করোনাকালে প্রকৃতির দর্শন

44

মুশফিক হোসাইন

একটি ভাইরাস কোভিড-১৯ সাম্প্রতিক কালে সারা বিশ্বকে নাড়া দিচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত। মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ৫ লাখের কাছাকাছি। প্রায় ছয় মাস চলছে কার্যকর প্রতিশেধক এখানো আবিষ্কার হয়নি। চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট ঔষধ সনাক্ত হয়নি। এমতাবস্থায় আর কতোদিন এ ভাইরাস দাপিয়ে বেড়াবে বলা মুশকিল। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞর পরামর্শ ‘ঘরে থাকুন-সুস্থ থাকুন’। এ পরামর্শের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন ঘোষিত হয়। কোন কোন দেশে জরুরি অবস্থাও জারী করা হয়েছিল। সামাজিক জীব মানুষকে প্রাণ রক্ষার তাগিদে বলা হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। বিশ্বের প্রায় সকল দেশের মানুষ লকডাউন চলাকালীন সময়ে ঘরবন্দী ‘গৃহবাস’ সময়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ কীভাবে সময় কাটাচ্ছে, কিভাবে দিন যাপন করেছেন। এ নিয়ে গবেষণা কিংবা মহৎ সাহিত্য রচনা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
সুস্থ-সবল মানুষ কিভাবে তার দিন অতিবাহিত করছে। বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণরা? এ নিয়ে উৎসাহ দিন দিন বাড়বেই। এ ভাইরাস মানব সমাজ ব্যবস্থাকে প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দিচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব আবার এক বিশ্বমন্দা ও বেকারত্বের মুখোমুখি হতে পারে। বৈশ্বিক ও দেশিয় সংকটময় সময়ে শিশু ও কিশোর এবং প্রবীণরা কিভাবে দিন যাপন করছে, তার কিঞ্চিত বিবরণ সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। শিশু-কিশোর ও প্রবীণদের সামাজিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমাজের ভাবনার অবকাশ আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। শিশু-কিশোরদের সতীর্থদের সাক্ষাত ও প্রায় বন্ধ। একইভাবে যারা প্রবীণ, তাদের নিয়মিত কর্মস্থরে যাওয়ার প্রয়োজন না থাকলেও নিয়মিত ধর্মকর্মের জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ও যাওয়া ও সীমিত হয়ে গেছে। চিকিৎসক ও স্বাস্ত্যরক্ষার হাঁটাহাঁটি করতে ঘরের বাইরে যাওয়া নেই। তাহলে কী করে প্রবীণরা সময় কাটাচ্ছেন? আমার পরিবারে এখন শিশু-কিশোর নেই। ঘরে আমরা প্রবীণরাই আছি। ইতিমধ্যে নগরের অনেক অঞ্চল লাল, হলুদ, সবুজ অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন সরকার। জামালখান এলাকা লাল অঞ্চলের আওতায়। দেশে করোনা সনাক্ত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মোতাবেক ‘গৃহবাস’ চলছে। জানি না করে শেষ হবে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য যেহেতু বাইরে হাঁটাহাটি সম্ভব নয় সেহেতু নিয়ম করে ঘণ্টাখানেক ঘরের ভেতরই হাঁটি। সরকার এবং বিশ্বসংস্থা বলছে, প্রবীণদের অধিকতর সুরক্ষায় থাকতে হবে। তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে করোনায় আক্রান্ত মৃতের সংখ্যায় ষাটের শীর্ষে। তাই পারিবারিক সদস্যরা আমরা উপর কড়াকড়ি চোখ রাখছেন। ফলে ঘরে থেকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনদের খবরাখবরের জন্য মোবাইল নির্ভরতা বেড়েছে। এর মাঝে এবারের বাজেটে মোবাইল ও ইন্টারনেটের উপর সম্পূরক কর ১০% শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে সরকার জিজিটাল বাংলাদেশের প্রতি গভীর মনযোগ দিচ্ছেন, সেখানে এ সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক নয় কী? বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও প্রবীণরা এখন অনলাইন কেন্দ্রিক। এছাড়া করোনা সংক্রমণ বাড়ার ফলে অনলাইন কেনাকাটা, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বেড়েছে, সে ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে মোবাইল ও ইন্টারনেটে কর বৃদ্ধি অযৌক্তিক মনে করি। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক মহামারী ও বিশ্ব মন্দা বিবেচনা এবং সরকারের ডিজিটাল উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্র বাস্তবায়নের স্বার্থে এই কর বৃদ্ধি প্রত্যাহার করার জোরদাবী জানাচ্ছি। অভিভাবকগণ ছাত্র-ছাত্রীদের অনলাইন শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যায় পড়তে পারেন।
ইতিমধ্যে জাতীয় অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় ড. আনিসুজ্জামান, প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিক মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নন্দিত মেয়র কামরান আহম্মদ, সুন্নি আন্দোলনের পুবারা আল্লামা হাশেমী, বায়তুশ শরফের পীর আল্লামা কুতুব উদ্দিন আহমদ। কবি বন্ধ আহমেদ খালেদ কায়সারসহ ও বহু চিকিৎসক, সেবা কর্মী, পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদসহ অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, করোনা মানুষকে এবার মানুষত্বহীন করে তুলছে। পিতার মৃত্যুর পর সন্তান লাশ গ্রহণ না করা কোন কোন গ্রামে মৃতকে দাফন করতে না দেওয়া, মৃত ব্যক্তি দফনের ধর্মীয় রীতি নীতি না মেনে কবর দেয়া ইত্যাদি করুণ দৃশ্য দেখতে হচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনা ইচ্ছে, মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্মুখ যোদ্ধা এক চিকিৎসককে হত্যার ঘটনা ও ঘটে। সামান্য একটি ভাইরাস পৃৃথিবীর মানুষকে এতো স্বার্থপর করে তুলল কেন! ইটালিতে করোনা আক্রান্ত প্রবীণদের প্রবীণ নিবাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ভেন্টিলেটর ও আইসিউ’র ক্ষেত্রে প্রবীণদের এড়িয়ে তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। হায়রে মানব সন্তান! হয়ত বাংলা প্রবাদই সত্য; “চাচা আপন জান বাঁচা। এতো গেল মৃত্যুর কথা, যারা বেঁচে আছে তাদের কী অবস্থা? খোঁজ খবর নিলে দেখা যাবে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পরিবারে করোনা উপসর্গ নিয়ে অনেকেই অসুস্থ। তাদের কথা অন্যত্র বলব।
আশা যাক নিজের প্রসঙ্গে। দীর্ঘ ৬৬ বছর জীবনে এমন বন্ধ্যা সময় অতিক্রম করিনি। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে উত্তাল ছিল জীবন। প্রতিনিয়ত পশ্চিমা হালাদারের হাতে মৃত্যু ভয় ছিল। ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ভয় ছিল। তখন আমাদের যুদ্ধে যাবার বয়স। যুদ্ধে ছিলাম। শত্রæকে খতম করার শপথে উদ্দীপ্ত ছিলাম। জয়ের স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। আর এখন অদৃশ্য এক শত্রæর বিরুদ্ধে সমগ্র দেশ নয় শুধু গোটা বিশ্ব যুদ্ধ করে যাচ্ছে। যে কোন সময় মৃত্যু জানা দিতে পারে অজান্তে। তাকে প্রতিরোধ করার কার্যকর প্রতিশেধক আজো আবিষ্কার করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। শুধু বলছেন “ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন” সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন; কিন্তু মানুষ যে সামাজিক জীব। তাই আবদ্ধতার কষ্টে মন ও মননকে স্থির রাখতে পারছে না। তবু আজ সামাজিকতার নিয়ম ভঙ্গ করে মানুষ গৃহবন্দী। আমিও গৃহবন্দী। এই গৃহবন্দী জীভনে অনেকেই গল্প কবিতা ও ছবি আঁকছেন, কেউ ভিটি, মুভি দেখছেন। কেউ ক্রেু ঘুমে আর সুস্বাদু খাবারে ব্যস্ত। আবার অনেকেই বিষণœতায় ভুগছেন। হয়ত জানালায় দাঁড়িয়ে দূষণমুক্ত আকাশ, বহুতল ভবন দেখছেন। আকাশের রঙ ও মেঘলালা এতো সুন্দর ও মোহময় তা নতুন করে আবিষ্কার করছেন।
আমিও ব্যতিক্রম নয়। আমি প্রকৃতি দেখাতে মজে গেলাম। নামায, হাঁটাহাঁটি, খাওয়া দাওয়া এবং ঘুমের পাশাপাশি প্রকৃতির মাঝে ডুবে গেলাম। প্রকৃতির বিভিন্ন অনুসঙ্গের মাঝে পাখি আমার প্রিয় অনুসঙ্গ।
এই কলামে আজ তাদের কথা লিখবো। হয়তো কয়েকটি ইস্যু হতে পারে; দেখা যাক, প্রথমত: দোয়েল পাখি, যারা আমার বারান্দায় বাস করে। আজ থেকে প্রায় ১১ বছর আগে দুই পাশের বারান্দায় পাখিদের বাসা তৈরি করার জন্য হাঁড়ি বেঁধে দেই। চড়–ই ও বুলবুলি বাসা বাঁধার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মারমুখী দোয়েল পাখির আক্রমণে তারা ফিরে যায়। গত ১১ বছর ধরে দোয়েল দম্পতির বংশ পরস্পরায় ওখানে শান্তিতে বংশ বিস্তার করছে। প্রতি বছর ছানা তোলার মৌসুমে ওরা ৩ থেকে ৪ চার ছানা তোলে। প্রতিবার তিন থেকে পাঁচটি। ধরে নিলাম গড়ে চারটি ছানা, তা হলে এক মৌসুমে অর্থাৎ বছরে ন্যূনতম ১২ থেকে ১৫টি ছানা তোলে। তারা বড় হয়ে প্রকৃতিতে উড়ে যায়। এ বছর ফেব্রæয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রথম ডিম পাড়ে এবং মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রথম ছানা তোলে। দ্বিতীয় বার মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ছানা তোলে। এখন তৃতীয় পর্যায়ের ছানা ফুটেছে। ছানা ফোঁটার পর মা-বাবা পালা করে খাবার আনে। তবে ডিমে তা দেওয়ার ক্ষেত্রে মা-পাখির ভূমিকাই বেশি। ছানা ফোঁটার প্রথম দিকে কোন শব্দ পাইনা। তখন মা-বাবার খাদ্য সগ্রহ দেখে বুঝি ছানা ফুটেছে। ছানারা যত বড় হবে ততই তাদের খাদ্য চাহিদা বেড়ে যায়। তখন তারা খাদ্যের জন্য চি চি শব্দ করে। ফরে মা-বাবার খাদ্য সংগ্রহে দৌঁড় ঝাঁপও বেড়ে যায়। এদের খাদ্য তালিকায় কীট পতঙ্গ, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেরুদÐী প্রাণির ছানা, ফল ও বীজ ইত্যাদি। তবে বেশি দেখা যায়, তেলাপোকা, সুয়োপোকা, ফড়িং, মাছি ও উহপোকা, কখনো কখনো ছোট টিকটিকি।
এখানে একটি কথা বলে রাখি। দোয়েল বাসা বানানোর পর যখন মা-পাখি ডিম দেয়, তখন বাবা পাখির মুখে গান ফোটে। দোয়েল এমনিতে গায়কী পাখি। আর যখন তার ছানা ফেটে, তখন তার আনন্দ আর ধরে না। সে তখন উঁচু খুঁটির উপর বসে মনের আনন্দে পাড়া মাতিয়ে গান করে। আবার বাসার আশেপাশে মানুষ, বিড়াল, কাক বা ক্ষতিকর কিছু দেখে তখন বাবা পাখি পাশে থেকে কীৎ কীৎ করে ছানাদের যেন সাবধান করে, খবরদার বাসা থেকে বের হবি না। সাবধানে থাকিস। তখন দেখি মা পাখি মুখে করে খাবার আনলে সরাসরি বাসায় ঢুকে না। আশেপাশে বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। তারা খুব সাবধানী পাখি। দোয়েল হলো নাগরিক পাখি। এরা মানুষের কাছাকাছি থাকতে ভালবাসে। যেখানে মানুষের বসবাস নেই সেখানে তাদের খুব একটা দেখা মেলে না।
দোয়েলের ছানারা ১৫ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে উড়তে পারে। প্রথমে তারা মা-বাবার সাহায্য নিয়ে উড়ে। এক্ষেত্রে বাবার ভূমিকা বেশি, ছানাদের পাখার পালক গজালে বাবা প্রথম একটি ছানাকে নিয়ে উড়াল দেয়। মা-বাবার তত্ত¡াবধানে আশেপাশের ঝাড়- ঝোটে, গাছের ডালে অল্প অল্প করে উড়ার প্যাকটিস করে। এভাবে একে একে ছানারা উড়ে ও স্বাবলম্বী হয়। ঐ সময় দোয়েল দম্পতি অত্যন্ত মারমুখী থাকে। আশেপাশে কাউকে ভিড়তে দেয়না। তখন তারা ক্রেক ব্রেক রুম স্বরে শব্দ করে। এ নিয়ে একটি ঘটনা বলি। বছর দুয়েক আগের ঘটনা। সেবার ছানা সবে বের করেছে। ঘটনাক্রমে ছানাটি ফ্লাই করতে গিয়ে গ্রিলের সাথে ধাক্কা খেয়ে বারান্দায় পড়ে যায়। ভীতু ছানা মা আমার ফুল গাছের ঝোপে লুকিয়ে পড়ে। আমি লনের তারে কাপড় শুকাতে যেই না গেলাম, অমনি মাথায় প্রচন্ড গতিতে খামছা ও ঠোকর। দেখি ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ভাবলাম ওরা আমাকে চিনতে পারেনি। যেই না তারে কাপড় মেলে দিতে হাত উঁচু করেছি -অমনি আবার হাতের আঙ্গুলে ঠোকার। দেখি আঙ্গুলের মাথায় গর্ত এবং রক্ত ঝড়ছে। বলে রাখি দোয়েলের পায়ের নখ ও ঠোঁট খুবই শক্ত ও ধারালো। এর আগে আমি যতবার লনে গিয়েছি বাবা পাখিটা শুধু ক্র্যাক, ব্লাক শব্দে সর্তকতা জারী করেছিল। আর একবার একটি কাক ছানার কাছে আসা মাত্রই তাকে নাস্তা নাবুদ করে ছেড়েছিল। তার চেয়ে বড় পাখি, বিড়াল, কুকুর, মানুষ কাউকে ছাড়ে না বাবা পাখি।
দোয়েল তার ছানাগুলো ফ্লাই করার পরবর্তী সাতদিন লেগে যায় সক্ষমতা অর্জন করতে। ডিম দেয়া থেকে ছানা উড়িয়ে দেয়া পর্যন্ত মাকে এতো পরিশ্রম করতে হয়ে, সে শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। বলা যায় বাচ্ছাদের সাবলম্বী করতে মায়ের উপর বেশ ধকল যায়। ডিম দেয়া, তা দেয়া, খাদ্য সংগ্রহগ, নিরাপত্তা ও তাদের সাবলম্বী করে উড়িয়ে দেয়া সত্যি শ্রম সাধ্য ব্যাপার। ছানাদের খাওয়ানো পর্যবেক্ষণ করি। দেখা যায় দিনের আলোতে প্রায় ১৪ ঘণ্টায় তারা খাদ্য সন্ধানে ৩৮৬ বার ফ্লাই করে এবং ছানাদের উদরপূর্তি করে। সাথে ছিল নিরাপত্তার দায়িত্ব। ছানারা বড় হয়ে আর বাবা-মার কাছে থাকে না। তারা অন্যত্র গিয়ে সংসার পাতে। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, একজোড়া দোয়েল তার সাম্রাজ্যের আশেপাশে অন্য দোয়েলকে বসবাস করতে দেয় না। তাদের এলাকায় তারাই সম্রাট। এ ক্ষেত্রে বাবা দোয়েল কোন আপোষ করে না। সাধারণত কোন উচ্চ স্থানে বসে বাবা দোয়েল যে শিষ দেয়, তা যতদূর পর্যন্ত যায়, সেটাই হলো তার সাম্রাজ্যের এলাকা। দোয়েল স্ত্রী পুরুষ সহজেই চেনা যায়। বাংলাদেশে অতি সুলভ পাখি। দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। আপনার লনে, বারান্দায়, ঘরের কোণায় হাঁড়ি বেঁধে দিন। পাখিরা তাতে সংসার গড়বে।
এবারের করোনা প্রকৃতিকে ভালোবাসার কথাই বলছে। প্রকৃতির প্রতি নৃংশষ আচরণের কারণে প্রকৃতি আজ ক্ষিপ্ত। মানব সমাজের অবর্ণনীয় অত্যাচারে প্রাণী জগত ও জীব শৃঙ্খলের উপাদান অনুসঙ্গ হারিয়ে যাওয়ার কারণে প্রকৃতিতে এ বিপর্যয়। প্রকৃতি একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আবর্ত হয়। কোন একটি যদি বিলুপ্ত হয়, তখন শৃঙ্খলার শেকল ছিড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হচ্ছে বাদুর বা অন্য কোন প্রাণি থেকে সর্বপ্রথম চিনে এ ভাইরাস ছড়ায়। কোন মধ্যবর্তী বাহন বিলুপ্ত হওয়াল সে বাদুরের উপর ভর করে। মানুষ বাদুর খাবে কেন? পৃথিবীর সকল প্রাণি খাওয়ার যোগ্য নয়। কিছু প্রকৃতির জন্য রাখা উচিত। এখন প্রকৃতি মেরামত হচ্ছে, সুতরাং মানবজাতি ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন। গৃহবাসে প্রকৃতি দর্শনের এটা প্রথম পর্ব। পরবর্তী পর্বে কাক।
লেখক : কবি, নিসর্গী ও ব্যাঙ্ক নির্বাহী (অব)