কমছে পেঁয়াজ-রসুনসহ ভোগ্যপণ্যের দাম

60

দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ-রসুন, আদাসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকার মত কমেছে। বেচা-বিক্রি কম, নির্বাচনী আমেজ ও মাসের শেষ হওয়াতে দাম কমেছে বলে জানালেন ভোক্তারা। অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতের পেঁয়াজ প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মিয়া মার্কেট আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, সরকার যদি ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তবে ব্যবসায়ীরা অন্যদেশ থেকে আমদানি করার সুযোগ পেতো। কিন্তু এখন তো ভারত আমাদের সামনে মূলা ঝুলিয়ে রেখেছে, দিবে দিবে বলেও দিচ্ছে না। আবার আমরা অন্যদেশ থেকে আমদানি করতে গেলেই তারা পেঁয়াজ দিতে চাইবে, তখন লোকসানের দায় নিবে কে? সামনে রমজান আসছে, এ নিয়ে সরকারের এখন থেকে ভেবে চিন্তে কাজ করা উচিত।
গতকাল রবিবার খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়। জানা যায়, পাইকারি পর্যায়ে খাতুনগঞ্জে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা এবং বেচাকেনা কম হওয়ার কারণে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজি ৭৮ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ ৮৫ টাকা (অপরিবর্তিত), হল্যান্ড ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, চীনের পেঁয়াজ কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এদিকে চীনের রসুন ৩০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০ টাকায়। আবার বাজারে নতুন দেশি রসুনও দেখা গেছে। দাম প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের বাজার ঘুরে জানা যায়, চীনের আদা কেজিতে ৩০ টাকা কমে ১০০ টাকা এবং মিয়ানমারের আদা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দারচিনি কেজি ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারে ডালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। মোটা মশুর ডাল ৫৫ টাকা কেজি, চিকন মশুর ডাল ১১০ টাকা কেজি, মটর ডাল কেজি ৩২ টাকা, মুগডাল ১২০ টাকা কেজি, ছোলা ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি, চনার ডাল ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে ভারতীয় হলুদ বিক্রি হয়েছে কেজি ৯৮ টাকা (অপরিবর্তিত) এবং দেশি হলুদ ১০০ টাকা। তাছাড়া জিরা ২৭৫ টাকা (অপরিবর্তিত), লবঙ্গ কেজি ৭৫০ টাকা (অপরিবর্তিত), যত্রিক ৫০০ টাকা বেড়ে কেজি ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পাইকারিতে এলাচি গত সপ্তাহে কেজি ৩ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল রবিবার ৩০০ টাকা কমে ৩ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অপরদিকে শুকনো মরিচের দাম কমেছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। এরমধ্যে- দেশি শুকনো মরিচ ১৯০ টাকা (পঞ্চগড়ের) কেজি, ভারতীয় মোটা শুকনো মরিচ ৫০ টাকা কমে ২০০ টাকা কেজি, চিকন ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলাইমান বাদশা বলেন, নির্বাচনী আমেজ ও মাস শেষ হওয়াতে বেচাকেনা নেই। তাই সব রকমের ভোগ্যপণ্যের দাম এখন কমতির দিকে রয়েছে।
পাইকারি বাজারে চিনির দাম স্বাভাবিক রয়েছে। এস. আলম গ্রূপের চিনি ছাড়া অন্য চিনি দেখা যায়নি। এস.আলম গ্রূপের চিনি প্রতিমণ ২ হাজার ২৬৫ টাকা, যা প্রতিকেজি ৬০.৬৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে পাম তেলের দাম পাইকারিতে মণে ১০০ টাকা কমেছে। প্রতিমণ পাম অয়েল ১০৫ টাকা কমে ২ হাজার ৬৯৫ টাকা (প্রতিকেজি ৭২.২১ টাকা) এবং সয়াবিন তেল ৬০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ১৬০ টাকায় (প্রতিকেজিতে ৮৪.৬৭ টাকা) বিক্রি হয়েছে।
তেল-চিনির বিষয়ে খাতুনগঞ্জের পিএন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এমদাদুল হক রায়হান বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সয়াবিন তেল ছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম কম রয়েছে। ব্যবসায়ীরা অত সুবিধা করতে পারছেন না।
খাতুনগঞ্জের হামিদউল্লাহ মিয়া মার্কেট আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, পেঁয়াজের দাম এখন মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতের পেঁয়াজ প্রবেশ করছে বলে খবর পাচ্ছি। তবে চট্টগ্রামে এখনো আসেনি। সিলেটসহ সীমান্তবর্তী অন্যান্য জেলায় ভারতীয় পেঁয়াজ দেখা গেছে। আর খাতুনগঞ্জে বর্তমানে বেচাকেনা কম থাকায় দাম একটু নিম্নমুখি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।