কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার’ জলবায়ু নিয়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান

30

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা ও কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে কমনওয়েলথে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসি। লন্ডনের স্থানীয় সময় গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এই আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বর্তমানে লন্ডনে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, ‘কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেছেন, কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার এবং জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত’।
‘কমনওয়েলথ ব্লু চার্টার’ মহাসাগর সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান এবং টেকসই মহাসাগর উন্নয়নের লক্ষ্যে কমনওয়েলথ সদস্যঋণক্ত ৫৩টি সদস্য দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার একটি অঙ্গীকারনামা। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ মহাসচিবের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন এবং বলেছেন, তার সরকার এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে’।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও কমনওয়েলথ মহাসচিব তথ্য প্রযুক্তি খাত এবং এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন। ইহসানুল করিম বলেন, ‘প্যাট্রিসিয়া তথ্য প্রযুক্তি খাতে এবং এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে বাংলাদেশের চমকপ্রদ সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কমনওয়েলথ মহাসচিব বলেন, এ বছর কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠেয় কমনওয়েলথ নারী সম্মেলনেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে’। খবর বিডিনিউজের
সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ও লন্ডনে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনার মাধ্যমেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত সোমবার সন্ধ্যায় লন্ডনে শেখ হাসিনার সঙ্গে লর্ড আহমেদ অব উইম্বলডন সৌজন্য সাক্ষাতে এলে তিনি একথা বলেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এতো বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া আমাদের জন্য বিরাট বোঝা। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান করতে চাই’।
যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা লর্ড আহমেদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে তার দেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কে অবগত বলেও জানান তিনি। সাক্ষাতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং লর্ড আহমেদ একমত পোষণ করেন বলে জানিয়েছেন প্রেস সচিব।
বাংলাদেশে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকল ধর্ম ও মতের মানুষ এদেশে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে’। প্রধানমন্ত্রী ও লর্ড আহমেদ ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গতিশীল নেতৃত্বে’ বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন লর্ড আহমেদ। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একমাত্র শিক্ষাই নারীর ক্ষমতায়নের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে’।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উভয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং আগামীতে এই বন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ
জনগণকে সচেতন
হওয়ার আহবান
প্রধানমন্ত্রীর
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে সক্রিয় হওয়ার এবং মশার বংশ বিস্তার রোধে বাড়ি, কর্মস্থল ও আশপাশের এলাকা পরিষ্কার রাখার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার লন্ডন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় আওয়ামী লীগের বিশেষ জরুরি বৈঠকে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সবাইকে আহবান করব, নিজের ঘরবাড়ি আশপাশের রাস্তাঘাট যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, সে ব্যাপারে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সবাই যদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে আমরা এখান থেকে রক্ষা পেতে পারব।
এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকায় মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। জুলাইয়ের শেষে এসে তা রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা হয়ে উঠেছে সাধারণ নাগরিক থেকে সরকার- সবার উদ্বেগের কারণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় পৌনে ১৪ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে দেশের ৫০ জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।
বিভিন্ন জেলায় আক্রান্তদের অনেকে ঢাকা থেকে রোগ নিয়ে গেছেন। তবে রাজধানীর বাইরেও এডিস মশার বিচরণ রয়েছে বলে স্থানীয় পর্যায়ে আক্রান্তের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। খবর বিডিনিউজের
ঢাকায় এডিস এজিপ্টাই মশাই প্রধানত ডেঙ্গরু বাহক; তবে ঢাকার বাইরে থাকা এডিস এলবোপিকটাস মশাও ডেঙ্গু রোগের বিস্তারের কারণ ঘটাতে পারে।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বিশেষ জরুরি বৈঠকের শুরুতেই দলের সভাপতি শেখ হাসিনা টেলিকনফারেন্সে বলেন, ইদানিং একটি উপদ্রব দেখা দিয়েছে- ডেঙ্গু। ডেঙ্গু জ্বরটা যখন শুরু হয়, তখন আমরা দেখেছি, বিশেষ করে শহর এলাকায়, ঢাকা শহরেই এর বিস্তার ছিল। তবে এটা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদের সময় মানুষ বাড়িতে যাবে। যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বা যাদের শরীরে এই বীজটা রয়ে গেছে, তারা আবার নিজ নিজ এলাকায় গেলে পরে সেখানে যদি মশা কামড় দেয়, তাহলে হয়ত অন্য কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
সেজন্য সবাইকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার ‘অনুরোধ’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার নিজ নিজ ঘর বাড়ি, কাপড় চোপড়-যেগুলো অলনায় ঝোলানো থাকে,বাক্সে বা আলমারিতে থাকে; সেগুলো পরিষ্কার রাখা, ঘরের সকল কোণা, সবকিছু পরিষ্কার করে রাখা।
এডিস মশা বংশবিস্তার করে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে। সে কারণে বৃষ্টির পানি যেন কোথাও জমে না থাকে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে বলেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এডিস মশা বেশিরভাগ সময় পায়ের দিকে কামড়ায়। সে কারণে পা ঢেকে রাখতে হবে, ঘুমানোর সময় মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে।
ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনাতা সৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি আমাদের যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোহী সংগঠনকে আহŸান জানাব, আমাদের কর্মীরাও যেন মাঠে নেমে পড়ে।
ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী থেকে শুরু করে সব ধরনের সংগঠকে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির কাজে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এয়ার কন্ডিশনের পানি, ফ্রিজের পানি, ফুলে টব বা ফুলদানির পানিসহ টায়ার, ভাঙ্গা হাড়িতে পানি জমে থাকে। সবাইকে পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া দরকার।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকার দুই মেয়রের সঙ্গে কথা বলে নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সকলকে বলব, মশা যেন ডিম পাড়তে না পাড়ে, মশার লার্ভা যেন তৈরি না হয়, বংশ বিস্তার করতে না পারে। এটা প্রত্যেকটি মানুষকে নিজেকেই করতে হবে, এটাই বাস্তবতা।
সাংবাদিকদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিভিন্ন জায়গায় ‘ঘুরতে হয়’, সেজন্য নিজেকে ‘সুরক্ষিত’ রাখতে হবে। পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে যে সকলে যেন সাবধান থাকে। কর্মস্থলে মশা যেন কামড়াতে না পারে, বংশ বিস্তার করতে না পারে।