করইয়া নগর স্কুলের মোজাম্মেল হক স্যার সম্পর্কে কিছু কথা-

483

কবির মুহাম্মদ আশরাফ উল্লাহ

একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্রের ঋণ কখনো শোধ হবার নয়। তাই সেই শিক্ষক সম্পর্কে একজন ছাত্রের লেখা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু তারপরেও আমার একজন প্রিয় শিক্ষক নিয়ে দু’কলম লিখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। স্যার ছিলেন একটি বটবৃক্ষের ন্যায়। যে শাসন, মায়া মমতা, আর স্নেহ ও ভালোবাসার ছায়া পেয়েছিলাম, তা জীবনে কখনও ভুলার নয়।
স্কুল জীবনে প্রিয় শিক্ষক নিয়ে অনেক রচনা পড়েছি। কিন্তু ভালভাবে বুঝতে পারিনি। স্যারের সংস্পর্শে আসার পর বুঝতে পেরেছি প্রিয় শিক্ষক কাকে বলে ? আমি এমন একজন শিক্ষক পেয়েছিলাম, যাঁকে সারা জীবন শ্রদ্ধা করা যায়, যাঁর আদর্শে জীবন পরিচালনা করা যায়, যাঁর স্নেহের স্পর্শে আগামী দিনে ভালো কিছু করার প্রেরণা পাওয়া যায়। অনেকের মতো আমিও আমার প্রিয় শিক্ষকের মাঝে একজন বাবার সত্তাকে খুঁজে পেয়েছিলাম। চার বছর সৌভাগ্য হয়েছিল স্যারের আদর্শ গ্রহণের। সেই প্রিয় মানুষটি হলেন আমাদের করইয়া নগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক স্যার। জগতের চিরন্তন নিয়মে সেই প্রিয় স্যার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। এখন তার শূন্যতা প্রতিনিয়ত অনুভব করছি।
স্যারের বাড়ি আমতলি, বড়হাতিয়া, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম। স্যার আমাদেরকে ইংরেজি পড়াতেন। আমার ছোটবেলা থেকেই ভীষণ ইংরেজি ভীতি ছিল। তবে স্যারের কাছে শেখা ইংরেজি দিয়ে এখনো চলছি। তাঁর গুণের শেষ নেই। কখনো তিনি কঠোর শিক্ষক, কখনো স্নেহপূর্ণ পিতা, কিংবা কখনো বন্ধু।
যেদিন স্যারের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছিলাম, সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনো অজান্তেই চোখ ভিজে ওঠে। স্যারকে কবরস্থ করা হয়েছে তার প্রিয় গ্রামের বাড়িতে মায়ের পাশে। একজন মানুষের মৃত্যুর মাঝেই সব কিছু শেষ হয়ে যায় না, বরং শুরু হয় উজ্জ্বল ইতিহাস যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নতুন উদ্দীপনার পথ দেখায় ।
এস এস সি পাস করার পর, আমার উদ্দেশ্যে বলা স্যারের মহান কথা দিয়ে শেষ করবো। তিনি রেজাল্ট হবার পরে আমাকে ডেকে বললেন, “একটা কথা মনে রাখিস, স্কুল হচ্ছে নদী, আর কলেজ হচ্ছে সাগর, সাগরে অনেক ধরনের মাছ (ছোট, বড়, রাক্ষুসে) পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি কলেজে অনেক ধরনের মানুষ, বন্ধু বান্ধবী পাবি, খুব সাবধান বন্ধু নির্বাচনে, বেশি করে শুনবি, বলবি কম, ভাল করে পড়ালেখা করবি।” স্যারের অসাধারণ বাণী। সত্যিই যদি বন্ধু নির্বাচন ভুল হয় জীবন শেষ।
আমার মহান শিক্ষাগুরু, আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজের সুনাম ছড়িয়েছেন যা সর্বজনস্বীকৃত। শুধু স্যার নয়, তার স্ত্রীও শিক্ষকতা পেশায় খ্যাতি অর্জন করেছেন। ম্যাডাম কে আমরা পেয়েছিলাম সমাজ বিজ্ঞান ও বাংলা ক্লাসে। এখানো স্মৃতিতে ভাসছে সেসব দিনগুলোর কথা। স্যার এবং ম্যাডাম সুশিক্ষার আলোয় যেমন উজ্জ্বল তেমনি পরিবারকেও করছেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত। উনার বড় ছেলে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ব্যাংকে কর্মরত। মেঝ ছেলে জাপানের নাগোয়া ইউনিভার্সিটিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পিএইচডি করছেন। ছোট মেয়ে আন্তুর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি ও ব্যাংকিং মাস্টার্স শেষ করছেন ।
মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় এই গুণী শিক্ষককে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে দিন। আমিন।

লেখক : প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ