। ব্যবসা নয় এলাকার মানুষকে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। হাসপাতাল ঘিরে মানুষের সেবাধর্মী বহুমুখী কার্যক্রমের পরিকল্পনা রয়েছে।