করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা ও চিকিৎসা দুটিই নিশ্চিত করতে হবে

160

চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে সৃষ্ট প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (২০১৯-এনসিওভি-করোনা) এরই মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা গেছে। তবে তা এখনো বিস্তার ঘটেনি। চীন থেকে ফেরৎ যাত্রীদের মেডিক্যাল টিম কর্তৃক চেকআপ এবং দক্ষিণ পূর্ব সীমান্ত এলাকায় কঠোর সতর্কতা নেয়া হয়েছে, যাতে এ ভাইরাস কোনভাবেই বিস্তার ঘটতে না পারে-সে ব্যাপারে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা যায়। আকঙ্কের বিষয় হচ্ছে এ ভাইরাসটি ইতোমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপ-আমেরিকার ১২টি দেশে পৌঁছে গেছে বলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে; এমনকি আমাদের পাশের দেশ নেপালেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। চীনসহ বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় হাজার অতিক্রম করছে আর আক্রান্তদের মধ্যে অন্তত ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। উদ্বেগজনক বিষয় হল, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নিবিড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এ দুই দেশে যাতায়াত করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশেও বিপজ্জনক এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে কর্তৃপক্ষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব প্রবেশদ্বারে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়ে নিশ্চিত করেছেন- এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে গত বৃহস্পতিবার চার শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে চীন থেকে ফেরৎ আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে অন্তত ২জন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজনের সর্দি -কাশিতে আক্রান্ত হয়েছে। বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্যই নিশ্চিত করেছে, তাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসাসহ পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। তবে স¤প্রতি চীন থেকে দেশে আসা একজন পিএইচডি গবেষক চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকার কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়টি হতাশার। আমরা এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন মনে করি। একইভাবে স্থলবন্দরগুলোতে এ ভাইরাস নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্র স্থাপন জরুরি।
উল্লেখ্য যে, চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ ৬ ধরনের করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়। সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম সংক্ষেপে ‘সার্স’ও এক ধরনের করোনাভাইরাস। ২০০২ সালে এ ভাইরাসে বিভিন্ন দেশে ৮ হাজার ৯৮ জন আক্রান্ত হন এবং তাদের মধ্যে ৭৭৪ জন মারা যান। গবেষকদের মতে, সামুদ্রিক মাছের বাজার এ-জাতীয় ভাইরাসের উৎসস্থল। করোনাভাইরাস সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব বেশি তথ্য পাওয়া না গেলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন- অত্যন্ত দ্রুত ছড়াতে সক্ষম এ ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করে হাঁচি-কাশির মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাসটির সংক্রমণের প্রধান লক্ষণগুলো হল শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও কাশি; পর্যায়ক্রমে শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল ও নিউমোনিয়ার মধ্য দিয়ে এটি অবসান ঘটায় জীবনের। উহানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন ৫০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছে বলেছেন, গণমাধ্যমে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেয়ার যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি রয়েছে। উহানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে দ্রুত উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এছাড়া করোনাভাইরাস যেহেতু ছোঁয়াচে, তাই এ ব্যাপারে প্রত্যেকের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে- হাঁচি-কাশিরত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি রুমাল-টিস্যু-গামছা দিয়ে নাক-মুখ ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে; প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া সব ধরনের ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খাওয়ার পাশাপাশি দুই হাত বারবার সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত। একজন মানুষ নিজের অজান্তেই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের শিকারে পরিণত হতে পারেন, কাজেই সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সবার, বিশেষ করে শিশুদের বিড়াল, কবুতর, কুকুর ইত্যাদি পোষা প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। করোনাভাইরাস সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি সরকার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে- এমনটি প্রত্যাশা আমাদের।