কম দক্ষ কর্মীদের ভিসা না দেওয়ার পরিকল্পনা যুক্তরাজ্যের

18

চূড়ান্তভাবে ব্রেক্সিট কার্যকরের পর থেকে কম দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের আর ভিসা দেবে না যুক্তরাজ্য। বুধবার এমন একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এতে নিয়োগকর্তাদের আহŸান জানিয়ে বলা হয়েছে, তারা যেন ইউরোপ থেকে আসা ‘সস্তা শ্রমিক’-এর ওপর নির্ভর না করে কর্মী ধরে রাখা এবং অটোমেশন প্রযুক্তি উন্নয়নের ওপর জোর দেন। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী রেস্টুরেন্ট, হোটেল, সেবা খাত এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় দক্ষতাহীন কোনও অভিবাসী চাকরি করতে পারবে না।
স্বরাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এর বাইরের যেসব নাগরিক যুক্তরাজ্যে আসতে চায়, তাদের ৩১ ডিসেম্বর ইউকে-ইইউ ফ্রি মুভমেন্ট বন্ধ হওয়ার পর একই মাপকাঠিতে যাচাই করা হবে। যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টি বলছে, এর ফলে তৈরি হওয়া ‘প্রতিকূল পরিস্থিতি’র কারণে শ্রমিক পাওয়া কঠিন হবে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন, এই নতুন ব্যবস্থার কারণে ‘সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও সেরারাই যুক্তরাজ্যে আসার সুযোগ পাবে।’
সরকার বলছে, তারা সার্বিকভাবে যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আগমন কমানোর চেষ্টা করছে। নিজেদের নির্বাচনি তফসিল অনুযায়ী একটি ‘পয়েন্টভিত্তিক’ অভিবাসন ব্যবস্থা তৈরি করতে চায় তারা। নতুন এই ব্যবস্থা অনুযায়ী, যেসব বিদেশি কর্মী যুক্তরাজ্যে আসতে চায় তাদের ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়া ‘অনুমোদিত স্পন্সরের’ অধীনে দক্ষতাসম্পন্ন কোনও চাকরিতে নিয়োগ পেতে হবে। তা নিশ্চিত করতে পারলে তারা ৫০ পয়েন্ট পাবে। যুক্তরাজ্যে কাজ করার অনুমতি পেতে হলে সব মিলিয়ে অভিবাসীদের ৭০ পয়েন্ট নিশ্চিত করতে হবে। এরমধ্যে যোগ্যতা, বেতন ও যে খাতে কর্মীর অভাব রয়েছে এমন কোনও খাতে কাজ করলেও পয়েন্ট পাওয়া যাবে। তবে সরকার জানিয়েছে, তারা কম দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিকদের অভিবাসনের জন্য পথ তৈরি করবে না।
ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বাধাহীন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টির সঙ্গে ‘খাপ খাইয়ে’ চলে। সরকার জানিয়েছে, নিয়োগকর্তারা যেন অভিবাসন পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল না থেকে যেন কর্মী ধরে রাখা, উৎপাদনশীলতা ও প্রযুক্তির উন্নয়নে বিনিয়োগ করে। এটিই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সরকার মনে করে নতুন কর্মী না বাড়িয়ে যেই ৩২ লাখ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিক যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি চেয়েছে তাদের দিয়েই শ্রমজাবারের চাহিদা মেটানো যেতে পারে। পাশাপাশি, কৃষিখাতে মৌসুমি শ্রমিক আসার অনুমোদিত পরিমাণ চার গুণ বাড়িয়ে ১০ হাজার করতে যাচ্ছে সরকার। এছাড়া ‘ইয়ুথ মোবিলিটি অ্যাগ্রিমেন্ট’-এর অধীনে প্রতি বছর ২০ হাজার তরুণ যুক্তরাজ্যে আসার সুযোগ পাবে।
সিবিআই এই প্রস্তাবের অনেকগুলোর সমর্থন করলেও তারা মনে করে কিছু প্রতিষ্ঠান ‘তাদের ব্যবসা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কর্মী কীভাবে পাওয়া যাবে, তা চিন্তা করে হিমশিম খাবে।’ এই প্রতিষ্ঠানের মহাসচিব ক্যারোলিন ফেয়ারবেয়ার্ন বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো জানে যে বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দেওয়া এবং কর্মীদের দক্ষতা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগের মধ্যে কোনও একটি করলে হবে না। অর্থনীতির উন্নয়নে দুটিই একাধারে চালাতে হবে।’ রয়েল কলেজ অব নার্সিং-এর আশঙ্কা, এই প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়নে জনগণের স্বাস্থ্য ও সেবার চাহিদা পূরণ হবে না। ‘সেবা খাতের সঙ্গে জড়িত ইউনিসনের সহ সম্পাদক ক্রিস্টিনা ম্যাকেনা বলেন, এ ধরনের প্রস্তাব ‘সেবা খাতের জন্য বিধ্বংসী।’ যুক্তরাজ্যের হোমকেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কম দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য সুযোগ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছে।