কম্পিউটার থেকে মুছে যাওয়া ডাটা উদ্ধার

110

কম্পিউটার ব্যাবহার করেন অথচ ডাটা ডিলিট নিয়ে বিপদে পড়েন নাই এমন লোক হয়ত খুব কমই আছে। আমরা অনেক সময় ভুলবশত বা ইচ্ছাকৃতভাবে ফাইল ডিলিট করে থাকি কিন্তু পরবর্তীতে সেই ডাটার প্রয়োজন হলে রিকভারি নিয়ে বিড়ম্ব^নার সম্মুখীন হতে হয়। কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের ডাটা রিকভারি নিয়ে আমাদের অনেক রকম ধারণা আছে। কেউ কেউ আবার ডাটা রিকভারি সফটওয়্যার সম্পর্কেও জানেন কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি এই ডাটা রিকভারির পিছনের ইঞ্জিনিয়ারিংটি কী? কীভাবে এটা সম্ভব? হ্যাঁ, আজকে আমি আপনাদের এই অসাধারণ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গল্প আর রিকভরির কিছু পদ্ধতি নিয়ে জানাব।
ডাটা রিকভারি নিয়ে জানতে হলে আগে জানতে হবে হার্ডডিস্ক কীভাবে কাজ করে। ম্যাগনেটিজম বা চুম্বকত্বের নাম আমরা সবাই জানি। ছোটবেলায় চুম্বক নিয়ে খেলেন নাই এমন কাউকে নিশ্চয়ই খুঁেজ পাওয়া যাবে না। হার্ডডিস্ক কাজ করে এই চুম্বকত্বের ওপর ভিত্তি করে। আমরা জানি লোহার টুকরায় প্রাথমিক অবস্থায় চুম্বকত্ব থাকে না তবে আপনি যদি একটি চুম্বক দিয়ে কোনো লোহার টুকরাকে বারবার ঘষতে থাকেন তাহলে সেই লোহাটিও একসময় চুম্বকে পরিণত হবে। হার্ডডিস্কে একটি চকচকে বৃত্তাকার ম্যাগনেটিক ধাতুর প্লেট থাকে যাকে ‘প্লেটার’ বলা হয় আর এর মধ্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এরিয়া থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আপনার কম্পিউটারে যদি ২০ গিগাবাইটের একটি হার্ডডিস্ক থাকে তবে মনে করবেন সেখানে ১৬০ হাজার মিলিয়ন মাইক্রোস্কপিক চুম্বকত্ব লোহার টুকরা রয়েছে এবং প্রত্যেকটি টুকরা আপনার তথ্যের অতি ক্ষুদ্র অংশ বা বিট ধারণ করছে। আমরা আগেই জেনেছি কম্পিউটার শুধু বাইনারি ডিজিট ১ (এক) আর ০ (শূন্য) বুঝতে পারে। চুম্বকত্বের মাধ্যমে প্লেটারে ১ (এক) আর ০ (শূন্য) বাসিয়ে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। প্লেটারে দুইটি রিড-রাইট হেড থাকে। প্রত্যেকটি তথ্যের বিট একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে সাজানো থাকে এবং এই প্যাটার্নগুলো দিয়ে একটি গোলাকার পথ তৈরি হয় যাকে ট্র্যাক বলা হয়। প্রত্যেকটি ট্র্যাকে ক্ষুদ্রতর অংশ থাকে যাকে সেক্টর বলা হয়। কোন সেক্টরগুলো ব্যবহার করা হয়েছে এবং কোনগুলো এখনো ফাঁকা রয়েছে তা নির্ধারণ করার জন্য হার্ডডিস্কের কাছে একটি ম্যাপ থাকে। উইন্ডোজ কম্পিউটারে এই ম্যাপকে ফাইল এলোকেশন টেবিল বা এফএটি বলা হয়। আমরা যখন কোনো ফাইল বা ডাটা কম্পিউটারে ওপেন করার কমান্ড দেই তখন অপারেটিং সিস্টেম তার ফাইল এলোকেশন টেবিল থেকে ডাটার লোকেশনটা হার্ডডিস্ককে জানিয়ে দেয় এবং হার্ডডিস্কের প্লেটারটি ট্র্যাকে ঘুরতে শুরু করে এবং যে সেক্টরে ডাটাগুলো আছে সেখান থেকে হেডের মাধ্যমে রিড করে সিস্টেমের কাছে পাঠায়। তেমনি আমরা যখন কোনো সেভ কমান্ড দেই প্লেটারটি একইভাবে ঘুরবে এবং হেডের মাধ্যমে ফাঁকা সেক্টর খুঁজে^ সেখানে রাইট করবে।
ডাটা রিড-রাইট তো বুঝলেন এবার চলুন ডাটা মুছে ফেলা বা ডিলিট নিয়ে জানা যাক। অনেকভাবে আপনার মূল্যবান ডাটা হারিয়ে যেতে পারে। যেমন, ভুলবশত ফাইল ডিলিট হয়ে গেলে, হার্ডডিস্ক অকেজো হয়ে গেলে, সফটওয়্যারে কোনো ত্রæটি থাকলে, ডাটা করাপশন হয়ে গেলে, হ্যাকিংয়ের কবলে পড়লে, এমনকি সাধারণ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া থেকেও ডাটা লস ঘটতে পারে। প্রায় যেকোনো ডাটা লস থেকে ডাটা রিকভার করা সম্ভব। এখন কথা হচ্ছে এই ডিলিট করা ফাইল কীভাবে উদ্ধার করা যায়। প্রথমেই আমরা জানি ডিলিট প্রসেসটা হার্ডডিস্কে কীভাবে হয়। আপনি যখন কোনো ফাইল ড্রাইভ থেকে ডিলিট করে দেন সেটি তখনও আপনার ড্রাইভে থেকেই যায়। শুধু অপারেটিং সিস্টেম তার ফাইল এলোকেশন টেবিল থেকে সেটির লিস্টটা মুছে দেয়। হার্ডডিস্কের যে সেক্টরে আপনার আগের ডাটাটি সেভ ছিল সেখানে যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন কোনো বাইনারি সংখ্যা দ্বারা রিপ্লেস হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডিলিট হওয়া ডাটা উদ্ধারের সম্ভাবনা ১০০ ভাগ অর্থাৎ ডাটা ডিলিট হওয়ার পর যত দ্রæত আপনি রিকভারি প্রসেসের প্রক্রিয়া চালাবেন তত বেশি উদ্ধারের সম্ভাবনা থাকবে।
ডিলিট হওয়া ফাইলগুলো পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে ডাটা রিকভারি সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এই সফটওয়্যারগুলো অনেক জটিল এলগোরিদম ব্যবহার করে ড্রাইভে পড়ে থাকা পুরাতন ডাটাগুলো খোঁজার চেষ্টা করে এবং ডিলিট হওয়া ফাইলগুলোর ফিজিক্যাল লোকেশন অনুমান করে। যদি সফটওয়্যার সঠিক লোকেশন অনুমান করতে সক্ষম হয় তবে নিঃসন্দেহে আপনি ফাইল ফিরে পেয়ে যাবেন। এটি নির্ভর করে সফটওয়্যারের সক্ষমতার ওপর। ডাটা রিকভারি সফটওয়্যার মূলত ফ্রী ও পেইড দুই ধরনের হয়। ফ্রী সফটওয়্যারে লিমিটেড ফিচার থাকে। ফ্রী সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে রিকিউভা, মিনিটুল পার্টিশন রিকভারি ফ্রী, ফটোরেক ও টেস্টডিস্ক, আনডিলিট ৩৬০, পিসি ইন্সপেকটর ফাইল রিকভারি, ডিস্ক ড্রিল ফ্রী আর পেইড ভার্সনের মধ্যে ওয়ান্ডারশেয়ার ডাটা রিকভারি, ইজইউএস, স্টেলার ডাটা রিকভারি উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ডাটা রিকভারির কৌশলও উন্নত হয়েছে। সফটওয়্যারের পাশাপাশি বিভিন্ন হার্ডওয়্যারও ব্যবহার হচ্ছে। নষ্ট ড্রাইভ থেকেও ডাটা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশেও অনেক প্রফেশনাল ডাটা রিকভারি সেন্টার গড়ে উঠেছে তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে আপনি না জেনে ডাটা রিকভারি সফটওয়্যার দিয়ে ডাটা উদ্ধারের চেষ্টা করবেন না কারণ আপনি যতবারই সফটওয়্যার চালাবেন ততবারই রিড-রাইট প্রসেস চলবে। আপনার পুরাতন ডাটার ওপর নতুন ডাটা প্রতিস্থাপিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার হারানো ডাটা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। আর যদি রিকভারি প্রসেস চালাতেই হয় তাহলে হার্ডডিস্কটি অন্য একটি কম্পিউটারে রিকভারি সফটওয়্যার ইন্সটল করে সেখানে আলাদা ডিস্ক হিসাবে লাগিয়ে কাজ করতে পারেন এবং রিকভারির ডাটা কোনোভাবেই একই হার্ডডিস্কে সেভ করবেন না। এসব ক্ষেত্রে প্রফেশনাল কারো সাহায্য নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।