করোনার আরেক যোদ্ধা গণমাধ্যমকর্মী

19

মুহাম্মদ মহরম হোসাইন

হে মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
আপনি বঙ্গকন্যা, আপনার রক্তে মিশে আছে বাংলাদেশের স্হপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত। বঙ্গবন্ধু জীবদ্দশায় সর্বদা বাংলার দুঃখি ও মেহনতি মানুষের কথা ভেবেছেন। যৌবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কারাগরে কাটিয়েছেন মানুষকে ভালোবেসে। তার মন প্রাণ ও অন্তর জুড়ে ছিলো বাংলার জনগণ। প্রতিনিয়ত যতটুকু এদেশের অবহেলিত, নির্যাতিত ও হতদরিদ্রসহ আপামর জনসাধারণের কথা ভেবেছেন এর এক সিকিভাগও তিনি নিজ পরিবারসহ আপনাদের (সন্তান) কথা ভাবেননি। ৭৫ পরবর্তি সময়ে সেই মহান ব্যক্তিকে বাংলার কিছু কুলাঙ্গার রাতের আধারে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার লাল সূর্যকে অর্ধনিমিত করেছিলো, যা কারবালার মর্মান্তিক ঘটনারই নামান্তর। এ হত্যার কারণে জাতি হিসেবে আমরা হলাম কলঙ্কিত। আর দেশ হারালো এক মহান মায়াবি নেতা। হায়নারা নিয়ে নিলো রাষ্ট্র ক্ষমতা। জারি করলো পিতৃহত্যার বিচার না হওয়ার অদ্যাদেশ। মুহ‚র্তে থমকে গেলো হতদরিদ্রও মেহনতি মানুষের ভাগ্যের চাকা। আর অন্যদিকে বদলাতে শুরু করলো লুটেরা, মুনাফাখোর, চোরাকারবারি, মজুদদার ও গরিব শোষণকারীদের ভাগ্যের চাকা। কন্ঠরোধ করা হলো স্বাধীনভাবে লেখার অধিকার। অতঃপর রচিত হলো একেক কাব্য-উপকাব্য, বিকৃত ও ছিন্নভিন্ন করা হলো ইতিহাসের পাতা।
অবশেষে ভাগ্য বিড়ম্বিত জাতির মুখে হাসি ফুটাতে পিতার মত আপনিও সেদিন বীরদর্পে পা রেখেছিলেন স্বদেশের মাটিতে। করেননি জীবনের মায়া। তারপর বাকীটা কেবল ইতিহাস। সকলের জানা। মানুষের জীবনমান উন্নয়নে হার মানেননি কোন অপশক্তির কাছে। পিতার স্বপ্ন, দৃঢ় মনোবল, কাজের স্পৃহা ও সর্বোপরি গণমানুষের দোয়ার বদৌলতে কোন বাধায় আপনাকে লক্ষ্যে থেকে সরাতে পারেনি। এমনকি কোন বন্দুকের নলের গুলিও। আপনার চলার পথেও সেদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাশে ছিলো গণমাধ্যমকর্মীরা।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জয়ী হলেন আপনি। জয় হল মানবতার। জয় হলো মেহনতি মানুষের। বাংলার মানুষ তাদের পিতৃহত্যার কলঙ্ক ঘুচাতে আপনার দলকে অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় আসীন করেছিলো। কারণ আপনি হলেন সে মহান নেতার যোগ্য উত্তরসূরি। আপনার শিরা-উপশিরা ও ধমনিতে বইছে সেই তেজোদীপ্ত রক্ত। যার একটি আঙ্গুলের হেলানে একাত্তরের ৭ মার্চ বাংলার সাড়ে ৭ কোটি মানুষ সেদিন ‘জয় বাংলা’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিলো জীবন উৎসর্গ করতে। শেখ রেহানাসহ আপনি সেই পিতার একমাত্র বেঁচে থাকা কান্ডারী। আপনার দু’নয়নের আলোর প্রখরতা বাংলার ৬৪ জেলার আনাচে কানাছে প্রতিফলিত। ঘরের নববধূ থেকে আবাল, বৃদ্ধা, যুব-কিশোর ও মাটিতে লুটোপুটি খাওয়া শিশুসহ সবাই আপনার উন্নয়নের জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় রাঙায়িত। সবার একবাক্য আপনার হাতেই দেশ ও জনগণ নিরাপদ।
আপনিও পিতারমত দিবানিশি মানুষকে নিয়ে চিন্তা করছেন। যার সুফল মানুষ ইতোমধ্যে ঘরে ঘরে পেতে শুরু করেছেন। আপনাকে পেয়ে আমরা ধন্য। ধন্য জাতি। এখন গোটা বাঙালির আপনি হলেন একমাত্র আলোর দিশারী।
হে নেত্রী, আপনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশ যখন উন্নয়নের রোলমডেলে এগিয়ে চলছে, ঠিক সেই মুহ‚র্তে মহামারী করোনা ভাইরাসের করল গ্রাসে লন্ডভন্ড গোটাবিশ্ব। আমাদের দেশেও এ ভাইরাসে আজ আক্রান্ত। আপনার সঠিক দিকনির্দেশনায় ডাক্তার, নার্স, সেনাবাহিনী, পুলিশ সহ সরকারি কর্মকর্তাসহ সবাই যার যার অবস্হান থেকে লড়ে যাচ্ছে এ প্রাণঘাতী করোনার বিরুদ্ধে। লড়াইয়ে পিছিয়ে নেই আমরা সংবাদকর্মীরাও। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনার সর্বশেষ আপডেট তথ্য পৌঁছে দিতে ব্যস্ত। জনগণের কাছে প্রচারের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে করোনার ভয়াবহতা ও পরিত্রাণ পাওয়ার কলা-কৌশল। অলস ঘরে বসে থাকা মানুষগুলো কেবল করোনার সবশেষ পরিস্থিতি জানতে দৃষ্টি টিভি চ্যানেলের খবরের দিকে। এছাড়া সবাই যখন এই মহামারী পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যস্ত এ সুযোগে কিছু মুনাফাখোর, মজুদদার ও চোরাকারবারি সিন্ডিকেট ব্যস্ত নিজের আঁখের গোছাতে। এদের কেউ দমাতে পারছেনা। তাদের সাথে জড়িত আছে কিছু অসাধু রাজনীতিবিদ। এঁদের বিরুদ্ধে যেই কথা বলেছে তাদের নির্যাতিত, লাঞ্ছিত এমন কি জীবন দিতে হয়েছে। এসব চিত্রও গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিনিয়ত তাদের লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরছেন। আমিও গত ৭ এপ্রিল পণ্যমূল্য বেশি রাখার দাবির প্রতিবাদ করতে গিয়ে এদের হাতে নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হয়েছি। কিন্তু দমে যাইনি।
হে বঙ্গকন্যা করোনা পরিস্থিতিতে আপনি বিভিন্নখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন। তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু এ প্রণোদনা ঘোষণা থেকে শুধু বাদ পড়লো গণমাধ্যমকর্মীরা। চিকিৎসক, নার্সরা ঝুঁকিতে, তারা পিপিই পেলেন, প্রণোদনাসহ বীমা পেলেন। ব্যাংকসহ অন্যান্য সরকারি অফিস ঝুঁকিতে। দীর্ঘ ছুটি পেলেন। ছুটির সময়ে যারা অফিস করছেন তারা প্রণোদনা পাবেন। অতচ আমরা হতভাগা গণমাধ্যমকমিরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদ সংগ্রহ করছি আমাদের কোন পিপিই নেই, নেই কোন প্রণোদনা। মাস শেষে বেতন পাবো কিনা তারও নেই কোন গ্যারান্টি। ইতোমধ্যে ৬ জন সাংবাদিক করোনা আক্রান্ত হলেও সরকারকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা ঝুঁকিতে আছি। যেমন, ‘কাদম্বীনি মরিয়া প্রমাণ করিলো সে বাঁচিয়া ছিলো। আমাদেরও দশা তাই হবে, ‘মরে প্রমাণ করতে হবে আমরা করোনায় আক্রান্ত ছিলাম।’ আমরা এখনও করোনার সংবাদ সংগ্রহে মাঠে-ঘাটে, রাজপথে ও অফিসে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা কি পেলাম? আমাদের পরিবার, আত্মীয় স্বজন যখন প্রশ্ন করে তখন আমরা সাংবাদিকরা কোন উত্তর দিতে পারিনা। মাথা নিচু করে রাখি কারণ প্রশ্নের জবাব আমাদের জানা নেই। মা বাবা ভাই-বোন, স্ত্রীদের কোন উত্তর না দিয়েই পরের দিনের এসাইনমেন্ট কি হবে তার স্বপ্ন দেখে ঘুমিয়ে পড়ি।
মমতাময়ী নেত্রী, প্রসঙ্গক্রমে বলতে চাই আপনার সরকারের সময় অবাধ তথ্য স¤প্রচারের লক্ষ্যে নতুন নতুন পত্রিকা, রেডিও ও টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছেন। এতে করে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারজন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এতে বেশি লাভবান হয়েছেন মালিক কর্তৃপক্ষ। মালিকদের ভাগ্য উন্নয়ন হলেও জীবনমান বাড়েনি সংবাদকর্মীদের। যা বেড়েছে তা শুধু কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে।

লেখক : সাংবাদিক