কমিটির চার সদস্যের পদত্যাগ

53

২৪ এপ্রিল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জন্য অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের নাম। জানানো হয়, একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র, দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র এবং ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে অনুদান দেওয়া হয়েছে এবার। তবে এই চূড়ান্ত নির্বাচন অনুদান কমিটির অন্যতম চার সদস্যকে ওয়াকিবহাল না করে করা হয়েছে বলে অভিযোগ এনে তারা পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগকারীরা হলেন, বরেণ্য অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, খ্যাতিমান নির্মাতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম ও মতিন রহমান।
গত ২৮ এপ্রিল তথ্যমন্ত্রী বরাবর লিখিত পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা। নিচে পত্রটি হুবহু তুলে ধরা হলো। ‘৭ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে আপনার (তথ্যমন্ত্রী) সভাপতিত্বে এবং সচিব মহোদয়ের উপস্থিতিতে ২০১৮-১৯ সালের জন্য গঠিত চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সভায় ২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ও একটি শিশুতোষসহ ৫টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্রকে অনুদান দেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, অনুদান কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে সম্পূর্ণভাবে মন্ত্রণালয়ের একক সিদ্ধান্তে সেই সভার সিদ্ধান্তকে পরিবর্তন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের আগেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে কিন্তু এ ধরনের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা আর কখনও হয়নি।
এমতাবস্থায় অনুদান কমিটির সদস্য হিসেবে থাকা আমাদের জন্য সম্মানজনক ও যুক্তিযুক্ত মনে না হওয়ায় আমরা চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতএব, এই পত্রটিকে আমাদের পদত্যাগপত্র হিসেবে গণ্য করে তা অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ পদত্যাগপত্র জমাদানের সত্যতা স্বীকার করে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আমরা চিঠিতে উল্লেখ করেছি। আর এ ব্যাপারে শিগগিরই আমরা সংবাদ সম্মেলন করবো।’ জানা যায়, অনুদান কমিটির সদস্য সংখ্যা ৭ জন। এরমধ্যে চারজনই অনিয়মের অভিযোগ এনে পদত্যাগ করলেন। এর আগে অনুদান প্রত্যাশী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন অনুদান প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ এনে ২৫ এপ্রিল তথ্যমন্ত্রী বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, তার পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘হীরালাল সেন’ সকল শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া সত্তে¡ও তিনি অনুদান পাননি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২৪ ডিসেম্বর ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান বাছাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হকের নেতৃত্বে ২২টি চলচ্চিত্রকে নম্বরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত অনুদান কমিটির কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু দেখা গেছে, শিশুতোষ শাখায় সর্বোচ্চ ৬৬ দশমিক ২৯ নম্বর পাওয়া নূরে আলমের ‘কুড়কুড়ির মুক্তিযুদ্ধ’ ছবিটিকে অনুদান না দিয়ে ৬২ দশমিক ২৯ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আবু রায়হান মো. জুয়েলের ‘নসু ডাকাত কুপোকাত’ ছবিটিকে অনুদানের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। একইভাবে প্রামাণ্যচিত্র শাখায় সর্বোচ্চ নম্বর (৭৫ দশমিক ৪৩) পাওয়া মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ‘হীরালাল সেন’ চলচ্চিত্রটিকে অনুদান দেওয়া হয়নি। এই শাখায় অনুদান পেয়েছে হুমায়রা বিলকিসের ‘বিলকিস বিলকিস’ ও পূরবী মতিনের ‘মেলাঘর’ ছবি দুটি।
বাছাই কমিটি এ ছবি দুটিকে দিয়েছেন যথাক্রমে ৫৫ দশমিক ৭১ এবং ৪৭ দশমিক ৮৬ নম্বর। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান নির্বাহী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও অনুদান না পাওয়ার এ ঘটনা প্রমাণ করে প্রক্রিয়াটিতে ঝামেলা রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও তার চলচ্চিত্র অনুদানের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করলেও সে বছর তাকে অনুদান দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।