করোনার দুর্যোগে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দেখা নেই

27

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় শুরু থেকে সাধারণ মানুষের পাশে সক্রিয় রয়েছেন নগর বিএনপির কয়েকজন নেতা। এরমধ্যে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার জন্য কেন্দ্রীয় নির্দেশনাও এসেছে। ঘুরে ফিরে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর ও নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ-রাই আছেন শুধু মাঠে।
তাদের সাথে নিচের সারির কিছু নেতারাও বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত। তবে নগর বিএনপির অভিভাবক হিসাবে পরিচিত সিনিয়র নেতাদের কারো দেখা নেই সাধারণ মানুষের এই দুর্দিনে।
করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে নগরের অন্তত চৌদ্দ হাজার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন সদ্য স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। ২০ হাজার পরিবারের কাছে সহায়তা পাঠানোর টার্গেট নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল থেকে নগরজুড়ে ধারাবাহিকভাবে হতদরিদ্রদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন তিনি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় তার উপহার পৌঁছে যাচ্ছে। তাছাড়া চিকিৎসক এই নেতা ফেসবুক পেজে লাইভে এসে নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছেন টেলিমেডিসিন সেবা। নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগে তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতামূলক মাস্ক ও হ্যান্ড সেনিটাইজার বিতরণ করেছিলেন। শুধু তাই নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের অসহায়ত্ব বিবেচনা করে কিছুক্ষেত্রে বিকাশের মাধ্যমে টাকা দিয়েও সহায়তা করছেন শাহাদাত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরবাসীর এই দুর্যোগে বিএনপির একদম তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ছাত্রদল, যুবদলসহ সকল নেতাকর্মীরা যার যার অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আমি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি হতদরিদ্র মানুষের পাশে থাকার। যতদিন পারি এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার পরিবারের কাছে সহায়তা পাঠানো হয়েছে। ২৯ এপ্রিল থেকে আমি নিজ হাতে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছি। রমজানের মধ্যে ২০ হাজার পরিবারের কাছে সহায়তা পাঠানোর টার্গেট আছে।
সিনিয়র নেতারা মাঠে না থাকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ডা. শাহাদাত। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। একজন চিকিৎসক হিসাবে ফেসবুক লাইভে স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সবাইকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শগুলো আমলে নিতে হবে।
নগরীর অলিগলিতে জরুরি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছুটি চলেছেন জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে দিনের বেলায় খাদ্যসমাগ্রী নিয়ে তিনি যেমন ছুটে যাচ্ছেন। তেমনি রাতের বেলায় মধ্যবিত্তদের ঘরে ঘরে পদচারণা রয়েছে তার। ঘরবন্দী মানুষ যেন অনাহারে না থাকে, সে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও কি সহায়তা করেছেন তা বলতে নারাজ এই নেতা। রাতদিন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় সমান তালে পাঠাচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী। অনেক জায়গায় নিজ দলের কর্মীদের মাধ্যমেও বিতরণ করছেন এসব সামগ্রী।
এ বিষয়ে কথা হলে মুহাম্মদ শাহেদ বলেন, বিএনপি গণমানুষের দল। এটি লুটরাজের কোনো দল নয়। মহামারির এই সময়ে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা সামর্থ অনুযায়া মানুষের পাশে সাহায্যের সাথ বাড়িয়েছি। পক্ষান্তরে সরকার দলীয়রা ভাগাভাগিতে আছে। আগে আমাদের পদচারণা ছিলো কোর্টের বারান্দায়, এখন জনগণের দুয়ারে দুয়ারে।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশনা আছে, যার যতটুকু আছে সেখান থেকে সহায়তা করার। প্রত্যেক নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকার মানুষের পাশে সেভাবে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। মানুষকে নিয়েই বিএনপির রাজনীতি। মানুষের পাশে বিএনপির প্রত্যেকটা নেতাকর্মীরা আছে।
গতকাল পর্যন্ত ছয় হাজার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর। ২৮ রমজান পর্যন্ত তিনি তার এ ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখবেন। বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী সহায়তার পাশাপাশি ইফতারি, রান্না করা ডিম খিচুড়িও বিতরণ করছেন বক্কর। অন্তত ১২ হাজার পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী সহায়তার টার্গেট আছে আবুল হাসেম বক্করের। বক্করের এ কার্যক্রমে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে কাজে লাগনো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে আবুল হাসেম বক্কর বলেন, আমি ৬ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি। ২৮ রমজান পর্যন্ত ১২/১৩ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসহায়তা দেয়ার টার্গেট আছে। অঙ্গসংগঠন দিয়ে ইফতারী বিতরণ করা হচ্ছে। ডিম খিচুড়ি রান্না করে বিতরণ করা হচ্ছে। আলেম-ওলামাদের মাঝেও সহায়তা করা হচ্ছে। বিএনপির নেতারা সবাই যার যার অবস্থান থেকে সাধারণ মানুষের পাশে আছে।
সিনিয়র নেতারা মাঠে না থাকা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তা এড়িয়ে গিয়ে আবুল হাসেম বক্কর বলেন, ভাইরাসটি মহামারিতে রূপ নিয়েছে। বিভিন্নভাবে মানুষের মধ্যে আক্রমণ করছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা কয়েকজন ঝুঁকি নিয়ে মানুষের মাঝে খাদ্যসমাগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি। খসরু ভাই, নোমান ভাইও নিজ নিজ এলাকায় দিয়েছেন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের এই দুর্ভোগে পাশে থাকার।
করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর নিজ এলাকায় খাদ্যসহায়তা দেয়া শুরু করেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহব্বায়ক আবু সুফিয়ান। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্য নেতারা সামনে আসলেও অনেকটা পিছিয়ে পড়েন আবু সুফিয়ান।
তবে করোনার এই দুর্যোগকালীন মুহুর্তে নগর বিএনপির অভিভাবক হিসাবে যাদের বিবেচনা করা হয় সেসব নেতাদের কারো দেখা পাচ্ছে না নগরবাসী। নগরীর কোথাও এসব অভিভাবকদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সাধারণ মানুষের দুর্দিনে মধ্যসারির নেতারা সাহায্যের হাত বাড়ালেও ঘরের মধ্যেই আছেন এসব নেতা। তাদের নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও তৈরি হচ্ছে ক্ষোভ।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেতারা প্রচুর সহযোগিতা দিচ্ছে। সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। এরমধ্যেও কঠিন সময়ে নেতাকর্মীরা যার যার ক্ষমতা অনুযায়ী প্রচুর সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি। প্রতিটি ওয়ার্ডে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাই সামর্থ অনুযায়ী এগিয়ে এসেছে। এটা পর্যায়ক্রমে চলতে থাকবে। আমরা মনিটরিং করছি। আমাদের না দেখার কিছু নেই। বড় ছোট বলে এখানে কিছু না। এই সমস্যা একদিনে শেষ হয়ে যাবে না। সবাই পর্যায়ক্রমে এগিয়ে আসবে।
একই প্রসঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করা হলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক নগর বিএনপির সভাপতি মীর মোহাম্মদ নাসিরুদ্দিন ফোন রিসিভ করলেও ব্যস্ততার অজুহাতে কথা বলেননি।